এনিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণে ৯১৫ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে অনুত্তীর্ণ অনেক শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষার পর জিপিএ-৫ পেয়েছে, অন্যদের বেড়েছে জিপিএ।
এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৬০ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ২৮ জন, রাজশাহীতে ২১ জন, বরিশালে নয় জন, কুমিল্লায় ১০ জন, সিলেটে দুই জন, দিনাজপুরে ২১ জন এবং মাদ্রাসা বোর্ডে ৪৪ জন শিক্ষার্থী আগের ফলে অনুত্তীর্ণ হলেও তা চ্যালেঞ্জ করে পাস করেন।
সম্প্রতি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দুই লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৮টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন পড়েছে।
পাবলিক পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনকারীদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে।
সাধারণত কোনো প্রশ্নের উত্তরে নম্বর না দেয়া, নম্বর দিয়েও ভুলে তা মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ না করা এবং সব প্রশ্নের উত্তরে দেয়া নম্বর যোগ করতে গিয়ে ভুল করেন পরীক্ষকরা।
এসব ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতিটি পত্রের (এক বিষয়ে দুটি পত্রও আছে) ফল পুনঃনিরীক্ষার জন্য দেড়শ’ টাকা জমা দিয়ে তাদের আবেদন করতে হয়। পুনঃনিরীক্ষায় যাদের ফল পরিবর্তন হয় অর্থাৎ পরীক্ষকের ভুল ধরা পড়লেও শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে ওই টাকা আর ফেরত দেয়া হয় না।
গত এসএসসি পরীক্ষার ফলে অনুত্তীর্ণ হলেও তা চ্যালেঞ্জ জিপিএ-৫ পেয়েছেন শরীফুল আলম।
এই শিক্ষার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা তো আমার শিক্ষা জীবনটাই প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। শিক্ষকদের ভুলের কারণে সব ঝামেলা পোহাতে হলো আমাকে, সঙ্গে অনেকগুলো টাকাও গেল। ”
বিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থী জানান, তিনটি বিষয়ের চারটি পত্রের ফল পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি।
প্রথমবারের ফলে জিপিএ ৩ দশমিক ৪০ পেলেও তা পুনঃনিরীক্ষার ফলে ৪ দশমিক ৫০ পেয়েছেন তানভি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শুধু নম্বর না গুণে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করলে পয়েন্ট আরো বেশি পেতাম।
কিন্তু সেই সুযোগ নাকি নাই। ”
পরীক্ষকদের ভুল শোধরাতে টাকা খরচ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, “খাতায় নম্বর দিয়ে তা যোগ না করলে কেমন লাগে? অন্য বিষয়েও এমন হয়েছে কিনা কে জানে?”
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা বেগম সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নে যা খরচ হয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেই টাকাই নেয়া হয়।
মোবাইলের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ থাকায় আবেদনকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও মনে করেন তিনি।
তবে বিভিন্ন বোর্ডের পুনঃনিরীক্ষার ফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি বছরই ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদনকারীর সংখ্যার সঙ্গে ফল পরিবর্তনের সংখ্যাও বাড়ছে।
পুনঃনিরীক্ষায় যাদের ফল পরিবর্তন হয় তাদের টাকা ফেরত দেয়া হয় না বলে জানান ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান।
তিনি জানান, অর্থ ফেরত না দেয়া হলেও পুনঃনিরীক্ষার পর তাদের দ্বিতীয় দফায় বিনামূল্যে নম্বরপত্র দেয়া হয়।
‘উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরীক্ষকদের কিছুটা ভুল হতেই পারে’ বলেই মনে করেন রাজশাহী বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম এ হুরাইরা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, একটি বিষয়ে শিক্ষার্থী যত নম্বর পেয়েছেন, খাতার উপরে পরীক্ষক বৃত্ত ভরাটে তাতে ভুল করছেন কিনা, কোনো প্রশ্নের উত্তরে নম্বর দেয়া বাদ আছে কিনা এবং মোট যোগফল ঠিক আছে কিনা- পুনঃনিরীক্ষণে এসব বিষয় দেখা হয়।
এর বাইরে অন্য বিষয়গুলো কেনা দেখা হয় না জানতে চাইলে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ফল পুনঃমূল্যায়ন চাইলেও তা করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রবিধানমালার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রবিধানমালা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করা যাবে না।
ফল পুনঃমূল্যায়ন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা মূল্যায়নের মতো তৃতীয় পরীক্ষক রাখতে হবে বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
আড়াই লাখ আবেদন
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দুই লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৮টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন পড়েছে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হবে।
বুধবার ১০টি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানান।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেক বলেন, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হবে।
এবার ১০ লাখ ২ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯১ জন পাস করেন।
ঢাকা বোর্ডে ৮৬ হাজার ৬১৪টি, রাজশাহীতে ৩৪ হাজার ৪০টি, কুমিল্লায় ১৭ হাজার ৭৬৩টি, যশোরে ২৯ হাজার ৪০৬টি, চট্টগ্রামে ২৮ হাজার ৮টি, সিলেটে ৯ হাজার ৩৭০টি, বরিশালে ১১ হাজার ৭৫৫টি ও দিনাজপুরে ১১ হাজার ৮৫১টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন পড়েছে।
এছাড়াও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৩০০টি এবং মাদ্রাসা বোর্ডে ৩ হাজার ৭৮১টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।