জীবনটা যেন এক বর্ণীল প্রজাপতি
ঘর-মন-জানালা......২// "হাতেখড়ি"
আজ প্রথম-আলো পেপারের সাহিত্য সাময়িকীতে আধুনিক গানের কিংবদন্তি শিল্পী 'মান্না দে'র এক সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। শুয়ে শুয়ে চুল শুকাতে শুকাতে ওটাই পড়ছিলাম। আর পড়তে পড়তে হঠাৎ নিজের একটা কথা মনে মনে পড়ে গেল।
মান্না দে বলেছেন, উনি ষাট বছর ধরে গান শিখেই যাচ্ছেন। প্রতিবেদক অবাক হলে বললেন, আসলে সারা জীবণই শিখতে হয়।
প্রতিদিন রেওয়াজ না করলে চলে না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, আমার নিজের কথাটা বলি।
আমি ছবি আঁকার উপর চার বছরের ডিপ্লোমা করেছি। ২/৩ টি এক্সিবিশনে পার্টিসিপেট করেছি। আমি মূ্লত আঁকি রিয়েলিস্টিক পেইন্টিং।
যেহেতু ওটাই বেশি করা হয়, তাই এই কাজই ভাল পারি। আর, আমার ছবি আঁকা শেখা শুরুর আগে আমি সব ধরনের পেইন্টিং নিয়ে কাজ করলেও, যখন, একাডেমিক শিক্ষা নিতে গেলাম আমার সামনে অনেক বাঁধা দেখা দিয়েছিল। আমার পরিবার আর আমার পরিচিত এবং আত্মীয়-স্বজনদের ভেতর অনেকেই আমাকে নানা রকম বাধ্যবাধকতা দিতে শুরু করেছে। ফিগার আঁকবানা। প্রাণির ছবি আঁকবেনা ইত্যাদি নানা রকম জ্ঞান্দান চলতেই থাকে।
আমি শান্তি মত ক্লাসও করতে পারিনা, এমন অবস্থা। আর, পেইন্টিং এমন একটা বেপার, যা মনের উপর প্রভাব ফেলে।
এই রকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমি চারটা বছর পার করেছি। এর ভেতর অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পেড়িয়ে আমি এক্সিবিশনেও অংশ নিয়েছি। কারণ ব্যক্তিগতভাবে, আমি যা বিশ্বাস করিনা তা আমার মনে অন্যের কথাইয় বাঁধা ফেলতে পারেনি।
তারপরও অন্যদের কারনে আমি যেটুকু প্রাকটিস করা দরকার তাতে অপারগ হয়েছি। এই করে করে আমার এতক্ষানি আসা।
সে যাই হোক, কথায় কথায় মূল কথা থেকে অন্যখানে এসে পড়ছি। যা বলতে চাইছিলাম। কয়েকদিন আগে আমার এক প্রিয় বন্ধু বলছিল, আমি কেন শুধু, প্রকৃ্তি আঁকি! কেন আমি এবস্ট্রাক্ট মুডের ছবি আঁকিনা! আমার মনে খুশির দোলা থাকলেও ভাব না-কি খুব কম আছে! এইসব।
তার শিল্পী মনিরুল হক-এর পেইন্টিং খুব ভাল্লাগে। আমার সাথে প্রথম পরিচয়ের সময় থেকেই আমার এই প্রিয় বন্ধুটি আমার কাছে আমার হাতে আঁকা একটি পেইন্টিং দাবি করেছে। খুব করে গাঢ় লাল আর নীল রঙ দিয়ে একটা ছবি এঁকে দিতে হবে। আমার ও ইচ্ছা আছে, দেব তাকে। কিন্তু, শিল্পীর নিজেরও মনের নির্দিষ্ট রঙ থাকে।
সে অন্যের ভাব আনবে কি করে! আমার প্রিয় রঙ মিষ্টি কমলা, হলুদ, আকাশি নীল, হাল্কা গোলাপী, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাইতো, একজন কিভাবে পারবে অন্যের মুডে ছবি আঁকতে!
আর, আমার হয়েছে মাত্র আঁকাআঁকির হাতেখড়ি। মাত্র শিখতে শুরু করেছি। কোর্স কমপ্লিট করার পর আস্তে আস্তে আমার চোখ ফুঁটতে শুরু করেছে। আমি ছবি আঁকার ভাব-রস উপলব্ধি করতে শুরু করেছি মাত্র।
আমাকে আরও বহুদুর পথ অতিক্রম করতে হবে একজন মনিরুল ইসলাম, অথবা একজন কামরুল হাসান, কিংবা একজন কাইয়ূম চৌধুরী হবার জন্য।
তবে, আমার ওই বন্ধুই আমার চোখ খুলে দিতে সাহায্য করেছে তার নিজেরই অজান্তে। তার সাথে আরেকজন। সে আমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু। ওয়াসীম।
আমার বিশেষ সেই বন্ধুর সাথে কথা বলার পরই ছবি আঁকা নিয়ে কথা হচ্ছিল ওয়াসীমের সাথে। ..."কত ভাব আসে। কিন্তু, আঁকতে পারিনা। যত্তসব!"
আমার কথা শুনে ওয়াসীম বলে উঠে, "কেন, শরীয়তের বাঁধা?"
আমি বলি, "হু। তার সাথে আম্মাটাও।
"
ও বলে উঠে, "ধুর! ওইসব কেন পাত্তা দেন? আমিতো ওত সব কিছুর ধার ধারিনা। নিজের যা মনে চায় করে ছাড়ি। "
ওর ওই কথায় আর, আমার বন্ধুর আমার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া সপ্নবিলাস
আমার ভেতরে ছড়িয়ে দিল এক অদ্ভুত আবেশ আর, ভাললাগার মিশ্রণ! আমি সব বাঁধার দেয়াল টপকে বেরিয়ে এলাম আমার ভেতর থেকে অন্য এক আমি।
সেদিন থেকেই আমি এবস্ট্রাক্ট মুডের ছবি আঁকতে লাগলাম পাতার পর পাতা।
আসলে হরেক রকম মানুষের সাথে মিশলে অনেক কিছু জানা যায়।
অনেক কিছুর সংমিশ্রণ প্রবেশ করে মনে। মনের ভাব ডানা মেলে দেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।