ঃ "আলু খাইয়া বরিশাল হারাইলাম গোওওওওওওওওওওওওওওও "
নিস্তেজ দুপুরের সুনসান মফসব্লের বড় রাস্তার কিনারার সবুজ ঘাসের গালিচা ধরে উদ্দেশ্য বিহীন পথচলা আলু খাইয়া বরিশাল হারাইলাম গো'র । মাঝে মাঝে হৃদয়বিদারী পাথর চাপা কষ্ট তার কন্ঠ চিড়ে আছড়ে পরে খনিকের জন্য ভেঙ্গে দিয়ে যায় সমস্ত নিস্তব্দতা।
প্রতি বারের মত এবারেও তাকে একপলক দেখার আশায় ছুটে গেলাম জানালার ধারে। রসালো গদা গদা পা থপ্ থপ্ করে পরছে কচি সবুজ ঘাসের উপর। হাঁটুর কাছে নজরে পরে ধুসর নোনতা লুঙ্গির গুটানো কিনারা।
তার বিঘত কয় উপরে কোমরের একটু নীচে , দুপায়ের সন্ধিস্থলে , লুঙ্গির শেষ প্রান্ত তুলে এনে ভুড়ীর নীচে গিট্টু বাঁধা । ্লুঙ্গির গিট্টু যেন ভুড়িটাকে ঠেকনা দিয়ে রেখেছে । লুঙ্গির উপরের অংশটুকু নাভীর একটু নীচে বরাবরে বাঁধা। রোদে পোড়া তামাটে উদম দেহখানা একটু সাম্নের দিকে ঝুকে ঝুকে দোলখায় ওর প্রতিটি পদক্ষেপে । তারি সাথে তালমিলাচ্ছে মোটা ঘারের উপরে বসা লালচে কালো গোলমরিচ আর লবণ রঙ্গা চুলে ভরা মাথাটা।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো, ওর মোটা বেটে বেটে চম্পাকলার মত হাতের আঙ্গুল্গুলো কানের পাশের চুলে চালনা করে ঘারের উপর নিয়ে এসে কদম ছাট্ চুলগুলোকে মুঠোকরে ধরার মিথ্যে প্রচেষ্টা করলো। যেন তারি ব্যর্থতায় চিৎকার করে উঠলো আবারো ঃ " আলু খাইয়া বরিশাল হারাইলাম গোওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওও"
তারপর বড়রাস্তা ছেড়ে হাতের বামে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চলে যাওয়া সরু রাস্তাটাই নেমে পড়লো। আলুখাইয়া ধীরে ধীরে আমার দৃষ্টির আড়ালে চলেগেলো।
ছোট্ট মফসল শহরের কিছু জিনিষ আমার দশ বছরের বালিকা মনে বেশ কৌতূহল জাগাত। যেমন - সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যেদিন যেদিন স্কুলের মাঠে নামতো, আমি ছুটে চলে যেতাম স্কুলের মাঠে ।
আমার মত কৌতূহলী বেশ কিছু ছেলেমেয়ে ও বয়স্ক লোকের ভীড়ে দাঁড়িয়ে হেলিকপ্টার দেখতাম অ বা ক বিঃষসয়ে । আর দেখতাম টুং টাং টুনুনুন টুনুন ঘন্টি বাজিয়ে যখন হাতির দল তার মাহুতকে পিঠে নিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে যেত। মাদি হাতির পায়ের কাছে অনেক সময় দেখতাম বাচ্চা হাতি নেচে নেচে চলছে । আমার বালিকা মনের কৌতূহলী তালিকায় "আলু খাইয়া" ও স্থান পেয়েছিলো।
মাঝে মধ্যে আলুখাইয়া কে মা ভাত খেতে দিতেন।
আমাদের পড়ার ঘরের সামনের বারান্দাই বসে খুব তৃপ্তি ভরে সে খেয়ে উঠতো।
একদিন বড়দের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম আলুখাইয়া কে কুকুরে কামড়েছে । প্রতিবছর গ্রীষ্মে শহরের নেড়ীকুকুর গুলোর একটা দুটো পাগোল হয়ে যেত। বাবার অধিনস্ত নিরাপত্তা বাহিনীর একটা দল শহরের এইসব পাগলা কুকুর খুজে খুজে গুলিকরে মারতো। তারি একটা বুঝি আলুখাইয়াকে বাজারের চৌরাস্তার মোড়ে কামড়ে দিয়েছে।
আলুখাইয়া কে বেশ কইদিন দেখতে পেলাম না। লোকমুখে শুনতে পেলাম আলুখাইয়ার জলাতঙ্ক হয়েছে। স্কুলে কদিন আগে সন্তোষ স্যার আমাদের ল্যুই পাস্তুরের আবিষ্কার পড়াচ্ছিলেন। সেখান থেকে আমি জেনেছি জলাতঙ্ক হয় পাগলা কুকুর কামড়ালে আর একসময় এর কোন চিকিৎসা ছিলো না। ল্যুই পাস্তুর তার ভ্যাক্সিন আবিস্কার করার পরথেকে মানুষ আর কুকুরের কামড়ে মারা যায় না।
আমি জানি আলুখাইয়ার একটু কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ঐ ভ্যাক্সিনের বদৌলতে ও সেরে উঠবে ।
একদিন আলুখাইয়া আমাদের সদর দরজায় এসে হাজির হলো। বল্লো ঃ “ বিবিসাব আমারে দুইডা ভা---ত খাইতে দেন । ক্ষিদা---------য় পেড্ডা জ়ইল্যা যায়!” তাকে ভাত দেয়া হল থালা ভরে , সাথে একমগ জল । ভুত গ্রস্থের মত আলুখাইয়া চিৎকার করতে লাগলো।
হাত’পা ছুড়ে থালা মগ সব উলটে দিয়ে পরিমরি করে পথের দিকে ছুট লাগালো।
দিন দশেক পর আমাদের আরবী শিক্ষক শামসুদ্দিন হুজুর এসে বল্লেন উনি আজ আমাদের পড়াতে পারবেন না । তাঁর মন্টা বিক্ষিপ্ত, কারণ তিনি আজ আলুখাইয়াকে দাফণ করে এসেছেন। হুজুর মা’কে বলছিলেন আলুখাইয়াকে ধোয়ানোর সময় উনি টের পাচ্ছিলেন ছয় /সাত টা কুকুর ছানা আলুখাইয়ার শরীরে চামড়ার নীচে রগে রগে ছুটো ছুটি করছিলো।
আমার বালিকা মন বিঃসিষত ও স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলো হুজুরের কথাশুনে।
কুকুর ছানা আলুখাইয়ার শরীরে ছিলো শুনে নয়, বিঃসষিত হয়েছি এই ভেবে যে, ১৮৮৫ সালের গ্রীষ্মে জোসেফ মেইস্টার ছিলো প্রথম ব্যাক্তি যে কিনা সেরে উঠেছিলো পাগলা কুকুরের কামড় থেকে ল্যুই পাস্তুরের ভ্যাক্সিন প্রয়োগে , আর বিংশশতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে বিনা ভ্যেক্সিনে আলুখাইয়াকে জলাতঙ্ঙ্কের শিকারে পরপারে চলে যেতে হয়েছিলো বলে। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।