আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বগা লেক-কেওক্রাডং থেকে ফেরার পর (১)

আমার অসম্পূর্ণ জগৎ

কেওক্রাডং থেকে ফিরেছি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। এর পরপরই ব্লগটি লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ২৫ তারিখের বিডিআর কান্ডের পর সারাদেশের চিত্রই পাল্টে যায়। ব্লগেও লাগে বিশাল এক ধাক্কা। এ কারণেই লিখতে দেরি হল।

অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম দূরে কোথাও ঘুরতে যাব। কিন্তু মতানৈক্য থাকায় কই যাব তা ঠিক করতে পারছিলাম না। অবশেষে ঠিক করলাম বগা লেক যাব আমরা। আমরা মানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের এমবিএ ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। কাটছাট করে দলের সদস্য সংখ্যা হল ১৫ জন।

ট্যুর করার জন্য সংখ্যাটা খারাপ না। অবশেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আমরা ডলফিন পরিবহনের বাসে চড়ে বান্দরবান যাত্রা করি। বলে রাখা ভাল, বান্দরবান যাবার জন্য যে কটি বাস রয়েছে তার মধ্যে ডলফিনই ভাল (অবশ্য ভ্রমণ শেষে আর এ কথা মনে হবে না!) বিশ তারিখ সকালে নামলাম বান্দরবানে। সেখান থেকে সকালের খাবার খেয়ে বেরুলাম “চান্দের গাড়ী” র খোঁজে। উদ্দেশ্য রুমা ঘাট।

অনেক দরদামের পর ১৪০০ টাকায় রফা হল। মূল অভিজানের শুরু এখান থেকেই। কি চমৎকার সব দৃশ্য! পুরোটা পথ সাঙ্গুকে সাথে নিয়েই আমরা চলেছি আর মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলেছি। পথে দেখেছি অনেক পাহাড়ী বন, পাহাড়ী গাছ, পাহাড়ী পাড়া , পাহাড়ী মানুষ! খালি পাহাড় আর পাহাড়! আর পাহাড়ী পথের এক একটা বাঁক পেরুতে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যায়। কোথাও কোথাও তো ১৮০ ডিগ্রী পর্যন্ত বাঁক দেখেছি! রাস্তার অবস্থা মোটামুটি ভাল, তবে কয়েক জায়গায় বেশ ভাঙ্গাচোরা।

এক জায়গায়তো আমাদের গাড়ি আটকেই গেল। অনেক কষ্ট করে ঠেলেঠুলে গাড়ীটাকে আবার রাস্তায় তোলা হল। অবশ্য বছর দুয়েক আগেও রাস্তার অবস্থা এতটা ভাল ছিলনা। মাঝে মাঝে পাহাড় ধস হয় এ রাস্তায়, এছারা বর্ষায় কিছুটা ভেঙ্গে চুরে যায়। আর বেপরোয়া গাড়ি চালালে কি অবস্থা হয় তা সহজেই অনুমেয়! স্থানীয়রা একটি চান্দের গাড়িতে আনায়াসেই ৩৫-৪০ জন চড়ে।

কিন্তু ট্যুর করতে গেলে একটি গাড়িতে ১৫-২০ জন চড়াই ভাল। যেতে যেতে এত সুন্দর সুন্দর সব দৃশ্য দেখছিলাম যে মনে হচ্ছিল একটির চেয়ে আর একটি জায়গা সুন্দর! কয়েকবার গাড়ি থামিয়ে ঝটপট কয়েকটা ছবিও তুলে নিলাম আমরা। ২০-২৫ কিলোমিটার পর একটি আর্মি ক্যাম্পে এসে আমাদের গাড়ি থামল। এ জায়গাটাকে বলা হয় গ্যারিসন- ওয়াই জংশন। এ রাস্তায় সোজা চলে গেছে চিম্বুক-নীলগিরী আর বাম দিকের রাস্তা দিইয়ে রুমা।

ক্যাম্পে নাম লিখিয়ে আমরা আবার চললাম রুমার পথে। এ রাস্তার পাশের দৃশ্যগুল আরও সুন্দর!। তবে এদিকটায় এসে রাস্তা আর ততোটা ভাল নয়। কোথাও দুপাশে পাহাড় আবার কোথাও একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে গভীর খাদ! রাস্তাও বেশ সংকীর্ণ। তবে চান্দের গাড়ির চালকেরা এতটাই অভিজ্ঞ যে, কখনো কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে- ভাবাই যায়না।

প্রায় ৩০ কিলোমিটার চলার পর আমরা রুমা আর্মি ক্যাম্পে এসে পৌছালাম। এখানে আবার নাম লিখিয়ে চলে গেলাম নদীর ঘাটে। গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে রওনা দিলাম নৌকার খোজে। রুমা ঘাট থেকে দুভাবে রুমা বাজার যাওয়া যা। হয় জন প্রতি ২ টাকা করে দিয়ে নদী পার হয়ে হেটে যেতে হবে অথবা নৌকায় সরাসরি রুমা বাজার পর্যন্ত যাওয়া যাবে।

শরীর ক্লান্ত থাকায় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম নৌকাতেই যাব। ২৫০ টাকা করে দুটো নৌকা ভাড়া করলাম (প্রতি নৌকায় ৬-৭ জন চড়া যায়)। ওহ! কি সুন্দর নদী! কি সুন্দর টলটলে সাঙ্গু নদীর পানি!। শীতকাল বলে নদীর পানি এখন খুবই কম, হেটেই পার হওয়া যায়। নদীর দুধারে দেখলাম জুম চাষ।

বিভিন্ন সবজি আর বাদাম চাষ হয় এখানে। এছাড়া কিছু জায়গায় ধান ও বিশেষ প্রজাতির তামাকও চাষ হয়। ভর দুপুরে এসে নামলাম রুমা বাজার ঘাটে। আমাদের টার্গেট ছিল ঐদিনই বগা লেক যাওয়া। তাই আবার ছুটলাম চান্দের গাড়ির খোজে।

কিন্তু বিধি বাম! গরু খোজার পরেও কোন গাড়ি পেলাম না। জানতে পারলম সেদিনের মত সব গাড়ি চলে গেছে। এদিকে আবার ঘড়ির কাটাও প্রায় ৩টা ছুঁইছুঁই। ৩টা পর বগা লেক যাবার অনুমতিও মেলে না। তাহলে এখন উপায়! (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।