আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সদর দপ্তের রিপোর্ট করেছেন অসংখ্য জওয়ান, তাদের সঙ্গে মানবিক আচরন করা উচিত, দায়িত্বশীল আচরন করে জনসমর্থনকে ধরে রাখুক সেনাবাহিনী



লিখতে কষ্ট হয়। ভালো লাগে না। আমরা কি মানুষ? এভাবে মানুষ মানুষকে হত্যা করতে পারে? স্বজনহারাদের কান্নায় প্রচণ্ড হয়। লে.কর্ণেল আবু মুসা আইয়ুব কায়সারের দুই বছরের মেয়ে রিয়া। সবেমাত্র মাত্র সে আব্বু বলতে শিখেছে।

গত দুইদিন ধরে সে তার প্রিয় বাবাকে খুঁজে ফিরছে। বারবার বলছে আব্বু আব্বু। কিন্তু তার প্রিয় বাবা যে আর নেই- এই সত্যটি তাকে কে বোঝাবে? আমি জানি নিহত প্রতিটি পরিবারেই এখন শোক। প্রিয়জন, বন্ধুদের হারিয়ে বেশিরভাগ সেনা কর্মকর্তাই প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তবুও তাদের বলছি-আমরা আপনাদের কাছ থেকে একটু সংযত আচরন চাই।

কেন চাই জানেন? বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িতদের একটি মূল উদ্দেশ্যে ছিলো দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেওয়া। সেই উদ্দেশ্য তাদের পুরোপুরি সফল হয়নি। দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ আর রক্তপাত দেখেতে না পেয়ে কিছু মানুষ হতাশ। তাদের অনেকেই বুঝে না বুঝে গত দুইদিন ধরে ফেসবুক, ব্লগ এসব জায়গায় গুজব ছড়াচ্ছে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য নিখোঁজ। তাদের মেরে ফেলা হয়েছে।

কালো শোকের বদলে লাল শোক লাগিয়ে তারা বিডিআর ব্রিদাহেকে লাল সালাম জানাচ্ছে। না বোঝা এই মানুষগুলোর জন্য আমার খুব রাগ হয়। এইসব বিজ্ঞ গুজব সৃষ্টিকারীদের বলছি, এখন পর্যন্ত কোন বিডিআর জওয়ান নিখোঁজ হয়নি। যাদের আপনারা নিখোঁজ বলেছিলেন রোববার সারা দিনে সেসব বিডিআর সদস্য রিপোর্ট করেছেন। তাদের সংখ্যা ছিলো কয়েক হাজার।

তবে যদের পোষাক পাওয়া যায়নি তাদের বিডিআর সদরদপ্তরে না নিয়ে, আবাহনী মাঠে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি স্বস্তিদায়ক যে এই বিডিআররা আবার ফিরে এসেছে। এখন সেনাবাহিনী এবং সরকারের উচিত এই জওয়ানদের সঙ্গে মানবিক আচরন করা। আমার মনে হয় ফিরে আসা এসব জওয়ানদের বেশিরভাগই নির্দোষ। রোববার যারা ফিরে এসেছে তাদের অনেকের মধ্যেই এখনো আত্ঙ্ক বিরাজ করছে।

সরকারের উচিত তাদের অভয় দেওয়া। কারন, তাদের সঙ্গে যদি অমানবিক আচরন করা হয় বা ঢালাওভাবে তাদের দায়ী করা হয় কিংবা তারা নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধবে। তারা ভাববে, কোন অন্যায় না করার পরেও তাদের সঙ্গে কেন এই অন্যায় আচরন। কাজেই বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত। কারন জোয়ানদেরও পরিবার আছে, স্ত্রী আছে।

সেনাবাহিনীর উচিত নয় এমন কোন আচরন তৈরী করা যা তাদের সম্পর্কে জনমনে বিরুপ ধারনা সৃষ্টি করে। প্রথম দিনে বিদ্রোহ মনে করা হয় বা ভুল তথ্যের কারনে অনেক মানুষ বিডিআরের প্রতি সহানুতিশীল ছিলো। কিন্তু সবাই যখন দেখলো বিদ্রোহ নয়, এটি স্রেফ কেবল গনহত্যা তখন সাধারন মানুষের ভুল ভাঙ্গল। এখন বেশিরভাগ মানুষের সমর্থন সেনাবাহিনীর দিকে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের প্রতি ভালোবাসা, স্বজন হারানোদের প্রতি সহমর্মিতা সবাই আছ সাধারন মানুষের মধ্যে।

কাজেই সেনাবাহিনীর উচিত এই সমর্থনকে কাজে লাগানো এবং এর অপব্যবহার না করা। গত দুইদিন ধরে বেশ কিছু মানুষ নানা গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। তারা বলার চেষ্টা করছে, হাজার হাজার বিডিআর নিখোঁজ। অনেকেকে নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়গুলো আদৌ সত্য নয়।

কিন্তু এই গুজবের যদি কোন সত্যতা মেলে, যদি বিনাদোষে কোন জোয়ানকে হত্যা বা নির্যাতন করা হয় এবং সাধারন মানুষ যদি সেটা জানতে পারে তাহলে মানুষের সমর্থন আবার ঘুরে যাবে। কাজেই দায়িত্বশীল সেনাবাহিনীর এখন অনেক বেশি সংযমের পরিচয় দিতে হবে। বিডিআরের কিছু উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান বাংলাদেশের ইতিহাসের যে নৃশংসতম ঘটনা ঘটিয়েছে সেটাকে নিন্দা জানানোর কোন ভাষা আমাদের জানা নেই। তবে এটি মনে রাখতে হবে, বেশিরভাগ জওয়ান এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জনতো না। তাদের বলা হয়েছে এটা বিদ্রোহ।

তারাও সেটি বিশ্বাস করে বিদ্রোহ চালিয়ে গেছে। কাজেই বিদ্রোহীদের কোন শাস্তি না দিয়ে কারা সেদিন যারা মূল ঘটনা ঘটিয়েছিলো তাদের খুঁজে বের করা দরকার। পত্রিকার পাতায় এবং টেলিভিশনের ফুটেজ দেখে সেদিনকার বিদ্রোহীদের ছবি বের করা উচিত। এরপর তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা উচিত কারা তাদের বিদ্রোহের কথা বলে গেছে। ভেতরে কি হয়েছিলো।

কোথা থেকে তাদের অস্ত্র দেওয়া হলো। কিন্তু সার্বিকভাবে পুরো বাহিনীকে দায়ী করা উচিত নয় কোনভাবেই, কাজেই সবাইকে সন্দেহ করাটাও ঠিক নয়। আর একটি বিষয়ের কথা আবারো উল্লেখ করতে চাই। বিডিআরের জোয়ানেদর কিছু দাবি হয়তো ন্যায্য ছিল। এমন কিছু দাবি হয়তো বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত অন্যান্য সৈনিকদেরও রয়েছে।

তাদের সেসব দাবিও বিবেচনা করা উচিত। আর একটি বিষয় আমি অনেককেই বলছি নানাভাবে-প্লিজ কেউ গুজব ছড়াবেন না। এই সময়টি আমাদের জন্য খুব স্পর্শকাতর। এমন কিছু বলা ঠিক হবে না যা নতুন করে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। একটি বিষয়ে আমি কষ্ট পাচ্ছি এখনো কিছু মানুষ বিডিআরের বিদ্রোহকে সমর্থন জানাচ্ছে।

তাদের প্রতি আমার ঘৃণা। এই নৃশংসতম ঘটনা দেখেও যারা বিডিআরকে সমর্থন দিচ্ছেন, হত্যাকাণ্ডকে বিদ্রোহ বলার চেষ্টা করছেন প্লিজ তারা একটি ঘুম থেকে উঠুন। আর মিথ্যার মধ্যে থাকবেন না। দেখুন মানুষের আহাজারি-কান্না, স্বজনহারাদের বেদনা। একবার ভাবুন-কতো ক্ষতি হলো দেশটায়।

কি পরিমান সন্দেহ অবিশ্বাস তৈরী হলো। তবে আমার একটিই অনুরোধ সেনাবাহিনীর কাছে-প্লিজ মানুষ এবার যে আপনাদের জনসমর্থন দিচ্ছে সেই জনসমর্থন হারাবেন না। কাজেই প্রতিটি পদক্ষেপে দায়িত্বের পরিচয় দিন। শুধূ সেনাবাহিনী কেন প্রতিটি মানুষ, রাজনীতিবিদ, সরকার সবার এখন চরম দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কথায় কাজে।

আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। আর কোন রক্তপাত যেন না হয়। বিনা অপরাধে আর কেউ যেন শাস্তি না পায়, মানুষকে যেন আর ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, আর কোন শিশুকে যেন পিতৃহারা হতে না হয়। স্বজনহারানোর বেদনা নিয়ে আর যেন কারো ঘুম না ভাঙ্গে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।