আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

না ভুলতে পারা কষ্টগুলি



আমরা বাঙালীদের খুব বড় গুণ হচ্ছে আমরা যে কোন ধাক্কা খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারি। সিডরে আমদের সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তারপরও আমরা বেঁচে থাকি, আবার আশায় বুক বাঁধি। প্রকৃতি হয়ত এভাবেই মানুষকে সৃষ্টি করেছে। যে কোন শোক মানুষ বেশী দিন মনে রাখতে পারে না।

বর্তমান সময়ে গোটা জাতি গভীর শোকে নিমজ্জিত। সাইক্লোনে হাজার হাজার মানুষ মারা পড়ে। আমরা মনকে সান্ত্বনা দিতে পারি। কিন্তু এবার যা ঘটেছে তা ঠান্ডা মাথায় খুন ছাড়া আর কিছুই নয়। মিডিয়াগুলি সব খবর প্রচারে ব্যস্ত।

ধীরে ধীরে এক সময় সব স্তিমিত হয়ে আসবে। পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে দ্বিতীয় পাতায়, তারপর শেষ পাতায়, এক সময় সবাই ভুলে যাবে এদের কথা। কিন্তু যে পরিবারগুলি তাদের আপন জনদের হারিয়েছে, যাদের আপন জনরা এখনও নিখোঁজ রয়েছে, তারা বেঁচে আছে না মারা গেছে এটাও তাদের জানা নাই। তাদের কি হবে। তারা কি এই অপ্রত্যাশিত শোককে কোন দিন ভুলতে পারবে।

যে স্ত্রী তার স্বামীকে, যে মা তার সন্তানকে, যে বোন তার ভাইকে, যে সন্তান তার বাবকে হারিয়েছে সে কি এই শোক কোনদিন কাটিয়ে উঠতে পারবে। সব কিছু ভুলে কি আবার সব আগের মত হয়ে যাবে। যারা মারা গেছে তারা কি আর্মি না বিডিআর সেই বিতর্কে গিয়ে কোন লাভ নেই। এদের এক মাত্র পরিচয় এরা সবাই বাঙালী। আমাদের দেশের সন্তান।

যারা বেঁচে গেছে তার মধ্য থেকে অনেককে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এদের মধ্য থেকে অনেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। অপরাধীদের সাথে মারা পড়বে অনেক নিরীহ বিডিআর। আবার পার পেয়ে যাবে এমন অনেক লোক যারা এদের কে এই অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সবাই এই বিদ্রোহের সাথে জড়িত নয়।

কারণ বিদ্রোহীদের সাথে যারা যোগ দিতে রাজী হয়নি এমন অনেক বিডিআরকে বিদ্রোহীরা মেরে ফেলেছে। তার মানে সবাই এখানে অপরাধী নয়। তাদের পরিবার এক অনিম্চিত অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কি হবে তাদের প্রিয় জনের। প্রতিটি পরিবারে একই চিত্র সেটা আর্মি হোক আর বিডিআর হোক।

সন্তান মার কাছে জানতে চাচ্ছে -মা, বাবা কখন আসবে। এই প্রশ্নের কোন উত্তর মার কাছে নেই। এই মা কিভাবে তার বাচ্চাকে বলবেন-তোমার বাবা আর কখনও ফিরে আসবে না। যে মা উদ্বিগ্ন-বিচারে তার ছেলের কি শাস্তি হবে। সেই মাকে কে আশার বাণি শুনাবে।

এখন দরকার ঐ সব অসহায় পরিবারের পাঁশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। তাদের আপন জনদের আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু এখন তাদের দরকার মমতার স্পর্শ। পারিবারিক, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। এটা আর্মি হোক আর বিডিআর পরিবার হোক তাতে কি যায় আসে।

কেউ যদি অন্যায় করে থাকে তার পরিবার কেন তা ভোগ করবে। তারাতো কোন পাপ করেনি। মা তার ছেলেকে, স্ত্রী তার স্বামীকে, ছেলে তার বাবাকে, বোন তার ভাইকে যে ভালোবাসা দিয়েছে তাতেতো কোন খাদ ছিল না। তাহলে তাদের কথা কেন আমরা ভুলে যাব। সবাই ব্যস্ত কতজন আর্মি আর কতজন বিডিআর মারা গেল সেই খবর সংগ্রহে।

পত্রিকার পাতায়, মিডিয়াতে বিভৎস সব লাশের ছবি আর তার বর্ণনা। কে কার আগে কয়টা বেশী লাশের ছবি দেখাতে পারছে তার যেন প্রতিযোগিতা চলছে। রিপোর্টাররা প্রাণের ঝুকি নিয়ে খবর সংগ্রহ করে থাকেন। এর জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এধরণের ছবি ছাপানোর আগে আমি মনে করি সম্পাদককে আরেকটু দায়িত্বশীল ও সচেতন হবার দরকার।

তা যেন শুধুই পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য না হয়। কারণ সব কিছুর উপর হচ্ছে মানবতা। কারণ একটি মৃতদেহের ছবি আমাদের কাছে শুধুই একটি লাশের ছবি। কিন্তু ঐ পরিবারের কাছে তা কখনও না ভুলতে পারা তীব্র যন্ত্রণার ছবি। ঐ ছবি দেখে তাদের প্রিয়জনের কেমন কষ্ট হচ্ছে তা আমাদের একটু বোঝা উচিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।