আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাশ উৎসব

আমি পার্থিব বাস্তবতায় অস্থির, অপার্থিব স্বপ্নপায়ী কেউ একজন . . .
দেশের লাশ উৎসবের খবর আর ব্রেকিং নিউজ ক্ষণে ক্ষণে পাওয়া যাচ্ছে... বিডিআরের ডিজিসহ শতাধিক সেনা কর্মকর্তা নিহত ও নিখোঁজ। দুইদিনেই ১৭ জনের লাশ উদ্ধার। [উৎস : প্রথম আলো] আমি আর্মি চিনি না, বিডিআর চিনি না। তবে আমি মানুষ চিনি। আর মানুষ মরে যাওয়ার পর নিথর লাশ চিনি।

আমি দরবারের ভেতরে জিম্মি হয়ে থাকা পরিবারটাকে চিনি যেখানে মা আছেন, মেয়ে বা ছোট ছেলেটা আছে... যারা এত নৃশংসতা দেখেনি কখনো। লাশ উৎসব দেখে বিহ্বল-আতঙ্কিত হওয়া তাদের চোখ চিনি। গতকাল যে স্ত্রী তার নিখোঁজ স্বামীর জন্য আতংকিত হয়ে ছিলেন তাকে চিনি। তিনি ভেবেছেন হয়তো লুকিয়েছে কোথাও বা হয়তো আহত তার অর্ধাঙ্গ... তল্লাশীর সময় ছেলে-মেয়েকে আঁকড়ে থরথরে হাত জোড় করেছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে, "উনাকে ভালমতো ফিরিয়ে দিন, বেশি আহত যেন না হন তিনি। " সেই তীব্র প্রার্থনার জবাবে ক্ষত-বিক্ষত থকথকে লাশ এসেছে সকালে, এমন-ই অবস্থা যে সনাক্ত-ও করা যাচ্ছে না অসম্ভব প্রিয় চেহারাকে! আমি সেই মেয়েটাকে চিনি যে বাবা-র সহকর্মীদের খবর টেলিভিশনে দেখে আতঙ্কে প্রলাপ বকে চলে, মাঝে মাঝে জ্ঞান হারায়।

আর দু'দিন পর বাবা-র ব্রাশফায়ারে ঝলসানো ফুটো-ফুটো লাশ দেখে নিজেই জ্যন্তলাশ হয়ে যায়! মানসিক রোগীর মতো মাথা-হাত-পা অবিরাম নিয়ন্ত্রণহীন নেড়ে যায়! অসহায় জন্তুর মতো হয়ে যাওয়া মানুষ চিনি আমি। যে নিজের পরিবারের প্রান ভিক্ষার তরে লুটিয়ে পড়ে বিডিআর নামক ক্ষমতাধরের পায়ে। তারপর জন্তুর মতোই রাইফেলের বাঁটের আঘাতে জ্ঞান হারায়। কিন্তু নাহ্‌! তাতেও শেষরক্ষা হয় না তার! তাকে মেরে ফেলার পর তার স্ত্রীকেও টুকরো টুকরো করা হয়। তাতেও কি রাগ কমে ?? লাশযজ্ঞে মাতাল মানুষগুলো একের পর এক লাশে রাগটা ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়।

ওদিকে আমার চেনা মানুষগুলোর জান্তব চিৎকারে- আহাজারিতে মনুষ্যত্বের সমাধী হয়ে যায়। আমরা বাঙালীরা সত্যি প্রচন্ড অসহায়, অক্ষম আর অভ্যস্থ। আমরা সব অনাচার, অমানবিক বা পাশবিক ঘটনায় অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ...ভাবছি... "আরে! কি হয়েছে ? আমার কেউ তো মরে নি!" কিন্তু আবার আড্ডায় বলছি..."হুমম...কয়টা লাশ পাওয়া গেল? বাকিগুলার কি অবস্থা?" আবার বেশ বিচক্ষণ গলায় বলছি... "দেশে একটা যুদ্ধ না লেগে যায়!" ... ছুটি আর আড্ডা জমে যায়... তার মাঝে ঢেকে যায় ভুক্তভোগীদের জান্তব চিৎকার! আমরা অসহায় আর অক্ষম তাই আমি এসব দেখেও ভেতরে আগুন জ্বেলেও কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। শুধুই লিখে দিচ্ছি নিজের রাগটা যাচ্ছেতাই ভাবে... সে মেয়েটাকে জড়িয়ে বলতে পারছি না, "বাবা আসবে তো, বোন! দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে! এটা একটা দুঃস্বপ্ন!" শুধুই কড়ে গুনে যাচ্ছি লাশের সংখ্যা... ৯...১১...১৭ আর ভেবে কেঁপে উঠছি... পরিবারের যারা বেঁচে আছে তাদের কি হবে ?! মারা গিয়ে কিছু মানুষ স্বজন হারানোর তীব্র কষ্ট থেকে বেঁচেছেন, কিন্তু যারা বেঁচে আছেন তাদের মানসিক লাশ দাফন করবে কে ?? তারা দুঃস্বপ্নের মধ্য ডুবে আছে, পাথর হয়ে আছে, থমকে গেছে কঠিন দুঃসময়টায়... তাদের মধ্য প্রান ফেরাবে কে ?? আমি আমার খুব সীমিত ক্ষমতায় শুধুই প্রার্থনা করতে পারছি ... যাতে আত্মাগুলো শান্তি পায় আর মানসিকভাবে মৃত আত্মাগুলো নিজের ভেতর শক্তি বাড়ানোর ক্ষমতা পায়।

যাতে এই পাশবিক হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হয়ে যায়। যাতে বাতাসে ভেসে বেড়ানো জান্তব চিৎকারে ক্ষমতাবান মানুষগুলোর ভেতরে মনুষ্যত্বের জন্ম হয়। নিচে একটা লিংক দিচ্ছি... পড়ে নেবেন সময় করে... হয়তো সত্য উপলব্ধি করতে পারবেন, যেভাবে কিছুটা আমি করেছি। আর হ্যা, আমি আবারো বলছি, আমি সত্যি কারো পক্ষ নিয়ে বলছি না। আমি আর্মি বা বিডিআর চিনি না, আমি শুধুই চিনি মানুষ আর মানুষের শারীরিক আর মানসিক লাশ।

Click This Link হঠাৎ দেখা দুঃস্বপ্নের মতো সব মুছে গিয়ে শেষ হতো এই লাশযজ্ঞ!!!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।