সাদ আহাম্মেদ
কিছুক্ষণ আগে এই লিখাটি অন্য এক ব্লগে চোখে পড়লো। পড়ার সময় বেশ কষ্ট লেগেছে। দেশের এই অবস্থায় একজন অফিসার কি বলেছে তা আপনাদের হয়তো একবার শোনা দরকার। বড় কষ্টের সাথে লিখেছে সেই অফিসার। আমাকেও তাই খুব ছুঁয়ে গেছে লেখাটি।
"ফিনিক্স ভবণ ধ্বসে পড়ল, গার্মেন্টসে আগুন লাগলো, লোকজন পানির অভাবে বিদ্রোহ করল, সিডর হল ,বন্যা হল, ভোটার লিস্ট হলো ……রাত নেই, দিন নেই, ঘুম নেই, নিজের পকেট থেকে মোবাইল বিল দিয়ে কাজ করেছি। আমি অফিসার, ৫০০/১০০ টাকা মোবাইল বিল চাওয়া আমার জন্য লজ্জার ব্যাপার। মাস শেষে ব্যাঙ্কে ওডি লেগেই আছে, বাবার নীরব অভিযোগ, ভাই বোনের অভিযোগ, আর্মি অফিসার অথচ ফ্যামিলিকে কোন সাপোর্ট দিতে পারে না। বুঝিয়েছি, সবাই মেনেও নিয়েছে। শুধু বলেছে, সম্মানের সাথে চাকরি কর, টাকা পয়সাই সব কিছু না।
কিন্তু আজকে যখন বাড়ি থেকে ফোন পেলাম…সবার একটাই কথা, বাবা সাবধানে থাকিস, তোর চাকরির দরকার নাই। আমরা তোকে হারাতে চাই না। কয়দিন পর যে বেওয়ারিশ লাশ হয়ে তোকেও ফেলে রাখবে না তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। নিরব হয়ে থাকলাম, ভালো লাগছে না বলে ফোন টা রেখে দিলাম।
মেজর মোশারফ স্যার এর চেহারাটা চোখের সামনে ভাসতে লাগলো, কিছুদিন আগেই কুয়েত থেকে ঢাকায় গিয়েছেন।
আর তারেক স্যারকে, পাঠানো গতকাল এর লাস্ট এসএমএস…my 13 years service went in vain bro, they r taking me in the gun pit…….pl pray for my family…………
মাজহার ভাই এর চেহারাটা ,লাস্ট রি-ইউনিওয়নে দেখা হায়দার ভাই এর চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে। যাকে দেখে আমি আক্ষেপ করতাম আর ইর্ষা ছিল, আমাকে কেন আল্লাহ হায়দার ভাই এর মত লম্বা বানায় নাই। তাইলেইতো উনার লং-জাম্পের রেকর্ডটা আমি ভাংতে পারতাম। এমন কোন খেলা নেই যেইটা ভাল খেলতেন না, মাজহার ভাই ,হায়দার ভাই, দুজনেই।
প্রতিটি মিডিয়াতে শুধু জওয়ানদের বিজয় গাথা আর টক-শো’তে আর্মির গোষ্ঠী উদ্ধারের সাথে সাথে কফির গরম চুমুকে দেশ যেনো উৎসবে মাতোয়ারা।
আর আমরা সবাই মিলে টিভি সেটের সামনে প্রশ্ন করছি…১৬৮ জন অফিসার এর কি হলো, কেউ কেন তাদের লাশগুলোকে খুজে বের করার কোন কথা বলছে না? সবার কথা একটাই আমাদের জনগনের টাকায় পোষা আর্মি, এইটা দু;খজনক, এর বেশি কিছু না। তাদের ফ্যামিলির কি খবর? তাদের লাশগুলোর কি হলো? কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, করবে কেন?আমরা তো জনগনের দাস। মানুষ না, আমরা আর্মি, আমদের টাকাতো raw, cia, isr দেয়না, কাজেই আমাদেরকে যে যখন চাইবে নিজের কাজে টিস্যু পেপার এর মত যতেচ্ছ ব্যবহার করবে তারপর ছুড়ে ফেলদিবে যত্র তত্র।
ভুক্তভোগী আমদের বাবা, মা, আমদের সন্তান, বউ………তাতে কি আসে যায়?
গত দুই দিনে মিডিয়াতে গরম কফির চুমুকের সাথে তুমুল আড্ডা জমে ঊঠেছে। অপারেশন ডাল ভাত এর কাহিনী, তত্বাবধায়ক সরকারের কাহিনী কত কি! কেউ বলছে না ১৬৮ জন অফিসারকে তাদের পরিবারগুলাকে কিভাবে উদ্ধার করা যায়? লাবলু ভাই, শওকত ভাই- আপনাদের মাধ্যমে প্রশ্ন … আপনারা মিডিয়ার লোকেরা না এত মানবাধিকার আর দেশ প্রেমের কথা বলেন? আমরা কি এর বাইরে? মানলাম আমরা বাইরে? কিন্তু আমাদের পরিবারগুলোও কি বাইরে? সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা থেকে শুরু করে সবার একই বয়ান………প্রধানমন্ত্রী’র কথা মত বিডিআর এর লোকজন আত্মসমঅর্পন করেছেন।
কিন্তু সেনাবাহিনীর অবস্থান আর বিডিআর সদস্যদের কি হবে এই নিয়ে সবাই বেশ উৎসুক, কিন্তু ১৬৮ জনের লাশ কোথায়, তাদের পরিবারের কি হলো এ-নিয়ে কেউ একবারও বলে নি। অদ্ভুত এই জাতি! অকৃতজ্ঞ এই জাতি। আর তাই ৭১ এর যুদ্ধ অপরাধী থেকে শুরু করে ৭৫ এবং অদ্যাবধি ঘটে যাওয়া কোন অপরাধের কোন বিচার হয়নি আজো এবং কোন দিনও হবে না।
আমরাতো আর্মি। কসম খেয়েছি জল, স্থল অন্তরীক্ষে যেখানে যাইবার আদেশ হইবে সেইখানে যাইতে বাধ্য থাকিব……তাই আমাদেরকে দিয়ে হাল চাষ,গবাদি পালন, সবজি চাষ, ত্রাণ বিতরণ , দেশকে সঙ্ঘাত আর হাত থেকে রক্ষা করা, দোকানদারি করা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন, পানি বিতরণ, উদ্ধার অভিযান, বন্যা, খরা, সিডর আরও কত কি করতে হবে……তারপরো বলবেন আপনারা……আর্মি জনগনের টাকায় ফুলে ফেপে উঠছে।
ওরা অমানুষ।
আসলেই আমরা অমানুষ নইলে আমাদেরকে যা বলবে তাই করব কেন? আর বিনিময়ে শুধু গালি, লাথি আর মৃত্যু…
কিন্তু আমার কথা হলো আপনারা সব সময় গোয়েন্দা সংস্থাকে জড়িয়ে আমাদের সবাইকে অপবাদ দেন। আমাদেরকে কি আপনারাই নিয়ে যাননা? আপনারাই কি সরকার বদলের সাথে সাথে আমাদের চাকরিতে রদবদল করেন না, আর আমাদের সিনিয়রদের প্রোমোশন এর আর জুজুর ভয় দেখিয়ে আপনারাই তথা আমলা বুদ্ধিজীবিরাইতো নিয়ন্ত্রন করেন? ১/১১ এর মত পরিস্থিতি কি শুধু আর্মির একক প্রচেষ্টায় হয়েছে? raw,CIA er টাকায় পালিত সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি, পত্রিকার সম্পাদক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনিতিবিদ এদের কি ভুমিকা ছিলনা? এইটা একটা বাচ্চা কিংবা অবোধ শিশুও বুঝবে। আমরা তো অনেক অশিক্ষিত। তাই আমাদেরকে দিয়ে যা খুশি করিয়ে নেন আপনারা।
কিন্তু শেষতক আমাদেরকেই গালি শুনতে হয়।
এইটা সত্য যে আমাদের মধ্য থেকে হাতে গোনা কিছু মানুষের অনেক ফায়দা হয়। আর ভুক্তভোগী আমাদের মত সাধারণরা যারা সেলফ মোটিভেটেড হয়ে কলুর বলদের মত খেটে যাই?
আজ দুদিন ধরে শুধু একটাই আলোচনা অপারেশন ডাল-ভাত আর আর্মি অফিসারদের দূর্নীতি। বিডি আর কি কোনভাবে আর্মির নিন্ত্রনাধীন? ওখানে অফিসাররা শুধু পোস্টেড হয়। আর স্বারাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের আদেশ নির্দেশ কিংবা খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রন ছাড়া কি অপারেশন ডাল ভাত হয়েছে? সেখানে যদি দূর্নীতি হয়ে থাকে তার দায়ভার এককভাবে আর্মি অফিসারদের ঘাড়ে কেন বর্তাবে? আর দূর্নীতি হয়ে থাকলে তার মূল্য কি ১৬৮ জন অফিসার এর জীবন আর তদের পরিবারের বিনিময়ে পরিশোধ করতে হবে ?
কয়দিন আগে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবিদের হুমকি আর প্রতিশোধ স্পৃহার বাস্তব প্রতিফলন দেখলাম।
অনেকেই গত কদিন ধরে টক শোতে আর্মি অফিসারদের দেখে নিবে বলে যে হুমকি দিয়ছিল তার ভালই প্রতিফলন দেখিয়েছেন।
যদি অধিকার বঞ্ছিত আর অবিচারের ফসল হিসেবে বুদ্ধিজীবিরা এইটাকে বলে আর কমান্ড এর ব্যর্থতা বলে চালিয়ে দেন…আমার কোন ক্ষতি নেই। দেশ ও জাতিকে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে এরকম আরো অনেক কিছু দেখতে হবে। আপনারা বিডিআর জওয়ানদের যেই স্তুতিকীর্তন গাইলেন……তা জেনেশুনেই সবাই গেয়েছেন। কেননা বুদ্ধিজীবি মহলের এতেই লাভ।
২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলে বর্বর হামলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মনে এতটুকু আচর কাটে না, বামদলের কর্মীদের মহিলা কর্মীর পেটে গুন্ডা ক্যাডারদের লাথিতে যখন মুখ দিয়ে রক্ত আসে তখন বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকরা কিছু বলেন না, আর একটা সাধারণ কথা কাটাকাটি থেকে অনেক কিছুর জন্ম দেন আমাদের শিক্ষকরা, বুদ্ধিজিবিরা, আর চাকরি খোয়া যায় একজন সাধারন সৈনিক এর যার রোজগারে দশজন মানুশ বাঁচতো। কি সুন্দর আর বিচিত্র আমাদের দেশ প্রেম?একটু আগে টিভি চ্যানেল এ দেখলাম- প্রধানমন্ত্রী কেন সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করার পর বিডিআর জওয়ানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ, তাদের কেন হাত বাধা হচ্ছে এইসব……। অনেক মানবতার কথা? কিন্তু ১৩৭ জন এখনো লাশ হয়ে কোথায় পড়ে আছে কেউ একটি বারও বলছে না। কি চমৎকার আমাদের জাতির বিবেক, কি সুন্দর আমাদের মানবতা, এত কিছুর পরও আপনাদের নির্দেশেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, আর আমরা ধৈর্য ধরে আমাদের আমদের সহকর্মীদের পচতে গলতে দেখি। নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
আমরা যে আপনাদের খেলার গুটি, আমাদেরকে নিয়ে সবাই বাঘবন্দি খেলে। এই আমরাই সিডর এ যখন খেয়ে না খেয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাবার পরেও আপনারা অনেক মিডিয়তে সমালোচনা করেন কেন এই করা হচ্ছে না কেন সেই করা হচ্ছে না!! সেই আমরাই আমাদের সহকর্মীদের লাশ উদ্ধার করতে পারি না, এই আমরাই ntv ভবনে ছুটে যাই, আপনাদের উদ্ধার করতে mask ছাড়াই suffocated room e নিজের জীবনের কথা ভুলে যাই, উদ্ধার করি আপনাদের। আর আজ এই টিভি চ্যানেলে বসে সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি বলেন……এত সুন্দর করে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে দেখে আমারতো সেলিব্রেট করতে ইচ্ছে করছে। আপনারা আমাদের লাশ নিয়ে মহা উৎসবে মেতে উঠুন,হোলি খেলা খেলুন। আমাদের যে এটাই প্রাপ্য।
এই দেশ নিয়ে আপনারা যতই কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে বলেননা কেন, আমাদের ভবিষ্যত এই, ভবিষ্যত সেই, কিন্তু আমি একজন অর্ধশিক্ষিত মানুষ হিসেবে বলে দিতে পারি-অন্ধকার।
সেই অন্ধকারের একদিন সবাইকে তলিয়ে যেতে হবে।
পুনশ্চঃ
লাবলু ভাই আর শওকত ভাই, প্লিজ ভুল বুঝবেননা, আপনাদের মাধ্যমে আমি শুধু আমাদের বিবেকবান লোকজনের কাছে কিছু প্রশ্ন করেছি। আমি জানি বড় ভাই হিসেবে আপনারা এই কথাগুলো পৌছে দিবেন তাদের কাছে। আমি জানি না এই লেখার জন্য আমার রুটি রোজগারের উপর মানে পেটে কোন লাথি পরবে কিনা? আর যারা যুক্তি দেন যে জাতিসঙ্ঘ মিশনে আমরা নাকি ডলার গুনি তাই কাজ করি, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি শিলাজিতের স্বাধীনতা গানটা
তুমি ভাই বুঝবে কি হায়
ফুর ফুরে দিন কেটে যায়
বুঝাচ্ছ স্বাধীনতার মানে?
যে মানুষ দিনে রাতে
বুলেটে যে বুক পাতে
সেই বুঝেছে স্বাধীনতার মানে।
স্লিম জিমে ফেলে আসি ঘাম
ফরেন জিন্স কিনতে দিই দাম
স্বাধীন থাকা তোমার কাজের রুটিন। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।