জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
দিন কখনও এমনি এমনি বদলায় না। মানুষই দিনকে বদলায়। যারা দিন বদলাতে চায় তারাও দিন বদলাতে পারে না। দিন বদলাতে পারে তারাই যারা নিজেকে বদলাতে পারে।
আমাদের ছোটবেলায় শোনা জনপ্রিয় একটি শ্লোক বলি -
বৃটিশ দিল শাসন
আইউব দিল শোষণ
শেখ মুজিব দিল ভাষণ
(সামান্য বিকৃত হতে পারে, কেউ জানলে আওয়াজ দিয়েন)
এই ছোট্ট শ্লোকের মাধ্যমে আমাদের নেতাদের জাতীয় চরিত্র প্রকাশ পায়।
আমাদের নেতারা কেবল ভাষণ দিতে পছন্দ করেন। এমন চমৎকার ভাষণ দেন যে, তার ভক্ত হয়ে যায় অসংখ্য মানুষ। এই অন্ধ ভক্তরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন সারাক্ষণ। তাদের মতো লোকই বলে নেতা ভুল করেন না। নেতার মতো মানুষ হয় না।
নেতা মানে মহাপুরুষ।
সভা সমাবেশে আমরা কেবল নেতানেত্রীর গুণগান শুনি। শুনি বড় বড় কথা। কেবল উন্নয়নের জোয়ারের কথা শুনি। কিন্তু যখন কাজে নামার সময় হয়, তখন ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষ দেখি।
কেবল ঘুষ দুর্নীতির উন্নয়ন দেখি। কেবল সেই সব ক্ষমতার লোভ দেখি - যাতে ব্যক্তিগত লাভ হয়, যাতে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়া যায়।
শেখ হাসিনা দিন বদলের সনদ নামে ইশতেহার ও নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আর এখন আমরা দেখছি, দিন বদল তো দূরের কথা, সেই অতীতের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যেমন :
১. স্থানীয় সরকারে এমপিরা হস্তক্ষেপ করার লোভনীয় ও দুর্নীতিবর্ধক সুবিধা পাচ্ছেন।
২. এমপিরা বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি করার লোভনীয় ও দুর্নীতিবর্ধক সুবিধা পাচ্ছেন।
৩. পূর্বের মতোই নানা শীর্ষ পদে দলের লোকজন ও চামচাদের দুর্নীতিবর্ধক পুনর্বাসন চলছে।
৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জারি করা অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে নিজেদের আখের গুছানোর সুবিধাসম্পন্নগুলো রেখে সবগুলো বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। (যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধ্যাদেশ অবৈধ হয়, তবে সবগুলো অবৈধ। আর যদি বৈধ হয় সবগুলো বৈধ।
কিন্তু কোনটি বৈধ, কোনটি বৈধ নয় কেন বুঝলাম না। )
৫. বিচারপতি নিয়োগে আবারও রাজনৈতিক আনুগত্য ও প্রভাব কার্যকর করা হচ্ছে।
৬. বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাব কার্যকর করা হচ্ছে।
৭. বিকেন্দ্রীকরণ বা স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার জন্য গঠিত কমিশনের মৃতু্য গঠেছে। আবারও শুরু হচ্ছে এমপি শাসিত দুর্নীতিবর্ধক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা।
আমরা আসলে কোন পথে হাঁটছি ? দিন বদলের পথে নাকি পুরোনো দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার সেই অন্ধকার পথে ? দিন বদলের সনদ দিয়ে দিন বদল করা যায় না। কেবল মোটা মোটা ইশতেহার রচনা করে দিন বদল করা যায় না। কেবল ভাষণ দিয়ে দিন বদল করা যায় না।
দিন বদল করতে হলে নিজেকে আগে বদলাতে হয়। সেই বদলানোটা কে বদলেছে এই দেশে ? আজ কি বদলেছে ছাত্রলীগ ? আজ কি বদলেছে এমপিদের সেই রাজত্ব ? আজ কি বন্ধ হয়েছে রাজনৈতিক ক্যাডারদের চাঁদাবাজি আর টেন্ডারবাজি ?
আসলে কিছুই বদলায় না।
বদলায় কেবল দুর্নীতির কৌশল। বদলায় কেবল ঘুষ খাওয়ার কৌশল। বদলায় কেবল চাঁদাবাজির কৌশল। বদলায় কেবল টেন্ডারবাজির কৌশল। বদলায় কেবল দখল করার কৌশল।
বদলায় কেবল দুর্নীতিবাজের মুখগুলো। বদলায় কেবল সেই সকল লোকের ভাগ্য যারা ক্ষমতাবান।
যদি সত্যি সত্যি দিন বদলাতে চান নিজেকে বদলান আগে। পুরোনো নোংরা রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে আসেন। দলীয়করণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসেন।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিরোধ করুন দলীয়করণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি। এসব প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে দেখান। কেবল ভাষণ আর প্রতিশ্রুতিতে দুঃখী মানুষের দিন বদলাবে না কোনদিনও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।