শিরোনামটা অনেককে অবাক করতে পারে। আপাত দৃষ্টে ২৪তম বিসিএস এবং ২৭তম বিসিএস এর বঞ্চনার ঘটনা একই প্রকৃতির নয়। ২৭ তম উত্তীর্ণদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সত্ত্বেও তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার তাদের দাবী মেনে নিয়ে একটু ইস্যু বন্ধ করল। এখানে ন্যায় বা নিয়ম অনুসরণের জায়গায় জয়ী হয়েছে আন্দোলন। তবু তাদের অভিনন্দন জানাই।
হয়তো অনেকেই সত্যিকারের বঞ্চিত ছিল ওদের ভেতর। আশা করি তারা শিগগিরই সরকারে যোগ দিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।
কিন্তু ২৪তম বিসিএস বঞ্চিতদের ব্যাপারটা আলাদা, অন্যরকম।
অভিযোগ আছে, হয়তো অনেকের কাছে নিশ্চিত প্রমাণও আছে , বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সাংঘাতিক এবং বিষ্ময়কর দুর্নীতি হয়েছে ২৪তম বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে। এই পরীক্ষার ভাইবা বোর্ডে অংশ নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সেই কুখ্যাত অধ্যাপক (যাকে পরে বিশ্ববিদ্যালয়েরও ক্লাশ নিতে বিরত রাখা হয়েছিল অন্য একটি কারণে), দুর্নীতির মামলার কারণে পালিয়ে বেড়ানো আরেক খ্যাতিমান অধ্যাপকের পাপের বা লোভের কারণে চাকুরী বঞ্চিত হয়েছে অনেকে মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী।
প্রায় সব বোর্ডই গঠিত হয়েছিল বিশেষ একটি মিশনকে সামনে রেখে, আর তা হল, শিবির কর্মী, ছাত্রদলকর্মী এবং যারা ৬ লাখ টাকা করে দিতে পারবে তাদের নিয়োগ যাতে নিশ্চিত করা যায়, তা সামনে রেখে। হায় অভাগা বাংলাদেশ!!
এই ব্যাপারটি তখন এতোটাই চাওড় হয়েছিল যে নিতান্ত চোখ কান নিষ্ক্রিয় না হলে সবার কাছেই গেছে এই সংবাদ। বিসিএস সাধারণ ক্যাডারের তখন রেটই ছিল ৬ লাখ টাকা। তার একটা বড় অংশই যেতো যুবরাজের কাছে।
তখনই একটা ঘটনা শুনেছিলাম, চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবার পর এক ছাত্রদল কর্মী টাকা যোগাড় করতে পেরেছে।
এখন কি হবে? খুব সহজ। মূল তালিকা থেকে একজনের নাম কেটে ঐ স্থলে তার নাম ঢুকানো হয়েছিল। খালেদার প্রথম শাসনামলেও এই ধরণের ঘটনা ঘটতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যেমন শোনা গিয়েছিল, তালিকার প্রথম দিকে থাকা হিন্দু নাম দেখে দেখে কয়েকটা কেটে দেয়া হতো। সে তুলনায় ২৪ তম বিসিএস এর বেলায় যা ঘটেছিল, তা ইতিহাসে বিরল।
আরো ঘটনা আছে ...সংশ্লিষ্টরা বিশদ জানেন, এখানে বিস্তারিত আলাপ না করে আমার বক্তব্যের মূল বিষয়ে আসি।
এখন পরিবর্তিত সরকার, অনেক পাপই মোছা হচ্ছে, অনেক কিছুই নতুন করে ভাবা হচ্ছে। ২৪ তম বিসি এস এর ক্ষেত্রেও কি তেমন কিছু ভাবা যায়? আমার তো মনে হয় ভাবা উচিত। চুড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত কয়েকশ' প্রার্থীই হয়তো প্রতিকার পাবে এতে কিন্তু বাংলাদেশ একটা কলঙ্কের ইতিহাস থেকে তো মুক্ত হবে? বাস্তবতার নিরিখে ২৪ তমেরা আন্দোলন করবে না। কারণ তাদের বঞ্চনাটাই ছিল প্রশাসনিক, গোপন।
কিন্তু সরকার চাইলেই পারে। ২৪ তমের খাতা গুলি পুনরায় দেখা হোক (শুধু প্রাপ্ত নম্বর, আবার মূল্যায়ন নয়)। লিখিত পরীক্ষায় অসম্ভব ভাল করেছে কিন্তু ভাইবায় প্রায় কোন নম্বরই দেয়া হয়নি তাদের চিহ্নিত করে আবার ভাইবা নেয়া হোক। অথবা লিখিত পরীক্ষায় একটা নির্দিষ্ট মোট নম্বরকে মানদন্ড ধরে তাদের আবার ভাইভায় ডাকা হোক (পত্রিকায় নাম ও রোল উল্লেখ করে, নতুন করে প্রবেশপত্র ইস্যু করে)। কাজটা পিএসসি করতে চাইবে না, কারণ তাদের কি গরজ! তারা চাকরি করে, বেতন পায়, এতেই তারা সন্তুষ্ট।
কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের গণমুখী মনোভাব বা প্রবণতা থাকলে এই পাপ মাথায় রেখে তাদেরও সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া উচিত নয়।
জাতির একটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের অবসান ঘটুক, কয়েক শ বঞ্চিত প্রার্থীও ন্যায় বিচার পাক। (যারা রাজনৈতিক হীনস্বার্থ ও কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তির লালসার বলি হয়েছিল)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।