জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় অভাবী মানুষের কিডনি বেচাকেনা নিয়ে ব্যবসার দায়ে দুই বছর আগে আটক হয়েছিলেন তাঁরা। পরে এ-সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্তও হন। এখন অভিযোগ উঠেছে, জামিনে বেরিয়ে এসে এই দালালদের অন্তত পাঁচজন এলাকায় কিডনি-বাণিজ্য ফের জমিয়ে তুলেছেন। দালালেরা এবার আরও বেশি দামের টোপ ফেলছেন। সতর্কতাও বেড়েছে।
কিডনি বিক্রেতাদের ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করিয়ে মূলত ভারতে নিয়ে গিয়ে কিডনি আহরণ করা হচ্ছে। গত নয় মাসে দালালেরা অন্তত ১৫ জন দরিদ্র নারী-পুরুষের কিডনি বিক্রি করিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় নিয়ে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষে কিডনি আহরণের জন্য তৈরি রাখা হয়েছে আরও অন্তত ১০ জনকে। তাঁদের নিরাপত্তার ভয় থাকায় প্রথম আলো সবার নাম প্রকাশ করছে না। এদিকে কিডনি বিক্রেতাদের কেউ কেউ প্রতিশ্রুত অঙ্কের টাকা পাননি।
কলকাতার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কিডনি কাটানোর পরে একজন দেশে ফিরেছেন অসুস্থ হয়ে। একজনের কাছে অবশ্য ভারতের ‘কলাম্বিয়া এশিয়া’র মতো নামী হাসপাতালের কাগজপত্রও দেখা গেছে।
তাঁরা পাঁচজন: গত কয়েক দিনে কালাইয়ের তিনটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে খোঁজখবর করে কিডনি-বাণিজ্যের দালাল হিসেবে যাঁদের নাম পাওয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে তারেক আজম চৌধুরী ওরফে বাবুল চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে দাউদ, নাফিজ মাহমুদ, আবদুস সাত্তার ও আবদুল মান্নান—এ পাঁচজন আগের মামলাটির অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। কিডনি বিক্রেতা ও এলাকার মানুষজন বলছেন, প্রথমোক্ত তিনজন ঢাকায় বসে কিডনির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। নাফিজ একই সঙ্গে ভারতের ‘কলম্বিয়া এশিয়া’ হাসপাতালের এ দেশীয় প্রতিনিধি।
বাকি দুজন অর্থাৎ সাত্তার ও মান্নান তাঁদের হয়ে কালাইয়ে কাজ করছেন। আবদুস সাত্তার অবশ্য প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন যে তিনি কিডনির দালালি ছেড়ে দিয়েছেন এবং ঢাকার তারেক আজম সরাসরি যোগাযোগ করে কালাই থেকে কিডনি কেনেন। ঢাকা এলাকার মানুষজন কিছু নতুন দালালের নামও বলেন, তবে এ ব্যবসায় পুরোনোরাই প্রধান।
দুর্বল মামলা, পাল্টায়নি দৃশ্যপট: কালাইয়ের অভাবী মানুষকে লোভ দেখিয়ে এবং শারীরিক সমস্যা না হওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের কিডনি ও যকৃত নিয়ে দালাল চক্রের ব্যবসা সম্পর্কে ‘২০০ অভাবীর কিডনি বিক্রি’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রথম অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি বেরোয় ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট। অন্যান্য গণমাধ্যমেও কয়েক দিন ধরে খবরটি প্রকাশিত হতে থাকে।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় গত বছরের ৩১ অক্টোবর ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে তারেক, সাইফুল, নাফিজ, সাত্তার ও মান্নানের নাম রয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলার শুনানির তারিখ পড়েনি। এদিকে জড়িত হিসেবে ঢাকার যেসব চিকিৎসক বা ক্লিনিক-হাসপাতালের নাম এসেছিল, অভিযোগপত্রে সেগুলো সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।