আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের মহাসমাবেশ- কিছু প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি দুঃখ-ক্ষোভ

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা কথাটা রুঢ় মনে হতে পারে কিন্তু আজকের মহাসমাবেশের সম্পূর্ণ সময়টাতে আবেগী অনলাইন এক্টিভিস্টদের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা এবং মূলমঞ্চে অনুপস্থিতি দেখে একটাই শব্দ মনে আসলো- অনলাইনের এক্টিভিস্টদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া আবেগের ইস্যুটিকে টিস্যু বানিয়ে জুতা মুছে মঞ্চে নায়ক হলো যারা তাদের পরিচয় তারা অনলাইন প্রযুক্তি এবং এই আবেগের জায়গার বাইরের মানুষ। আমি ইমরানকে চিনি না, তার সাথে আমার গতকাল সন্ধ্যার আগে কখনো কথা হয় নি, যোগাযোগের জায়গাও ছিলো না। তবে গতকাল মহাসমাবেশের ঘোষণার পর আমার ভেতরে একটাই আগ্রহের জায়গা ছিলো, আগামী কালের মহাসমাবেশ থেকে কি ঘোষণা আসবে? সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনে আয়োজনটা যেভাবে বলিষ্ট হয়েছে সেই সাধারণ মানুষেরা নিজস্ব ক্ষোভ আক্ষেপের জায়গা থেকে এই অনলাইন এক্টিভিস্টদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে, নিজেদের উপস্থিতি দিয়ে আয়োজনকে জীবন্ত করে তুলেছে, তাদের ভেতরে অনেক ধরণের অস্পষ্ট প্রত্যাশা কিংবা দাবী আছে, তারা সেসব ভেতরে নিয়েই এখানে আসছে, নিজেদের সংহতি প্রকাশ করছে সচেতন উপস্থিতির মাধ্যমে। এই কয়েক হাজার মানুষের সামনে এই আয়োজকরা কি বক্তব্য কিংবা দাবী উপস্থাপন করবে? সে দাবীর সাথে জনগনের প্রত্যাশা কতটুকু মিলবে, তাই উপস্থিত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম "ইমরান" সে ব্যক্তি যে সব জানে। আরিফ জেবতিকের কল্যানে ইমরানের সাক্ষাত পেলাম, তাকে প্রশ্ন করলাম আগামী কাল মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন আপনি, আপনি উপস্থিত জনগণকে ধন্যবাদ জানাবেন? আর যদি ধন্যবাদই জানান তার সাথে আর কি বক্তব্য তাদের সামনে উপস্থিত করবেন যার ভিত্তিতে এখানে আসা সেই মানুষটার মনে হবে তার উপস্থিতি এ আয়োজনে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ছিলো।

সে এখানে এসে নিজের জন্যে কিছু অর্জন করেছে। একটা চলমান আন্দোলনে যারা সরব উপস্থিতি রাখে তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এক ধরণের প্রাপ্তিবোধ তৈরি হলে তারা একই দাবীতে পরবর্তী আন্দোলনে আসবে। তাদের যদি পরবর্তী কোনো দাবীতে ঐক্যবদ্ধ করতে হয় তাহলে তাদের সামনে এমন কিছু আপনার উপস্থাপন করতে হবে যেটা পেয়ে যে ভাববে তার অর্জনের খাতা পূর্ণ হলো। আপনি কি ভাবছেন? ইমরান এ প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট উত্তর দেয় নি। তবে তার এই ভোদাই মার্কা এক্সপ্রেশন দেখে বুঝলাম এই গণজমায়েতে তার ভাবনা বিহ্বল, এতটা প্রত্যাশা ছিলো না তার, তবে তার বক্তব্য ভেতরে উপস্থিত বাঁধন কিংবা সবাক পাখী ভেবেছে বিষয়টা।

আমি আরিফ জেবতিককে অনুরোধ করেছিলাম অন্তত পরবর্তী মহাসমাবেশের বিকেলের সূচনা বক্তব্য শুভেচ্ছা বক্তব্যটা গুছিয়ে যেনো সে লিখে রাখে, কেন না ইমরানের ভেতরে সে মেধা নেই, সাধারণ মানুষের মনের দাবী সুন্দর করে প্রকাশের জন্যে উপযুক্ত ব্যক্তিটি আরিফ জেবতিক। মহাসমাবেশ নিয়ে আমার কিছু দুঃখের জায়গা আছে, কিছু আপত্তির জায়গা আছে,তবে আজ দুপুরের পরিস্থিতি দেখে মনে মনে একটা আশংকা ছিলো অনলাইন আক্টিভিস্টদের আহবানে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষদের সামনে প্রাপ্তি হিসেবে কিছুই থাকবে না। সুতরাং চটজলদি একটা মোটামুটি খসরা ঘোষণার মতো লিখেছিলাম, ধারণা ছিলো যেহেতু শুধুমাত্র অনলাইন এক্টিভিস্টরাই বক্তব্য দিবেন সুতরাং তাদের কাউকে অনুরোধ করবো সমেবেত ধন্যবাদ জ্ঞাপনের অংশ হিসেবে বিষয়টা উপস্থাপনের। কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে ক্ষুব্ধ মানুষের একজন হিসেবে আমি-আমরা এখানে এসেছি , মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ানো আমি-আমরারা আপনাদেরই একজন। পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেওয়া দুটো যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ আমাদের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারে নি।

চার শতাধিক মানুষকে হত্যা করা একজন মানবতাবিরোধী অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড ন্যায়বিচারপ্রত্যাশী সকল মানুষের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারে নি। আমরা নিজেদের বঞ্চিত ভেবেছি, আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। আমি-তুমি-আমরা এখানে সমবেত হয়েছি ন্যায়বিচারের দাবীতে। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেও সেটা পাই নি বলে ক্ষুব্ধ। ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব কাঠামোতে সম্ভব না হলে সুপ্রীম কোর্টে পুনরায় আপীল করার বিধান রয়েছে।

আমাদের প্রত্যাশা এই বিচারকার্যের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষেরা যারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী জানেন এবং বুঝেন তারা তাদের বিবেচনা মতো উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে জন-দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করবেন। গণদাবীর প্রতি সম্মতি জানাবেন। ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সম্পূর্ণ সময়টাতে কাদের মোল্লা শুধু ৬টি অপরাধ করেছেন এমন না, স্বার্থবাদী মানুষেরা এই অমানবিক পরিস্থিতিতে অনেক ধরণের অপরাধে লিপ্ত ছিলেন, তার মধ্যে ছয়টি আদালতে উপস্থাপন করে সেসবের বিচার দাবী করা হয়েছিলো। অপরাপর অপরাধের ঠিকুজিও খুঁজে বের করা সম্ভব। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের সাথে আছে আমাদের ১৬ কোটি মানুষ, তারা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করলে এই ট্রাইব্যুনালেই কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।

কাদের মোল্লা কিংবা অপরাপর যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে এমন অমানবিক বর্বরতায় জড়িত হন নি, দলীয় ভাবে দলগত সিদ্ধান্তে তারা এই মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হয়েছেন। আমাদের দাবী যুদ্ধাপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মম বাঙালী নিষ্পেষণের সাথে জড়িত সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে পারে। আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি। আপনারা স্বতঃস্ফুর্ত এখানে এসেছেন, আপনারাই সিদ্ধান্ত জানাবেন আমরা এ আন্দোলন অব্যহত রাখবো কি না।

আপনারা যদি চান তাহলে আমরা আপনাদের সাথেই থাকবো, আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের ভাই-সন্তান হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে পারলে নিজেদের সম্মানিত মনে করবো। আপনারা যদি সিদ্ধান্ত জানান আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করাই যথেষ্ট, সরকারই আমাদের প্রত্যাশাগুলো পুরণের ভার নিবে, আমরা আপনাদের সিদ্ধান্তে শ্রদ্ধা জানিয়ে এখান থেকে চলে যাবো। আপনাদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের সমেবেত হওয়াটা আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহনেই সম্ভব হয়েছে। আপনারা আছেন, সমর্থন দিয়েছেন বলে আমরা একেবারে সাধারণ হয়েও আপনাদের জন্যেই অসাধারণ একটি মুহুর্তে বেঁচে আছি।

দুপুরে যখন ক্লান্ত বাঁধনের সাথে দেখা হলো তখনও কারা বক্তব্য দিবে জানা ছিলো না, তবে বাঁধন নিশ্চিত করলো তারা চারজন মূলত মূলমঞ্চে থাকবে আর থাকবে জাফর ইকবাল স্যার, এদের বাইরে প্রত্যেকেই মঞ্চে উপস্থিত চার জনের ডাকে মঞ্চে উঠবে এবং সেখান থেকে নেমে যাবে। বাঁধনের ভাবনায় ৫টি স্পষ্ট দাবী আছে এবং সেসব দাবীর তেমন কোনো সংশোধনও প্রয়োজন নেই। চমৎকার দাবীগুলোর সাথে আমার জানার আগ্রহ ছিলো মূলত এইখানে কি ঘোষণা যাবে আন্দোলন বিষয়ে? আন্দোলন কি সাঈদীর বিচারের রায় পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে না কি আচমকা থামিয়ে দেওয়ার ঘোষণা আসবে? এই মঞ্চ থেকে আসলে কতগুলো উত্থাপিত দাবী এবং সেসব দাবীর পক্ষে কতৃপক্ষের সম্মতির বিষয়টা প্রকাশিত হবে? আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠা মানুষদের বক্তব্য কি? সে বিষয়ে বাঁধনের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য ছিলো না। তবে আশা ছিলো মহাসমাবেশে আগত জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানানোর সৌজন্যতাটুকু সেখানে থাকবে মঞ্চের সামনে দেখা হলো পিয়াল ভাইয়ের সাথে। অনলাইন যেসব এক্টিভিস্ট কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করছে তাদের এই মানসিকতা নির্মাণ করেছে পিয়াল ভাই।

বলতে গেলে পিয়াল ভাইয়ের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ডেডিকেশনটা এদের স্পর্শ্ব করেছে এবং এরাই পিয়াল ভাইয়ের বিশ্বাসটা আবেগটা নিজের ভেতরে ধারণ করেছে বলেই কাদের মোল্লার রায়ের সাথে সাথেই এরা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অথচ মঞ্চে উপস্থিত কেউই আসলে পিয়াল ভাইয়ের সেই অবদানের ন্যুনতম স্বীকৃতিটুকু সাধারণের সামনে তুলে ধরলো না। পিয়াল ভাই দুঃখিত হয়েছেন না কি আনন্দিত হয়েছেন জানি না, পিয়াল ভাই এইসব ব্যক্তিগত অর্জনকে কখনই ততটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন নি যতটা এ দাবীকে জাগ্রত রাখাকে গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছেন। ব্যক্তিগত অনুদারতার জায়গা হয়তো ছিলো কিংবা এটাই স্বাভাবিক মেনে নেওয়া অবচেতন ভ্রান্তি হয়তো ছিলো সেখানে তবে মহাসমাবেশ কোনো দিকনির্দেশনা ছাড়াই কতিপয় মানুষের ব্যক্তিগত বক্তৃতার মঞ্চ হয়ে গেলো এবং তারা বিভিন্ন রাজা উজির মারলেন। এই সম্পূর্ণ সময়টাতে তারা কোনো একটি বক্তব্যেও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিকে কোনো ধন্যবাদ জানালেন না।

বিষয়টির সাথে কত মানুষের কত ধরণের আবেগ অপ্রাপ্তি ক্ষোভ জড়িয়ে আছে সেটাকে আমলে না নিয়ে, সেসবের সাথে একাত্মতা না জানিয়ে নিজেদের নেতা হয়ে ওঠার স্বমেহনের আনন্দ উপভোগ করলেন। সাধারণ মানুষের স্বীকৃতি না থাকলে কিংবা আবেগ জড়িয়ে না থাকলে, এই এত সব নিস্বার্থ কর্মীরা আহার নিদ্রা বাদ দিয়ে গত ৭২ ঘন্টা অবিরাম নিজেদের এখানে না রাখলে এই সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের এত গন মানুষের সামনে দুই লাইন বলার ক্ষমতা কিংবা হ্যাডম যে থাকতো না সেই স্বীকৃতিটুকু জানাতেও তারা এত বেশী অনুদার মনে হলো এরা সবাই নিজেদের আবেগ সমেত এক একটি টিস্যু, যা দিয়ে জুতা মুছে অবলীলায় নিজেদের নেতা নেতা ভাবটা প্রচার করা যায়। ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সকল মানুষকে আন্তরিক ধন্যবাদ, একই সাথে সকল ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ। তারা আয়োজনটাকে জীবন্ত করে ফেলেছেন নিজের সরব উপস্থিতিতে। আয়োজনকের দীনতা কিছুটা দুঃখ দিয়েছে।

তাদের ব্যানারে হয়তো সবাই যায় নি এই সমাবেশে কিন্তু তাদের মতোই সমান আন্তরিকতা ও স্পৃহা নিয়ে অনেক ব্লগারই সেখানে ছিলো, তাদের পক্ষ থেকেও কেউ প্রতিনিধিত্ব করতে পারে নি এই মঞ্চে। হয়তো এক ধরণের সচেতন উপেক্ষার জায়গা সেখানে ছিলো। একটা বড় ইস্যুতে ব্যক্তিগত দীনতা হীনতা মুছে সমেবেত হওয়ার উদারতা আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। এই উদারতাটুকু বোয়ানের কর্মীদের ভেতরে ছিলো না। ইস্যু বিষয়ে ঐক্যমতের জায়গা, উদারতার মানসিকতা তৈরি না হওয়ার নিন্দাটুকুও স্পষ্ট জানিয়ে গেলাম।

তবে গত ৩ দিন সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনে যেভাবে বিষয়টা গড়ে উঠলো সে ইতিহাসটুকুর অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত। গণমানুষের একজন হয়ে, গণমানুষের ভেতরে নিজেকে মিলিয়ে দিতে পারার আনন্দ অসাধারণ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।