আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওএসডি,ভয়াবহ চিত্র জোট সরকারের আমলে শুরু .।

চাকরি আছে, বেতন-ভাতা আছে, কাজ নেই। জনপ্রশাসনে এঁদের বলা হয় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংক্ষেপে ওএসডি। বর্তমানে এঁদের সংখ্যা ৬৫১। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের হিসাব ও প্রশাসন শাখাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, ওএসডির সংখ্যা প্রায়ই পরিবর্তন হয়ে থাকে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ সময়ে (২৮ অক্টোবর, ২০০৬) ওএসডির সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৫৫। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই সংখ্যা হয় মাত্র ৫৮ জন, যা ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯ অনুযায়ী ওএসডি সচিবেরা বেতনের পাশাপাশি সব সুবিধা পেয়ে থাকেন। যুগ্মসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তারা প্রতি মাসে ১৮০ লিটার জ্বালানি তেল পান। এর মূল্য ১৩ হাজার ৮৬০ টাকা।

চালকের বেতনও দেয় সরকার। অনেক কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের দু-তিনটি গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। এসব গাড়িরও সব খরচ বহন করে সরকার। শুধু গাড়ি বাবদ একজন কর্মকর্তার পেছনে রাষ্ট্রের মাসিক খরচ ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ওএসডি কর্মকর্তারা যেসব বাড়িতে থাকেন, সেগুলোর ভাড়া ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

সরকারি বাড়িতে না থাকলে বাড়িভাড়া হিসেবে আলাদা টাকা পান। আরও আছে চিকিৎসা ভাতা, গৃহভৃত্য ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, পত্রিকা, সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা, টেলিফোন ও মুঠোফোন বিল এবং নিরাপত্তারক্ষী। তবে উপসচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবেরা পরিবহন পুলের গাড়ি ব্যবহার করেন। নিয়ম কী: স্বাধীনতার পর থেকেই এ প্রথা চালু থাকলেও আগে এত বেশি সংখ্যক ওএসডি করা হতো না। প্রশিক্ষণের জন্য কেউ বিদেশে গেলে তাঁকে ওএসডি করা হতো।

ফিরলে আবার স্বপদে পদায়ন করা হতো। ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচটি কারণে সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা যায়। প্রথমত, দুর্নীতি, শৃঙ্খলাজনিত, অসদাচরণ ও অযোগ্যতার জন্য প্রত্যাহার করা কর্মকর্তাকে ওএসডি করা যায়। তবে সর্বোচ্চ ১৫০ দিন ওএসডি রাখা যাবে। দ্বিতীয়ত, দুই মাসের অধিক ছুটি ভোগকারী বা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ওএসডি করা যায়; পুরোনো পদ বা বৈদেশিক চাকরি থেকে অব্যাহতি বা বৈদেশিক প্রশিক্ষণ থেকে প্রত্যাগত এবং নতুন পদে যোগদানের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন এমন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা যায়; বৈদেশিক চাকরি বা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশি ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্যে অপেক্ষমাণ রয়েছেন এমন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা যায়, এ ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব তিন মাস পর্যন্ত ওএসডি রাখা যাবে; এবং প্রশাসনিক বা অনিবার্য কারণে কোনো কর্মকর্তাকে ওএসডি করা যায়।

১৬ বছরে সবচেয়ে কম: ১৬ বছরের মধ্যে ওএসডির সংখ্যা সবচেয়ে কম ছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সে সময় মোট ৫৮ জন যুগ্ম সচিব ও উপসচিবকে ওএসডি করা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠকে ওএসডি কর্মকর্তাদের দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, এটি একটি খারাপ নজির যে কাজ না করেও সরকারি কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। বিদেশে যেতে মানা: ওএসডি কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

এ বিষয়ে সংস্থাপন সচিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওএসডি কর্মকর্তার কাজ না থাকায় তাঁকে কোনো সেমিনারে বা প্রশিক্ষণে পাঠানোর সুযোগ নেই। ফলে ওএসডি কর্মকর্তার বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমার মনে হয় না । ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬১৬ জন। তাঁদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭০ টাকা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জোট সরকারের সময়কার চার বছরের (২০০৪-২০০৭) প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো.খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয় গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। আদালত ২৯ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১৯ জন সচিব, ৮৮ জন অতিরিক্ত সচিব, ২৮০ জন যুগ্ম সচিব, ৮৭৮ জন উপসচিব, ২৪৪ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ১০৭ জন সহকারী সচিবকে ওএসডি করে রাখা হয়। পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা: জানা গেছে, বর্তমানে জনপ্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের পদ আছে ১০৮টি। অথচ বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব আছেন ২৪২ জন।

যুগ্ম সচিবের পদ আছে ২৫০টি। এর বিপরীতে বর্তমানে যুগ্ম সচিব আছেন ৬২২ জন। তবে উপসচিবের পদের চেয়ে কর্মকর্তা আছেন প্রায় দ্বিগুণ। উপসচিবের মোট ৮৬০টি পদের বিপরীতে কর্মকর্তা আছেন বর্তমানে এক হাজার ৬৯৪ জন। কর্মকর্তারা জানান, পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা থাকায় পছন্দনীয় দফতরের দায়িত্ব নিয়ে চলে প্রভাবশালীদের লড়াই ও নানা অনৈতিক খেলা।

যাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, কিংবা আদর্শ ও সততা বিসর্জন দিতে পারেন, তারা সহজেই লোভনীয় দফতরের দায়িত্ব পেতে পারেন। প্রভাবশালী আমলাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ ও প্রতিহিংসার কারণেও অনেক যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।