আমার মা আমার শৈশবের এক ভয়াবহ দুঃশ্চিন্তার নাম। কারন, মা প্রতিদিনই আমার স্বপ্নের পৃথিবীতে নির্মমভাবে হানা দিত। আমি সকালে স্কুলে যেতে চাইতাম না। মা স্কুলে পাঠাতো। আমি বিকেলে খেলতে চাইতাম।
মা আমাকে জোর করে ঘুম পাড়াতো। রাতে টিভি দেখতে চাইতাম মা তাও দিতনা। এ এক কঠিন অত্যাচার। ভয়াবহ রাগ হতো। প্রায়ই মনে মনে ঠিক করতাম এভাবে চলে না।
মা, কোন কিছু বোঝে না। শুধু পড় পড় আর পড়। মায়ের কাছে থাকা যাবে না। এ ঘর ছাড়তে হবে। এমন এক জায়গায় যেতে হবে যেখানে মা নেই।
২.
কৈশরেও পড় পড় ছিল। সঙ্গে আরো অনেক কড়াকড়ি। ওখানে যাবিনা, এটা করবিনা। বিরক্তিটা তখন আরো বেশি ছিল। কারন চোখে তখন রঙ্গীন এক পৃথিবী।
তাই, মা মায়ের মতো বলতো। আমি আমার মতো চলতাম। এটাকে মায়ের রুটিনওর্য়াক ধরে তার কথা যেমন করে শুনতাম তেমন করে ভুলে যাবার চেষ্টা করতাম। এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধও চলতো মায়ের সাথে। মা প্রতিদিন হুমকি দিতেন, কথা যখন শুনবিই না, তাই তোর কোন দাবি দাওয়াও আমি শুনবোনা।
এ যুদ্ধ যেমন নিয়মিত ছিল, তেমনই এ যুদ্ধের ফলাফলও নিয়মিত হতো। আমি প্রতিদিনই জিততাম। মা তার কথা রাখতে পারতো না। ভূল করে হোক আর সচেতনভাবেই হোক, কিছু চাইলে মা সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দিত। ওই জয় আমাকে আরো উৎসাহিত করতো।
আর আমার মা প্রতিদিনই হারতো।
৩.
আজ জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ন সময়ে চলে এসেছি। সব বুঝতে পারি। এখন মাকে বলে দিতে হয়না এটা কর, এটা করবি না। উল্টো কোন কাজ করার আগে নিজেই আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করি, মা এটা কি করবো ? মা যদি বলে, কর তবে তা যত কষ্টেরই হোক চোখ বন্ধ করে নেমে পড়ি।
শৈশবে মায়ের সেই আচরন এখন বুঝতে পারি। এখন আর স্নায়ুযুদ্ধ হয়না। এখন জিততেও চাই না। এখন ধীরে ধীরে ভূলগুলোও ভাঙ্গছে প্রতিদিন। বুঝতে পারি, আমার স্বপ্নের পৃথিবীতে সেটা মায়ের হানা ছিলনা।
ছিল স্বপ্নের পৃথিবী আরো স্বপ্নের মতো গড়ে দেবার আয়োজন।
এক সময় চলে যেতে চেয়েছিলাম যেখানে মা নেই। আজ এমন জায়গা তো দূরে, এমন একটা মুহুর্তও কল্পনা করতে পারিনা মাকে ছাড়া। পৃথিবীর যাবতীয় আনন্দ এখন মাকে ঘিরে। আজ আমি বুঝি কেন মায়ের এত মূল্য ? বুঝতে পারি, সৃষ্টির্কতা তার এতো মমতা থাকা স্বত্তেও কেন মাটির পৃথিবীতে নেমে আসতে চাননা।
কারন, পৃথিবীতে মমতা ছড়াবার জন্য তার আসার কী প্রয়োজন, তিনি তো পৃথিবীতে মায়েদেরই পঠিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।