বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d
মাঝে মাঝে খুব ভাবতাম টোকাই হয়ে গেলে আমি কোথায় থাকবো? কি খাবো? কি আমার পরিচয় হবে? কোনদিন কি বাবা-মা'র সাথে দেখা হবে? আমার সাংসারিক জীবন কেমন হবে? আরো আরো অনেক প্রশ্ন মাথার মধ্যে কিলবিল করতো। এই চিন্তা গুলো মাথার মধ্যে এমনি এমনি আসতো না, তা আসার যথেষ্ট কারণ ছিল। কারণ আমি শিওর ছিলাম যে, হয়ত খুব তাড়াতাড়ি আমাকে টোকাই হতেই হবে।
ছোটবেলায় খুব বিচলিত থাকতাম এগুলো নিয়ে।
যাইহোক, এর কারণ হলো ছোটবেলায় আমার পড়ালেখা করতে ভালো লাগতো না। মন বসতো না। মাথায় পড়া ঢুকতো না। তাই কথায় কথায় বাবা মা বলতেন, আমাকে ঘাড় ধরে বাড়ী থেকে বের করে দিবেন। আর যাতে কোন দিন তাদের সাথে সম্পর্ক না রাখতে পারি সেই ব্যাবস্থা করবেন।
তখন মাঝে মাঝে ভাবতাম কি আর করবো? এমনই যদি হয় তবে না হয় রিক্সা চালাবো, না হয় বাদম বিক্রি করবো আর না হয় রেল ষ্টেশনে ঘুরে বেড়াবো। এইসব ভাবতে ভাবতে চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখতাম।
একবার রোজার মধ্যে আমার পড়াশোনায় চরম বিশৃংখলা শুরু হয়ে গেলো। আম্মার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে আমাকে আর জেনারেল লাইনে পড়াবে না, মাদ্রাসায় দিয়ে দিবে। আমার সে কি মনে মনে কষ্ট! রাতে ঘুমাতে পারতাম না।
একদিন সত্যি সত্যি আমাকে বাবা দর্জির দোকানে নিয়ে গিয়ে পায়জামা পাঞ্জাবীর মাপ নিতে বললেন দর্জিকে। তবুও আমি ছিলাম নির্বিকার। অবশেষে আমার পায়জামা পাঞ্জাবী বানানো হলো। খুব টেনশনে ছিলাম কয়েকদিন। পরে জানতে পেরেছিলাম ঈদ উপলক্ষে ওটা বানানো হয়েছিল।
হায়রে কপাল!!!!
একবার কি একটা কারণে আম্মা বাসা থেকে বের করে দিলেন। আমাকে একটা লুঙ্গি পরালেন আর স্যান্ডো গেঞ্জি। বললেন, "যাহ আর কোন দিন ফিরে আসবি না। " আমি আর কি করবো। মনের দুঃখে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।
একদৌড়ে এলাকা ছেড়ে অনেক দুরে চলে গেলাম। কারণ মহল্লার মধ্যে ঐ ড্রেস পরে ঘুরতে দেখলেই অনেকেই অনেক প্রশ্ন করবে। তাতে সবার মধ্যে সব কিছু জানাজানি হয়ে যাবে। এ লজ্জা কোথায় রাখবো? কারণ আমার বাবা এলাকায় একজন স্বনামধন্য ব্যাক্তি ছিলেন। তাই অনেক দুরে চলে গেলাম।
মনে আছে হাটতে হাটতে একটা পুকুরের কাছে চলে গেলাম। সময়টা ছিল প্রায় বেলা বারোটা। ওখানে বসে আছি।
আমার মাথায় তখন অনেক কিছু খেলছিল। ভেবে নিয়েছিলাম এইতো আমার জীবনটা পরিবর্তন হয়ে গেলো।
আর কোনদিনই তো আমার আগের জীবনে ফেরত যেতে পারবো না। সব আশা ছেড়ে দিলাম। খুব মনে আছে, ওখানে টোকাই টাইপের কত গুলো ছেলে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। আমি ওদের অঙ্গভঙ্গি আর বেশভুষা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলাম। সেই মূহুর্তে মেনেই নিলাম আমার ভাবী টোকাই জীবন।
কিন্তু ওদের সাথে চেহারা, গড়ন, পোষাক ইত্যাদি সবদিক দিয়েই আমার পার্থক্য ছিল। ওরা সেটাও দেখছিল তাকিয়ে তাকিয়ে। একটা ছেলে আমাকে প্রশ্ন করলো, "আপ্নের বাড়ি কোনে?" বলতে গেলে আমি ওদের সমবয়সী ছিলাম। কিন্তু তারা আমার সব কিছু দেখে আমাকে "আপনি" সম্মোধন করছিল।
এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিল।
আমার মনে দুঃচিন্তা বাসা বাঁধছিল। কি করবো? কি হবে? পরক্ষণেই আবার শুধরে নিচ্ছিলাম এই ভেবে যে, "আমার তো আর ফিরে যাওয়ার কোন পথ নাই, এইসব ছেলেরা যে ভাবে খায় ঘুমায় আমিও সেইভাবেই থাকবো। " এটা সত্যি আমার মনের মাঝে এমনই পরিবেশ তৈরী হয়েছিল যে, কোনভাবেই আমি বাসায় ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছিলাম না।
এমন ভাবতে ভাবতে আমাদের বাসার সামনে একটি ছেলে (আমার চেয়ে কয়েক বছরের বড়) আমাকে গিয়ে পিছন থেকে ধরে ফেললো। আমাকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসলো।
যদি সেই ছেলে আমাকে খুঁজে না পেতো তবে আজ এই আমি হয়ত এই আমি হতাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।