আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব।
যদুপুরের যাদববাবু কৃপণ হিসেবে সুখ্যাতি পেয়েছেন। লোকে বলে অমন কৃপণ এ-তল্লাটে নাই।
মধুপুরের মাধববাবুর তাতে ভীষণ আপত্তি। কৃপণ হিসেবে তিনিও খ্যাতিবান।
যাদব নাকি রসগোল্লা-কে সুতোয় বেঁধে তার ছায়া ফেলে জলের গেলাসে। তারপর সেই জল সরবত ভেবে পান করেন। গল্পটা মাধবের বুকে গেঁথে গেছে।
তিনিও রসগোল্লার ছায়ায় তৈরী সরবত পান করেন এখন। তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন বারম্বার।
যাদব-বাবুর বিষয়ে আরো একটি জনশ্রুতি, তিনি নাকি ভাজা উল্টে খান ভাতের সাথে।
কৌতুহলে তা-ও করে দেখেছেন মাধব। ভাজা মাছ উল্টে-পাল্টে তার তেল দিয়ে ভাত খেতে সত্যি-ই ভাল লাগে।
ভাজা মাছ আস্ত থাকে, ভাতও খাওয়া হয়। তারপর গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করে,
আমার কৃপণ-ঘরে জনম যেন হয়-গো বারম্বার!
যাদব-বাবু ঠিক কতখানি কৃপণ তা চাক্ষুস করার ইচ্ছায় মাধববাবু রওনা হলেন যদুপুর।
গ্রীস্মের খররোদে অনেকখানি পথ হেঁটে মাথায়-মুখে ঘামের আলপনা টের পেলেন মাধব। তবু তাঁর বাসনা পুরণ হলো না।
শুনলেন কি একটা জরুরী কাজে যাদব শহর গেছেন পায়ে হেঁটে।
খবরটা দিলো যাদবের বড় মেয়ে। মাধব বললেন--কখন ফিরবেন তোমার বাবা?
--বাবা তো পায়ে হেঁটে ফিরবেন, তা ধরুন নাগাদ সন্ধ্যে।
--বেশ মা, বেশ, বাবা এলে বলো মধুপুরের মাধববাবু এসেছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
--ঠিক আছে বলবো। কিন্তু আপনি চলে যাচ্ছেন কেন কাকু।
দাঁরান একটু মিষ্টিমুখ করে যান।
--না মা তা-তে তোমার বাবার অনেক খরচা হয়ে যাবে।
--হয় হোক, আপনি প্রথম এলেন আমাদের বাড়ি,নিন প্রথমে এই জলটুকু খান।
বলে মেয়েটি হাতের ইশারায় একটা গেলাস এঁকে মাধববাবুর দিকে এগিয়ে দিলো।
কাল্পনিক সেই জল পরম তৃপ্তি-ভরে পান করলেন মাধববাবু।
তারপর বললেন--বেঁচে থাকো মা, কৃপণমতী হও।
--দাঁড়ান কাকু এই বাতাসা টুকু খান বলে আবার বাতাসে বাতাসা আঁকলো মেয়েটি। তা-ও ভক্তি-ভরে খেলেন মাধব।
বললেন--আশীর্বাদ করি তোমার শ্বশুর যেন তোমার বাবার চেয়ে বড়ো কৃপণ হয়।
সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরলেন যাদব।
মেয়ের কাছে শুনলেন সব বৃত্তান্ত । বললেন--কত বড়ো বাতাসা এঁকেছিলি?
মেয়েটি হাতের ইশারায় দেখালো। তা-তে চোখ কপালে উঠে গেল যাদবের। বললেন--হতচ্ছাড়া মেয়ে অতবড়ো বাতাসা আঁকতে গেলি কেন, বাবার পয়সা খুব বেশী হয়ে গেছে তাই ভাবছো না? এইটুকু বাতাসা আঁকতে পারলি না?
(প্রিয় এক হাসির লেখকের লেখা কৌতুকীর ছায়া অবলম্বনে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।