আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবু সয়ীদ আইয়ুব থেকে



আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন কেননা আমরা আজও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। সরকারী, বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের শিক্ষা আমাদের সমাজের বিভক্তি এবং বৈষম্যকে স্থায়ী করছে। ধর্ম শিক্ষা নিয়ে সমস্যা জটিল। একদিকে সকলেই ধার্মিক হতে চায় আবার অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষাও চায়। একজন ধার্মিক ব্যক্তি বলতে কি বোঝায় কেউ বলতে পারবে না।

তিনি কি একজন মওলানা, তিনি কি একজন দাড়ি না রাখা মানুষ? তিনি কি ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার বা মাদ্রাসা না পড়া মানুষ? কে জানে। আবু সয়ীদ আইয়ুব একজন অবাঙ্গালী এবং পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র। বাংলার প্রতি অগাধ ভালবাসা তাকে একজন রবীন্দ্র সমালোচক হিসেবেই বেশী পরিচিতি দিয়েছে। উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিভৎসতা দেখে শিশুদের ধর্ম শিক্ষা নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা বিবেচনার দাবী রাখে। তিনি লিখেছেন "' গোড়ামী আর সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি একই সঙ্গে বেড়ে ওঠে এবং পরস্পরকে পুষ্ট করে।

দুটোরই মূলে রয়েছে ধর্ম শিক্ষা দানের অতিশয় ভ্রান্ত চিরায়ত প্রথা। শিশু বয়সে যখন ভালোমন্দ, সত্যাসত্য বিচার করার মত চিন্তা শক্তিই তৈরী হয়নি, তখনই আমরা সম্প্রদায় বিশেষের কতগুলি অবোধ্য শাস্ত্রবাক্য মুখস্ত করাই, কতগুলি অর্থহীন আচার অনুষ্ঠান অভ্যাস করাই। তার চেয়েও যেটা সাংঘাতিক, ভিন্ন মত ,আচার ও অনুষ্ঠানের প্রতি অতিশয় অবজ্ঞার ভাব আমরা সেই কাঁচা বয়স থেকেই ছেলে মেয়েদের মনে পাকা করিয়ে রাখি। সব দেশেই এটা কুশিক্ষা কিন্তু ভারতবর্ষের মত দেশে - যাকে আমরা বহু দূর দেশাগত মত ও পথের ত্রিবেনী সঙ্গম বলে গর্ববোধ করি, এ কুশিক্ষার অনিষ্টকারিতা ভয়াবহ আকার ধারন করে। আমার বিবেচনায় সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ধর্মমতের প্রতিঘাত থেকে শিশু মনকে সযত্নে রক্ষা করা দরকার।

ধর্মের সার্বজনীন ও মূল ভাবখানা (মানব প্রেম ও অনন্ত বিশ্বের প্রতি গভীর রহস্যবোধ) তারা অবশ্য গ্রহন করতে পারে শ্রেষ্ঠ শিল্প সাহিত্য সঙ্গীত থেকে, কিন্তু স্কুলে বা তার পূর্বে এমন কোন ধর্মমত বা আচার শেখানো উচিত নয় যা তাদের বুদ্ধির অগম্য বা যা তাদের মনে সেই বয়স থেকে সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির ভিত তৈরী করতে পারে। অবশ্য যদি ঘরে বা বাইরে কোন ধর্মকথা শুনে অথবা ধর্মাচার লক্ষ্য করে ছেলেমেয়েদের মনে যে যে বিষয়টি কৌতুহল জাগে তবে সে কৌতুহল নিবৃত্ত করাই ভালো, কিন্তু পিতামাতা বা শিক্ষকেরা যা বলেননি তা সম্প্রদায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে বলার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবেন। প্রাপ্তবয়সে অর্থাৎ স্কুল শেষ করে যখন ছাত্রছাত্রীরা যখন কলেজে প্রবেশ করবে তখনই ধর্মশিক্ষা দেয়ার উপযুক্ত সময়। তখন প্রধান প্রধান সব ধর্মেরই মূল কথা এবং সেই কথাগুলির মধ্যে ঐক্য ও অনৈক্য দুইই তাদের সামনে তুলে ধরা দরকার। আদিম বর্বরাবস্থা থেকে ধর্মভাব কোন পথে এগিয়ে গেছে এবং কোথায় বা অতি প্রাচীন কুসংস্কারে আটকে পড়ে আছে তা-ও বোঝানো উচিৎ।

কেউ কেউ হয়তো এখানে প্রশ্ন করবেন শৈশবেই যখন নানা প্রকার ঐচ্ছিক বিদ্যা শেখাতে আমাদের আপত্তি নেই তখন ধর্মশিক্ষা দানই বা ঐ বয়স থেকে আরম্ভ করবো না কেন? উত্তরে বলবো, ছোটদের শিক্ষার ব্যাপারে আমরা দুটি নীতি মেনে চলি- এমন কিছু শেখাই না যা তাদের বুদ্ধির গম্য নয় অথবা যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও গুরুতর মতভেদ রয়েছে। ধর্মশিক্ষার বেলা এই সর্বসম্মত নীতিদ্বয় লঙ্ঘন করার কোন কারণ দেখি না। গড, ঈশ্বর,ব্রক্ষ্ম, আল্লা ইত্যাদি শব্দ শুনলে আমাদের মনে কি ধারণা বা প্রত্যয় জন্মায়? ওল্ড টেষ্টামেন্ট যে ইয়েহোভার কথা বলছে তিনি এক সর্বশক্তিমান রাজাধিরাজ , যার বজ্রকঠিন বিধানে ন্যায় বিচার আছে কিন্তু করুনা বা ক্ষমার স্থান সংকুচিত; নিউ টেষ্টামেন্টে পাই অশেষ করুনাময় পিতাকে যিনি পাপী তাপীর দিকে স্নেহার্দ্র ক্ষমায় হাত বাড়িয়ে আছেন, উপনিষদে যে পরম একের কথা বলা হয়েছে তিনি সকল ভাবনা ও ধারণার অতীত নির্গুণ ও নিরুপাধিক অথবা ইশ্বর কি এক চিরদুর্ভেদ্য অনন্ত রহস্যেরই নাম? নাকি আমাদেরই মধ্যে অধরা সুন্দরের ভাবচ্ছবি? পাপপূণ্য কি জাগতিক কর্মফলপ্রসু, অথবা এক সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান বিচারপতির নিকট যথোপযুক্ত শাস্তি ও পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। এসব প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাত্মবিদ্যার শেষ্ঠ বিশারদরা একমত নন, এবং এর কিছুই ছোট ছেলে মেয়েদের বুদ্ধিগ্রাহ্য নয়। ধর্মের মধ্যে যা কিছু সত্য ও মহান তা গুহাহিত গহ্বরেষ্ট আজীবন সাধনা সাপেক্ষ।

যখন দেখি যে আমাদের শাস্ত্রনিষ্ঠ ও আচারবদ্ধ ধার্মিকেরা মনে করেন ধর্মশিক্ষা কেবল ধরতাই বুলি এবং চিরাচরিত আচার অভ্যাস করানোর ব্যাপার আর তা অল্প বয়সে বেশ সুস্পন্ন হতে পারে, তখন সত্য ধর্মের প্রতি তাদের এই গভীর অশ্রদ্ধা আমাকে অবাক করে। ""

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।