শিরদাঁড়া নেই, বহু শরীরেই নিজেদের মানাতে মানাতে.......
মতির মাথা খারাপ হয়ে গেছে-অন্তত বদির তাই ধারনা। ধারনার পিছনে কারণও আছে। 'ঢাকা শহরে কোন সুস্থ্য মানুষ থাকে? সব অসুস্থ্য মানুষের বাস এখানে' ঢাকা সর্ম্পকে এমন ঢালাও মন্তব্য করেই শুধু মতি ক্ষান্ত হয়নি। ঢাকা ছাড়ার তোড়জোড়ও শুরু করছে।
সে নাকি তার এলাকায় ফিরে যাবে।
যেয়ে ওখানে একটা কোচিং সেন্টার খুলবে। বলা বাহুল্য সে-ই কোচিং সেন্টারের পরিচালক। শয়ে শয়ে ছাত্রছাত্রী তার কোচিংয়ে পড়তে আসবে। সে হবে ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় শিক্ষক। যদিও প্রিয় শিক্ষক কিভাবে হতে হয় সে সমন্ধে কোন ধারনা তার আছে বলে মনে হয় না।
তবে সে হবে। না হলে তার পরবর্তি কর্মকান্ড সফল হবে না। শিক্ষক হওয়ার পর সে তার পৌরসভার কমিশনার পদে ভোটে দাঁড়াবে। প্রিয় শিক্ষক হওয়ার কারনে এবং শিক্ষকরা বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছে বলে (জলন্ত উদাহরণ-বাংলা ভাই, ডঃ গালিব) ছাত্রছাত্রীরা তাকে ভোট দেওয়ার জন্য তাদের বাবা-মা,মামা-খালু ,চাচা-ফুপা ,সহ সব আত্মীয়স্বজনকে চাপ দিবে। বাচ্চাদের কথা তারা ফেলতে পারবে না।
তার কমিশনার হওয়া ঠেকায় কে?
কমিশনার হওয়ার পর সে পৌরসভার চেয়্যারম্যান পদে দাঁড়াবে। এবং প্রথমবার ইচ্ছে করেই টাকা খেয়ে বসে পড়বে। দ্বিতীয়বার ঐ টাকা দিয়েই জোরে সোরে চেয়ারম্যানী ইলেকশন চালাবে। কিছুদিন চেয়ারম্যানী করার পর সে দাঁড়াবে এম পি ইলেকশনে। একবার এম পি হতে পারলে তাকে আর পায় কে?
তারপর নাটক, প্রহসন, ডিগবাজি, জার্সি বদল এবং অবশেষে মন্ত্রী।
ফুল মন্ত্রী হতে না পারলেও পাতি মন্ত্রী। এখন তো ফুল মন্ত্রীর চেয়ে পাতি মন্ত্রীদের দাপট বেশি। অবস্থাও রমরমা। আর একবার মন্ত্রী হতে পারলে তখন সে দেখবে প্রধানমন্ত্রী-টন্ত্রী বা ঐ গোছের কিছু একটা হওয়া যায় কিনা। তবে আপাতত এটুকু আশ্বাস সে বদিকে দিয়েছে যে চেয়ারম্যান হওয়া পর্যন্ত বদিকে সে ভুলবে না।
তবে তার পরের কথা সে জোর দিয়ে কিছু বলে এখন কথার ঋন খেলাপী হতে চাইছে না। কারণ এম পি মন্ত্রী হওয়ার পর যে কি হবে তা সে নিজেও জানে না। তখন হয়তো সে কাউকেও চিনতে পারবে না। নিজের জন্মদাতা পিতামাতাকেও নাও চিনতে পারে। কাজেই বদিকে সে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
মতির চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা খুব পরিষ্কার হলেও বদির আশাংখা মতির মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে। না হলে কোন সুস্থ্য মানুষ যার মাথায় সামান্য পরিণাম মগজ আছে সে কেন নিজেকে রাজনীতিতে জড়াতে চাইবে, তা সে বুঝে উঠতে পারে না। ভীমরতিতে না ধরলে কেউ রাজনীতিতে নামে? মতির নিশ্চয় ভীমরতিতে ধরেছে।
তো সে এক বিকালে বুদ্ধি করে মতিকে সাথে নিয়ে তার ডাক্তার বন্ধুর চেম্বারে যায়। এবং ডাক্তার বন্ধুকে আড়ালে ডেকে নিয়ে সব খুলে বলে।
ডাক্তার বন্ধু সব শুনে টুনে মতির সামনেই বলে ফেলে 'সে কোন পাগলের চিকিৎসা করে না। পাগলের চিকিৎসা করাতে হলে ওকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। ' বদি ভেবেছিল মতি এসব শুনে ক্ষেপে উঠে চেম্বারেই একটা যাচ্ছেনাতাই কান্ড করে বসবে। মতি কিছুই করে না। আসলে মতি এখন এসব কিছু শুনছে না।
সে আছে কিভাবে এম পি টেম পি হওয়া যায় এ ধান্ধায়। তাছাড়া সে ভেবেছে বদি তার নিজের জন্য ডাক্তারের কাছে এসেছে। মাথার গোলমালটা বোধ হয় বদির। বন্ধু কষ্ট পাবে ভেবে সে জেনেও এতদিন বলেনি। এখন বদি নিজে নিজেই সেটা আবিষ্কার করে ডাক্তার দেখাতে এসেছে ভেবে সে খুশী হয়।
বদির ট্রিটমেন্ট আরও আগে শুরু হওয়া উচিত ছিল বলে সে মনে করে। তবু বেটার লেট দ্যান নেভার।
ডাক্তার বন্ধুর চেম্বার থেকে বেরিয়ে ডাক্তারের দেয়া ঠিকানা মোতাবেক বদি খুঁজে খুঁজে সাইকিয়াট্রিস্টের চেম্বারে চলে আসে।
সাইকিয়াট্রিস্ট মতিকে চিৎ হয়ে কোচে শুয়ে পড়তে বলে। বদির চিকিৎসার জন্য তাকে কেন শুতে হবে মতি বুঝে উঠতে পারে না।
পাগলের চিকিৎসার এরকমই নিয়ম ভেবে এবং পাগলের ডাক্তাররাও পাগল হয় ভেবে সে আর ডাক্তারকে ঘাটায় না। কে জানে আবার মেরে টেরে বসে কিনা। পাগল ছাড়া কেউ পাগলের চিকিৎসা করতে পারে?
মতি গাইগুই না করে কোচে শুয়ে পড়ে। বেশ নরোম গদি পাতা। তার ঘুম ঘুম লাগতে থাকে।
তাতে ডাক্তার বড় আলো নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বেলেছেন। জ্বেলে মতির চোখের উপর একটা হারের মত কি যেন ধরে দোলাতে থাকেন। তাতে মতির ঘুম আরো চেপে আসতে থাকে। এরপর ডাক্তার একঘেয়ে একটানা নাকি সুরে কি সব আবোল তাবোল বকতে থাকলে মতি গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। একটু পরেই তার নাক ডাকার শব্দ শোনা যায়।
ডাক্তার নিজের ব্যর্থতায় রাগে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এসে বদিকে বলে 'যান। আপনার বন্ধুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাসায় নিয়ে যান। যত্তসব মগজহীন অপদার্থ। যার সম্মোহিত করে চিকিৎসা করব তার তো মগজ বলে একটা বস্তু থাকা চাই। ও বস্তুটি যে ওর নেই তা আপনি আগে বলবেন তো।
শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট। যান এখন বাড়ি নিয়ে ওকে ভালমত ঘুমাতে দিন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। ওর যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে ঘুমের অভাব। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা কখনও ঠিকমত ঘুমাতে পারেনা জানেন না? না ঘুমিয়েই তো দেশের এই অবস্থা।
উনারা যদি ভালমত ঘুমাতেন তাহলে দেশের অবস্থা এত সংগিন হতো না। '
ঘুমে ঢুলু ঢুলু মতিকে নিয়ে বদি বের হয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর এক মধ্যবয়স্কা ভদ্রমহিলা আসেন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে। তিনি ডাক্তারের ঘরে ঢুকতেই ডাক্তার তাকে কোন কথা বলবার সুযোগ না দিয়েই আধ ঘন্টা ধরে বক্তৃতা দিতে লাগলেন। অতি কষ্টে সুযোগ পাওয়ার পর ভদ্রমহিলা বললেন 'ডাক্তার সাহেব, আমাকে অতশত বোঝাচ্ছেন কেন? আমি এসেছি আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে। আমার স্বামী একজন রাজনীতিবিদ।
ডাক্তার বললেন 'ও। তার কি হয়েছে?
ভদ্রমহিলা বললেন 'তা আমি ঠিক ঠিক বলতে পারবো না। তবে রাজনীতিতে নামার পর থেকে তার বিশ্বাস তিনি একটি গন্ডার।
'বলেন কি? তা তিনি এখন কোথায়?
'তিনি বারান্দায় আছেন।
'তাকে নিয়ে আসুন তো ; দেখি ব্যাপারটা কি?
ভদ্রমহিলা বাইরে গিয়ে সঙ্গে নিয়ে এলেন একটা দশাসই গন্ডার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।