ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোটো সে তরী!
মাত্র ‘দ্য কাউন্টারফেইটার’ দেখলাম, গত বছর অস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার মুভি, অস্ট্রিয়ান। মুভিটার সাথে ‘শিন্ডলারস লিস্ট’ মুভিটার মিল আছে। দেখে মনে হল বর্তমান প্রেক্ষাপটে গাজা-ইসরাইল কনফ্লিক্টের কথা। আমার মনে হল ইহুদীদের মনস্তত্ত্বটা কিছুটা না বুঝলে এই মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধান সম্ভব না, এবং এই মনস্তত্ত্বের সাথে হলোকস্ট ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।
ইহুদীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে খুব ট্রমাটিক একটা অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে।
সময় এবং ইচ্ছার অভাবে গ্রাফিক, এলাবোরেট কোন বর্ননা দিতে পারছি না, কিন্তু দয়া করে যদি মুভিটা দেখেন কিছুটা বুঝবেন। এরপর স্বভাবতই তারা খুব ভয়ংকর রকমের ডেটারমাইন্ড হয়েছে ওরকম কিছু হতে না দেয়ার। দুঃখের ব্যাপার এই যে এরকম ডেটারমিনেশন তাদের ওভাররিয়েক্ট করায়। কিন্তু সেদিন নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম এ ব্যাপারে... গাজার যুদ্ধকে ইহুদীরা নিজেরাও পাগলামি মনে করে না তা না... হিব্রু একটা টার্মও আছে এটা নিয়ে... কিন্তু ওরা এটাকে কন্ট্রোলড, ক্যালকুলেটেড পাগলামি মনে করে। আমাদের একটাকে মারবি, তোদের হাজারটাকে মারবো ধরনের পাগলামি।
এই ওভাররিয়্যাকশনের একটা কারন হতে পারে হলোকস্টের সময় ওদের অভিজ্ঞতা। সেদিন কোন এক বাংলা চ্যানেলেও (আরটিভি মনে হয়) এটা নিয়ে একটা শো দেখাচ্ছিল। সেখানে এক ভেটেরান ফটোজার্নালিস্ট, যিনি কিনা ইরাক এবং আফগানিস্তান কাভার করেছেন, বলছিলেন, "ইহুদীদের এখন যে ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি, ওরা কি ১৪টা ইসরায়েলের মত এলাকা কিনেই নিতে পারে না? তার বদলে ওরা এত রিস্ক নিয়ে থাকছে কেন? এখানে তো ওদেরও কতগুলি ঐতিহাসিক ব্যাপার আছে। "
ইউরোপে শতাব্দীর পর শতাব্দী মার খেয়ে ইহুদীরা মনে হয় ওখানে থাকার সব ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছিল। ফিরে আসতে চেয়েছিল নিজেদের আদিভূমিতে।
অবশ্যই প্যালেস্টাইনের মুসলিমদের জন্য এটা আনফেয়ার, অবশ্যই, এবং আলটিমেটলি তাদের (ইউরোপীয়ানদের, বিশেষ করে এক্সিস শক্তিগুলোর) পে করা উচিত। কিন্তু প্যালেস্টাইনের মুসলিমরা যদি এটা বুঝতে পারতো ইহুদীরা হলোকস্টের সময় কি পাগলের মত, কি এবসার্ডলি ভয়ংকর, অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টিকারী একটা মহাপ্রয়ানযজ্ঞ এবং নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গেছে, তাহলে হয়তো তারা মিলেমিশে থাকার আরো চেষ্টা করতো, কেবল করূনার মধ্য থেকেই; এখানে আমি নিশ্চিত খুব বড় রকমের কিছু মিসকমিউনিকেশন ছিল। মুসলিম বিশ্বে এর আগে বসবাসরত ইহুদীদের তো এরকম হলোকস্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। আর মুসলিমরা তো অত নিষ্ঠুর জাতও না। লেবাননে খ্রীষ্টান-মুসলিম মিলে মিশে থাকে।
নাইজেরিয়ায় থাকে। বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম আছে। গ্র্যান্টেড, ঝগড়া-ঝাটি মারামারি হয়, কিন্তু সিসটেমেক্যালি নাৎসি স্টাইল জাতিগত পার্জের চেষ্টা কি করা হয়?
টপিকটা খুবই কন্ট্রোভার্শিয়াল, এবং এখানে আরো অনেক ফ্যাক্টর জড়িত, সুতরাং কম জেনে আর বেশি লিখতে চাই না। ইতিহাসে অনেক ভুল-ভ্রান্তি, অন্যায় অবিচার রয়ে গেছে। সব কিছুর তো আর সংশোধন সম্ভব না।
তার চেয়ে কি ক্ষমা করে দিয়ে মিলেমিশে থাকা যায় না? এ প্রশ্ন ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইনীদের কাছে। বিশেষ করে ইহুদীদের কাছেও - আপনারা যেটার মধ্য দিয়ে গেছেন, এরপর কি সমঝোতা খুব সুন্দর একটা উপায় হত না?
অথবা হয়তো আমি খুব বেশি ইউটোপিয়ান।
(বিঃদ্রঃ কি করতে কি হয়ে গেল, ভুলে নিচের প্রথম কমেন্টটা মুছে ফেলেছি। লেখক বলেছিলেন (নাম 'কুমিল্লার পোলা') যে ভাল লাগলো, তালমুদ পড়লে হয়তো আরো বুঝতাম। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।