ব্রাসবাসা বিল্ডিং থেকে পেছনের এক্জিট দিয়ে বের হতেই ৭ নং বাসের বাস স্টপ টা রাস্তার ওপারে চোখে পড়তে শান্তি লাগল মনে এইভেবে যে যাই হোক হাড়িয়ে যাইনি, বাড়ি ফেরার বাসটা কোথায় থামে সেটা খুজতে সময় নষ্ট হবে না।
পেডিসট্রিয়ানের সবুজ মানুষ সিগনাল দেখে রাস্তা পার হয়ে বাস স্টপের দিকে পা বাড়ালাম। কাছাকাছি পৌছতেই তিব্র পরিচিত গন্ধে প্রচন্ড ভয়ে গা ঝিমঝিম করতে লাগল। গন্ধের সোর্স খুজতে লাগলাম।
"ওয়ান ম্যন শো"- আমার চেনা একজন মানুষই ঐ গন্ধ নিয়ে দিন শুরু করত।
ভাল খারাপ যাই করত ঐ গন্ধ গায়ে নিয়ে।
আমার গা কাপছে ভয়ে, ঘৃণায়, রাগে, অসহায় অনুভুতি ঠিক যেমনটা আগে হতো..একই সাথে অজানা আকর্ষনে। খুজতে থাকলাম গন্ধের সোর্স।
বাস স্টপে বেশি মানুষ নেই। একজন চাইনিজ মহিলা, একজন ককেশিয়ান ৬০/৬৫ বছর বয়েসি ভদ্রলোক, একজন চাইনিজ ছেলে আর দুজন মালেয় মেয়ে।
সম্ভবত ককেশিয়ান ভদ্রলোকই হবেন গন্ধের সোর্স । কারন তার পার্সোনালিটি বলছে সেই এই গন্ধ মাখতে পারে। কাছে গিয়ে গন্ধ নিয়ে কনফার্ম হবার ইচ্ছাটা অনেক কষ্টে কনট্রোল করলাম।
আমার মাথা ঘুরে গা বমি বমি করতে থাকল গন্ধে। কাছে না গিয়ে শুকেও আমি ১০০% সিওর এই লোকই গন্ধের সোর্স. কারন ঐ একই ভাব, একই পার্সোনালিটি, একই ভংগি, এমন কি একই ধরনের পোশাক।
তাকাবার একই চাহনি। শুধু বয়সটাই মেলেনা।
আসাধারন স্মার্ট! একজন মানুষের আত্তা যেন আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে আরেক জন একই ধরনের মানুষের ভেতর শুধু বয়সটা বেশি সেই মানুষের। আমার সানগ্লাসের ভেতর দিয়ে টের পেলাম সেও আমাকে পর্যবেক্ষন করছে।
আমরা দুজনই জানি কেউ আমারা কাউকে চিনি না।
কিন্তু দুজনই এমান কাউকে জানি ঠিক আমাদেরই মতো, আমাদের অতিতে যারা আমাদের জীবনের অনেকটা জুরে ছিল এবং প্রভাব বিস্তার করে ছিল। সে প্রভাব ভাল বা মন্দ, ভয়ের বা ভাল লাগার, দুঃখ বা শুখের আলাদা করে আমরা বলতে পারব না কারন সেটা ছিল সব মিলিয়ে। আজ আছে শুধু ঘৃণা, ভয় আর আকর্ষন। অনুভুতিটা ঠিক এক্সপ্লেইন করা গেলনা।
আমি সিওর একই কথা ওর মনের ভেতর চলছে।
কারন ও আমার দিকে একই ভাবে তাকাচ্ছে। আমার সান গ্লাস থাকায় আমার মনটা সে পড়তে পারছেনা..হাহ হয়ত বা পারছে..যেমন সে আগেও পারত। সব জানত সে আমার....এমনকি আমার খিদে পেলে সে জানত আমার আগে।
মনে প্রানে চাইছিলাম সে যেন অন্য বাসে ওঠে ( সত্যিই কি তা চাইছিলাম?)। পর পর তিনটা বাস এলো বাস স্টপে।
আমার ৭ নং বাস টা সবার শেষে। সাবাই তাদের নিজ নিজ গন্তব্যর বাসে এগিয়ে গেল..শুধু আমরা তিন জন পরে রইলাম ৭ নং বাসের জন্য।
সে আমার আগে উঠল, আমি ওর পেছনে, ঠিক পেছনে...গন্ধের তিব্রতায় আমার সারা গা কাপছে। বাসে উঠে কার্ড ট্যাপ করে সামনের সিটে গিয়ে বসতেই দেখলাম সে আমার উল্টো দিকের সিটে, আমাকেই পর্যবেক্ষন করছে। ঠিক একই ভাবে তাকিয়ে যেমন সে তাকাত অনেক বছর আগে।
বার্ধক্য তাকে কাহিল করেছে এখানে। বুঝলাম যখন ও এই বয়েসে আসবে দেখতে ঠিক এমনই লাগবে। সেও হয়ত ভাবছে ২০ বছর আগে তার চেনা মেয়েটা ঠিক আমারই মত ছিল..আমারই মত ভংগি করে ঘার ঘুড়িয়ে তাকাত...। ভাবছে এত মিল কিকরে হয় দুজন মানুষের দুটো ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন বয়সে!!?
আমার মনে হলো আমি ত আর ১০টা সাধারন যাত্রির মত তার পাশে গিয়ে বসতে পারতাম, কিন্তু কেন পারলাম না? সেও ভাবছে একই কথা আমি জানি, আমি সত্যি জানি।
আমি আমার মাত্র কেনা ড্রাইভিং টেস্ট এক্জামের বই খুলে পরা শুরু করলাম, এটা আমি সব সময় করি ট্রাভেল টাইমটা কাজে লাগাবের জন্য।
হল্যান্ড ভিলেজে এসে সে বেল টিপলো বাস স্টপিং এর। বুঝলাম সে এখন নেমে যাবে। সে আমার দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল আমিও নামব কিনা। আমি মন দিলাম আমার বইএ। বাস বাসস্টপে এপ্রোচ করতেই সে উঠে দাড়াল আর অমনি বার্ধক্যের চাপে তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে গিয়ে সামলে নিল, আমার চোখ আর হাত তৈরি হয়ে গিয়েছিল ওকে ধরবার জন্য যদি সে পরে যেত।
সে ধন্যবাদের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে হেটে নেমে গেল। হাড়িয়ে গেল শত শত মানুষের ভিরে। আমি ঘুরেও তাকালাম না ওর চলে যাওয়া দেখতে।
আমি বসে রইলাম হঠাৎ পাওয়া গন্ধের অতিতের কিছু কথা নিয়ে...। মন দিলাম আমারা ড্রাইভিং বুকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।