আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিল-গপ্পো> বৃত্তে প্রবেশ নিষেধ!

শঙ্খপাপ আমার

বর্ণা আমার কাছ থেকে মাত্র হাত দুয়েক দূরে বসে। ইচ্ছে করলে তাকে আমি ছুঁয়ে দিতে পারি। ইচ্ছে করলে আমি স্পর্শিত হতে পারি। বর্ণা তাকিয়ে আছে বাইরে। তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে; মেঘ-বাতাস ধরনের বৃষ্টি।

বিশেষণটা আমার বন্ধু অর্ণবের দেয়া। অর্থাৎ, যে বৃষ্টিতে মেঘ আর বাতাসের আধিক্যতা থাকে ঢের। কিন্তু আজকের বৃষ্টি আত্নভোলা, অঝরে ঝরছে। বর্ণা আজ শাড়ি পরে আছে। কিশোরীদের শাড়ি পরলে কেমন বড় মনে হয়, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল উচ্ছ্বাসের মাত্রার সাথে তাল মিলেয়ে তাদেরকে দূরের মনে হয়।

জানা তথ্য- দিগন্ত বরাবরই অস্পর্শের, কেবলি অসীম। বর্ণার শাড়িটা দিয়েছে তার বাগদত্ত শরীফ খান। গেল পরশু বর্ণার জীবন শ্রীঘরের হাতকড়া পরার অনুষ্ঠান হয়ে গেল। যেহেতু শরীফ খান উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবাস জীবনে উপনিত হচ্ছেন, সেহেতু বর্ণার পরবাস জীবনের চাবিটা বগল দাবা করে নিয়েছেন। চাবি হাতের কাছে থাকার মাঝেই অন্যরকম বীরত্ব।

মাঝরাতে মাতাল হয়েও ঘরে প্রবেশ করা যায় লোহাংশটার বদৌলতে। আমার সাথে আজ দেখা হচ্ছে সপ্তাহ খানেক পরে। আমি গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে সিলেটে; ফূর্তি করতে। আজকাল কেমন শরীরটা কেমন যেন হাওয়ায় চালানো নৌকার মত লাগে। পালে হাওয়া লাগে তো আমার শহর বদলায়।

আর বদলায় নাগরিক সীমাবদ্ধতার কাব্য-সুর। ঘরের দরজা বন্ধ করা। ঘরের জানালাটা আধ-খোলা। থেকে থেকে বৃষ্টির ছাঁট আসছে, আমি সাহস করে বন্ধ করে দিতে পারি। তবে বাইরের গুঁমোট পরিবেশ মনে হয় ক্রমে আমাদের নীরব কামরায় আবর্তিত হচ্ছে, সুতারাং বীরপুরুষ হওয়ার সাধ কপুরের ন্যায় উবে যাচ্ছে; বর্ণার নীরব চোখ তুলে তাকানোর মাঝে শুধু ভালবাসা থাকে না- অনুযোগও থাকে।

"আমি কি বসে থাকব। " আমি কথা বলার জন্যই কথাটা বললাম। সিগারেটের তীব্র তৃষ্ণা জাগছে। সিগারেটের তৃষ্ণা দূরীকরণের একটি উপাদেয় পন্থা হল হড়বড় করে দ্রুত লয়ে কথা বলা। কিন্তু, বর্ণার আশপাশের ইথারে আমার শব্দের অনুপ্রবেশ নিষেধ এখন; আমি কথা বলতে পারছি না শব্দ-গতিতে! বর্ণা মিনিট দুয়েক চুপটি বসে রইল।

আমিও। আমি অবশ্য মনে মনে একটা সুক্ষ্ম খেলা খেলছি; দেখি, কে আগে কথা বলে। "ইচ্ছে হলে চলে যেত পার। আমার বসে থাকার সময় এখন। " বর্ণা হেরে গেল! "আচ্ছা, বেশ।

বসেই থাকি। আজ সারাদিন, সারারাত বসে থাকব। কি বল?" বর্ণা চোখ তুলে থাকালে দেখতে পেত আমার ঠোঁটে ক্রু'র হাসি, গড়িয়ে পড়ছে। "আমি পর হয়ে গেলাম। তুমি নিশ্চয় শুনেছ।

" "হুঁ। " "তুমি আমাকে বিয়ে করবে?" বর্ণা শুধাল। বিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে আমি নিয়ম করে ভাবিনি। নিময় করে আমি খাই, দাই, ফূর্তি করি, গান শুনি, কবিতা লিখি। অথচ নিময় করে বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভাবিনি! আমি নিরুত্তর থাকলাম।

------------------------------------------ পনের মিনিট পরে বর্ণা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। স্পষ্ট ইশারা। আমি সেরকম অধম না যে ঈঙ্গিত বুঝতে কষ্ট হবে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। দরজাটা খুলে দেয়ার সাথে সাথে গরম বায়ুপ্রবাহ হামলা চালাল সারা কামরায়।

জানালা দিয়ে আসা ছাঁট ছাঁট বৃষ্টি এমুখি বাতাসে প্রবেশ করতে পারছে না। অথচ তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে ওপাশ থেকে। আমি অনিমেষ চেয়ে থাকলাম। এরকম দৃশ্য আমি আগে দেখিনি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।