ডাঃ জাকির নাইক ও
তাঁর দা'ওয়াতী কার্যক্রম
ডাঃ জাকির আব্দুল করীম নাইক ইসলাম ও তুলনামুলক ধর্মতত্বের উপর বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাগ্মী ও গবেষক৷ একজন অনন্যসাধারণ প্রতিভাধর 'দায়ী ইলাল্লাহ' হিসাবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন৷ ভারতীয় বংশদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক শায়খ আহমাদ দীদাতের (১৯১৮-২০০৫) পর ডাঃ জাকির নায়িকও বিভিন্ন ধর্ম ও বস্তুগত বিজ্ঞানের সাথে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করে বর্তমান যুগে মুসলিম সমাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন৷ অতি অল্প সময়ে তিনি 'পীস টিভি'র মত আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট প্রচারমাধ্যম ও একদল নিষ্ঠাবান আলিম ও চিন্তাবীদের সমন্বয়ে ভারতের বুকে যে ইসলামী দা'ওয়াহ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন তা এককথায় অভূতপুর্ব৷ বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে আলোচ্য নিবন্ধে এই ব্যক্তিত্বের পরিচিতি ও তাঁর দা'ওয়াহ কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
১৮ অক্টোবর, ১৯৬৫ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে এক কনকানি মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পিতা ছিলেন একজন মেডিকেল ডাক্তার৷ মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা ও কিষাণচাঁদ কলেজে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের পর টপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন৷ ১৯৯১ সালে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম,বি,বি,এস ডিগ্রী লাভ করে ডাক্তার হিসাবে কর্ণাটকে কর্মজীবন শুরু করেন৷ ছাত্রজীবনে তিনি বিখ্যাত শৈল্যবিদ ক্রিস্ট বার্নাডের মত সার্জন হবার স্বপ্ন দেখতেন৷ শৈশব থেকে তিনি তোতলামিতে (ংঃধসসবত্রহম) আক্রান্ত থাকায় মানুষের সামনে দাড়ানোর কোন পরিকল্পনা তাঁর ছিল না৷ পরবতর্ীকালে যখন থেকে বক্তব্য দিতে আরম্ভ করলেন তাঁর মুখের জড়তা দিনে দিনে কেটে যায়৷ ১৯৮৭ সালে ২২ বছর বয়সে একটি কনফারেন্সে তত্কালীন শ্রেষ্ঠ তুলনামূলক ধর্মতাতি্বক মরহুম আহমাদ দীদাতের সাথে তাঁর সাক্ষাত্ হলে তিনি তাঁর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবান্বিত হন৷ পরবর্তীতে আল্লাহ তা'আলার অশেষ রহমতে তাঁর মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান লাভের প্রবল স্পৃহা জাগ্রত হয়৷ অতঃপর তিনি পবিত্র কুরআনসহ বর্তমান বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মের পবিত্র গ্রন্থসমূহ যেমন- পবিত্র কুরআন, খৃষ্ঠধর্মের কয়েক প্রকার বাইবেল, ইয়াহুদী ধর্মের তালমূদ, তাওরাত, হিন্দুধর্মের মহাভারত, বেদ, উপনিষদ, ভগবতগীতাসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থসমূহ গভীর মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন এবং কয়েক বছরের মধ্যেই সেগুলো সম্পুর্ণ আয়ত্ব করে ফেলেন৷ অতঃপর ১৯৯৫ সাল থেকে একজন ধর্মপ্রচারক হিসাবে বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য প্রদান করতে শুরু করেন৷ ২০০৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, সৌদীআরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহারাইন, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মৌরিশাস, গায়ানা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশে ১০০০-এরও বেশী বক্তব্য প্রদান করেন৷ ১৫০টিরও বেশী দেশের টিভি চ্যানেলে তাঁর বক্তব্যসমূহ প্রচারিত হয়ে থাকে৷
তিনি বিভিন্ন ধর্মের প্রখ্যাত পন্ডিতগণের সাথে বিতর্ক অনুষ্ঠানেও অংশ নেন৷ ইতিমধ্যে তিনি শতাধিক বিতর্ক অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন৷ ২০০০ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে প্রখ্যাত খৃষ্ঠান পণ্ডিত ড. উইলিয়াম ক্যাম্বেলের সাথে 'বিজ্ঞানের আলোকে পবিত্র কুরআন ও বাইবেল' বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান খৃস্টান বিশ্বেও আলোড়ন সৃষ্টি করে৷
১৯৯১ সালে তিনি ভারতের মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ওংষধসরপ জবংবধত্পয ঋড়ঁহফধঃরড়হ (ওজঋ)৷ এই ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র বর্তমানে সারাবিশ্বে ইসলামের প্রচার, প্রসার, মুসলমানদের মাঝে আত্বসচেতনতা সৃষ্টি এবং ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণাসমূহ নিরসনের লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ এ প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের মাঝে সঠিক জ্ঞানসম্পন্ন দা'য়ী সৃষ্টি এবং শিশুদেরকে অংকুর থেকে ত্বাকওয়াশীল ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে সুশিক্ষিত করার লক্ষ্যে পৃথক পৃথক শাখাও রয়েছে৷ এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ইসলামী গ্রন্থাবলীসহ বিশ্বের অধিকাংশ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থাবলীর এক বিশাল লাইব্রেরী গড়ে তোলা হয়েছে৷ বিভিন্ন ধর্মের উপর তাঁর প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহই সবচেয়ে সমৃদ্ধ৷
২০০৬ সালের ২১ জানুয়ারী এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ চবধপব ঞঠ নামে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী টিভি চ্যানেল চালু করে৷ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে দক্ষিণ আমেরিকা ব্যাতিত আমেরিকা ও কানাডাসহ বহুদেশে সমপ্রচার শুরু হয়৷ বর্তমানে এই চ্যানেল ১২৫টিরও বেশী দেশে সরাসরি সমপ্রচারিত হচ্ছে৷ এর দর্শক ৭৫ মিলিয়নেরও বেশী৷ 'ঝড়ষঁঃরড়হ ভড়ত্ যঁসধহরঃু' শ্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই ব্যাপকভিত্তিক টিভি চ্যানেলটিকে পবিত্র কুরআন ও হাদীছের প্রামাণিক শিক্ষা অনুসারে ইসলামী আক্বীদা ও নীতি-বিধান প্রচার এবং বিশ্বমিডিয়ায় ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারিত ভূলধারণাগুলোর জবাবদানের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্রে পরিণত করতে প্রতিষ্ঠানটি দৃঢ় প্রত্যয়ী৷ ইতিমধ্যে এর কার্যক্রম সারাবিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে৷
এই টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন ডা. জাকির নাইকসহ বিভিন্ন দেশের অর্ধশতাধিক খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবীদগণ ইসলামের বিশ্বজনীন আদর্শকে পৃথিবীবাসীর সামনে পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন৷ একদল নও-মুসলিম ব্যক্তিত্ব এর বৈচিত্র বৃদ্ধি করেছেন৷ এখানে নিয়মিত যাদের বক্তব্য প্রচারিত হয় তারা হলেন- শায়খ আহমাদ দীদাত (দক্ষিণ আফ্রিকা) , আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস (জ্যামাইকা), ইসরার আহমাদ (পাকিস্তান), আব্দুর রহীম গ্রীন (তান্জানিয়া), আব্দুল হাকীম কুইক (কানাডা) , হুসাইন ইয়ে (মালয়েশিয়া), ইউসুফ এস্টেস (যুক্তরাষ্ট্র), ডঃ জামাল বাদাভী (কানাডা),শাবি্বর আলী (কানাডা) , ড.মামদূহ মুহাম্মাদ (সৌদি আরব) , জাফর ইদরীস (সুদান), ইউসুফ ইসলাম (ইংল্যান্ড) শায়খ ফযজুর রহমান (ভারত), আব্দুল করীম পারেখ (ভারত), ডাঃ শুআইব সাঈদ (ভারত) প্রমুখ৷
এছাড়া শিশু ও মহিলাদের জন্যও বিশেষ প্রগাম সম্প্রচারিত হয়৷ এর প্রায় ৭৫ ভাগ প্রোগ্রাম ইংরেজিতে এবং বাকী প্রোগ্রামগুলো উদর্ূ ও হিন্দীতে সমপ্রচারিত হয়৷
২৪ ঘন্টা সমপ্রচারিত মুম্বাই ভিত্তিক এই টিভি চ্যানেলের অন্ততঃ ৫০ ভাগ সময় তুলনামূলক ধর্মতত্ব তথা ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্ম, ইসলাম ও হিন্দুধর্ম, ইসলাম ও ইহুদীধর্ম, ইসলাম ও শিখ ধর্ম ও অনুরূপ বিষয়বস্তু নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করা হয়৷ এছাড়া ইসলাম ও কুরআন, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়সহ শরঈ আহকামসমূহ যেমন সালাত, ছিয়াম ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়৷ এ সমস্ত আলোচনার সবগুলোই পাবলিক লেকচার তথা অডিটোরিয়ামে উপস্থিত জনসমাবেশ থেকে প্রচারিত হয়৷ মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে জনগণ এই সমাবেশগুলোতে গভীর আগ্রহের সাথে উপস্থিত হচ্ছে৷ বিতর্ক, সাক্ষাত্কার, ঐতিহাসিক ফিচার ইত্যাদি প্রগ্রাম মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলকে আকর্ষণ করছে৷ জাকির নায়িক প্রায়ই চ্যানেলটিকে \"বফঁঃধরহসবহঃ পযধহহবষ\" অথর্াত্ 'শিক্ষাবিনোদন চ্যানেল' বলে আখায়িত করেন৷
এ প্রতিষ্ঠানটি মুসলমানদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল সমপ্রচারের উদ্দ্যোগও গ্রহণ করেছে৷
ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্বের উপর বিশ্ববিখ্যাত বক্তা শায়খ আহমাদ দীদাত ১৯৯৪ সালে জাকির নাইককে \"উববফধঃ ঢ়ষঁং\" উপাধিতে ভূষিত করেন৷ দা'ওয়াতী ময়দানে অসাধারণ সফলতা আর্জনের জন্য তাঁকে ২০০০ সালে একটি স্মারক প্রদান করেন যেখানে তাঁর খোদাইকৃত বক্তব্য ছিল- অর্থাত্ হে বত্স! চার বছরে তুমি যা করেছ, তা করতে আমার চলি্লশ বছর ব্যয় হয়েছে- আলহামদুলিল্লাহ৷
জাকির নায়িকের দাওয়াতী কার্যক্রমের নীতি ও ধারাসমূহ ঃ
ডাঃ জাকির নাইক পেশায় একজন ডাক্তার হওয়া সত্বেও ইসলাম সম্পর্কে তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য, গবেষণা লব্ধ ব্যাখ্যা ও বক্তব্যের সাথে সাথে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমুহের আশ্চর্যজনক উপস্থাপনায় যে অসাধারণ মেধা, ধীশক্তির পরিচয় রেখে চলেছেন তা এক বিরল দৃষ্টান্ত৷ তিনি পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ সমূহের আলোকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম ও এর বিধি-বিধান সমূহের যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের চিন্তার জগতে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছেন৷ তিনি ও তাঁর সাথীদের দাওয়াতী কার্যক্রমের ধারা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচিত হলো-
১- শিরক থেকে সতকর্ীকরণঃ
ডা. জাকির নাইকের বক্তব্যসমূহের মৌলিক ধারা হ'ল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্ববাসীকে একেশ্বরবাদী বিশ্বাসের দিকে আহ্বান এবং শিরক থেকে সতর্কীকরণ৷ তিনি প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি পেশ করে এ কথা প্রমান করতে চেয়েছেন যে, অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থই আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসাবে আখ্যায়িত করেছে এবং সাথে সাথে তাঁর সৃষ্টির ইবাদতকে নিষেধ করেছে৷ বিভিন্ন ধর্মের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে সাদৃশ্যগুলো যেমন- আল্লাহর একত্ববাদ, শিরক পরিত্যাগকরণ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখের মাধ্যমে তিনি ইসলাম সম্পর্কে সমন্বয়ী সিদ্ধান্তে উপনীত আহবান জানান৷ এজন্য তিনি প্রত্যেক বক্তব্যে সাধারণতঃ এ আয়াতটি উদ্ধৃত করেন-
অর্থাত্- 'হে আহলে কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে এস যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাবস্ত করব না এবং আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাবো না৷ তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও স্বাক্ষী থাক যে আমরা মুসলমান৷'
তুলনামূলক আলোচনায় তিনি নিজের উদ্দেশ্য থেকে বিস্মৃত হননা৷ নিজ লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে এবং সচেতনভাবে নিজের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে তিনি সফলভাবে দা'ওয়াতী ময়দানে এগিয়ে চলেছেন৷
২-ইসলামের বিরুদ্ধে সৃষ্ট সংশয় দুরীকরণঃ
অমুসলিম সমাজে প্রচলিত এবং বিশ্ব মিডিয়ায় ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে প্রচারিত সংশয়-বিভ্রান্তি দুর করার জন্য তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান একটি মাইলফলকের মত কাজ করে যাচ্ছে৷ ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, ইসলাম ও জঙ্গীবাদ, মুসলিম ভ্রাতৃত্ব, ইসলাম ও নারী, শরঈ আইন ও বিধান, ইসলামিক অর্থনীতি, ইসলাম ও গণতন্ত্র, ইত্যাদি বিষয়ে তিনি নিয়মিত আলোচনা রাখেন৷ বক্তব্য শেষে আকর্ষনীয় প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন৷ প্রগ্রামগুলোর শিরোনাম 'ঞত্ঁঃয ঊীঢ়ড়ংবফ', \'উধত্ব ঃড় অংশ\', \'খবঃ্থং অংশ উত্. তধশরত্\', \'ওুযধত্-ঊ-ঐধয়\', \'চবধপব গরংংরষব\', \'ঋরত্ব ড়ভ ঋধরঃয\', \'ঈত্ড়ংংভরত্ব\' ইত্যাদি এর ধরণ সমপর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়৷ এসব ক্ষেত্রে যে দূর্দান্ত কর্মনিন্ঠা, বিচক্ষণতা. অনর্্তদৃষ্টি, আত্মবিশ্বাস, সাহসিকতা প্রয়োজন জাকির নায়িক তা সম্যকভাবে লালন করে চলেছেন৷ পবিত্র কুরআন ও হাদীছের সাথে বিজ্ঞান ও যুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন বিভ্রান্তির সাবলীল জবাব দেন৷ তিনি যুক্তির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন এ কারণে যে, অমুসলিম ও সেক্যুলার মুসলমানরা ইসলামী বিধিবিধানকে অযৌক্তিক বিচার করে ইসলামের ব্যাপারে ভূল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে৷ সেক্ষেত্রে তাঁর যুক্তিমূলক আলোচনা সকল ধর্ম ও শ্রেণীর জনগণের বিভ্রান্তি নিরসনের উপযোগী৷
৩- মুসলিম জাতিকে এক পতাকাতলে একত্র হওয়ার আহবানঃ
ডা. জাকির নাইক ও তাঁর প্রতিষ্ঠান বক্তব্য, লিখনী ও ফত্ওয়া বিভাগের মাধ্যমে সবসময় গোটা মুসলিম জাতিকে একক প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে থাকেন৷ তিনি চার মাযহাবের ইমামগণ সম্পর্কে বলেন, ইমামগণ সকলেই ইসলামের খিদমতে এক বিরাট অবদান রেখে গেছেন৷ তাঁদের বিপুল জ্ঞানবত্তা ও দ্বীনের খাতিরে তাঁদের প্রাণান্ত পরিশ্রমের জন্য তাঁরা মুসলিম উম্মাহের নিকট শ্রদ্ধাস্পদ৷ আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি এবং মহান আল্লাহর নিকটে তাঁদের জন্য পুরষ্কার কামনা করি৷ কিন্তু এটা কখনো সংগত নয় যে, তাঁদের নামে সৃষ্ট চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাবের অনুসরণ করতেই হবে৷ পবিত্র কুরআন ও হাদীছের নিরিখে এটি মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়৷ মহামতি ইমামগণ সকলেই বলে গেছেন, যদি তাঁদের প্রদত্ত কোন ফত্ওয়া বা সিদ্ধান্ত পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিরোধী হয় তবে তাঁদের ফত্ওয়া অবশ্যই পরিত্যাজ্য হবে৷ সুতরাং সর্ববস্থায় রাসূলের সুন্নাতকে অগ্রাধিকার দেওয়াই মুসলিম জাতির জন্য অপরিহার্য যদিও তা ইমামগণের সিদ্ধান্তের বিপরীত হয়৷
তিনি রসিকতা করে বলেন, আমি একজন হানাফী, একজন মালেকী, একজন শাফেঈ, একজন হাম্বলীর চেয়ে ইমামগণের অধিকতর একনিষ্ঠ অনুসারী কেননা তাঁদের নির্দেশ অনুসারে আমি তাঁদের যে সমস্ত ফত্ওয়া সহীহ সুন্নাহের বিপরীত তা পরিত্যাগ করেছি৷
তিনি বলেন, বিশেষ পরিচিতি প্রতিপাদ্যের জন্য এ জাতীয় লেবেলবন্দী হওয়াকে আমি সমালোচনা করব না তবে সেই লেবেলে নিজেকে পরিচিত করাই সর্বোত্তম যা আল্লাহ রাব্বুল আমীন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন অর্থাত্-'মুসলিম'৷ সুতরাং যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে, আপনি কে? তবে বলা উচিত্ আমি মুসলিম৷ -অর্থাত্ 'স্বাক্ষী থাক যে আমরা মুসলমান'৷ আর যারা নিজেদের মুসলিম দাবী করে অথচ কুরআন ও হাদীছ অনুযায়ী কর্মকান্ড পরিচালনা করে না তাদেরকে বলা উচিত্ 'মৌখিক মুসলমান' (খরঢ় ংবত্ারপব গঁংষরস) যেমন আল্লাহ বলেন- অথাত্ 'হে রাসূল, তাদের জন্য দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে যেয়ে কুফরে নিপতীত হয়; যারা মুখে বলে, আমরা মুসলমান, অথচ তাদের অন্তর মুসলমান নয়'৷
এভাবে পৃথিবীর সকল মুসলমানের উচিত্ কেবলমাত্র পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করা এবং এটা নিশ্চিত করা যে তারা পরস্পর বিভক্ত নয়৷ এটাই মুসলিম জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একমাত্র পথ৷ আল্লাহ বলেন, অর্থাত্ 'হে ইমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের৷ তারপর তোমরা যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পন কর- যিদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক৷ আর এটাই কল্যাণকর ও পরিণতি দিক থেকে উত্তম'৷
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন, - অর্থাত্ আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না৷
সুতরাং আল্লাহই ভাল জানেন, যদি প্রত্যেক মুসলমান অর্থ অনুধাবনসহ কুরআন পড়ত এবং ছহীহ হাদীছের যথাযথ অনুসরণ করত তবে আজ মুসলমানদের মাঝে যাবতীয় বিভ্রান্তি ও বিভক্তি দূর হয়ে যেত৷ সেদিন হয়তো এক ও একক মুসলিম উম্মাহ হিসাবে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারতাম৷
৪- পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণঃ
তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাতের অনুসরণ করার জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন৷ তিনি বলেন, একজন সত্যিকারের মুসলিমের উচিত্ কেবলমাত্র কুরআন ও হাদীছের অনুসরণ করা৷ মহামতি ইমামগণের কিংবা ওলামাযে কেরামের বক্তব্য বা সিদ্ধান্ত অনুসরণযোগ্য তবে যে পর্যন্ত তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপর ভিত্তিশীল হবে৷ যদি তাদের সিদ্ধান্ত কুরআন ও সুন্নাহের বিরোধী হয় তবে অবশ্যই তা পরিত্যাজ্য৷ তাই মাযহাবী দৃষ্টিকোণে যদি একজন মুসলমানকে কোন মাযহাব অনুসরণ করতে হয় তবে সেটা হতে হবে একমাত্র নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাযহাব৷ যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
অর্থাত্-'আমি এবং আমার সাহাবীরা যে নীতির উপর রয়েছি'৷
এই চিরন্তন নীতির প্রতি দৃঢ়তা সালাফে সালেহীনের আক্বীদার উপর তাঁর বিশ্বস্ততার স্বাক্ষর বহন করে; অবশ্য তিনি নিজেকে 'সালাফী' আখ্যায়িত করাকে অপছন্দ করেছেন৷
এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলামী আক্বীদাগত বিষয়ে তাঁর কিছু বক্তব্য আহলেসুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা বহির্ভূত হয়েছে৷ যদিও সচেতনভাবে সেটা বলেছেন বলে মনে হয় না কেননা যুক্তির অবতারণা করতে যেয়ে এরূপ অসতর্কতাবশতঃ ভূল হওয়া অসম্ভব নয়৷ তাছাড়া তিনি মূলগতভাবে যেহেতু তিনি আলিম নন এজন্য আক্বীদা ও দ্বীনী বিষয়ে কিছু ভূলভ্রান্তি তাঁর হতে পারে৷ এ ব্যাপারে তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন৷ সুতরাং আমাদের উচিত্ হবে তাঁকে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো৷
৫- পূর্ণ রেফারেন্সসহ বক্তব্য উপস্থাপনাঃ
তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হ'ল পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াত এবং প্রতিটি হাদীছ উল্লেখ করার সময় তিনি অপরিহার্যভাবে মূলসূত্র উল্লেখ করেন৷ হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপনে তিনি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন৷ এজন্য সবসময় তিনি 'অঁঃযবহঃরপ ঐধফরঃয' বাক্যটি উল্লেখ করেন৷ সবচেয়ে বিস্ময়কর যে, বক্তব্যকালীন সময় তিনি একাধারে প্রত্যেকটি আয়াত ও হাদীছ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতিসমূহ মূলসূত্র থেকে ক্রমিক নম্বর, এমনকি পৃষ্ঠা ও লাইন নম্বরসহ জড়তাহীনভাবে উল্লেখ করে যান কোন প্রকার লিখিত নোট ছাড়াই৷ যেন সকল ধর্মগ্রন্থই তাঁর মস্তিস্কে সংরক্ষিত৷ তাঁর এই অবিশ্বাস্য ধী-শক্তি ও উপস্থাপনা কৌশল বিভিন্ন ধর্মের বড় বড় পণ্ডিতদেরকেও হতবাক করেছে৷ এভাবে তিনি কুরআন ও হাদীছ উপস্থাপনায় বিশুদ্ধতাকে অগ্রাধিকার প্রদান ও পূর্ণাঙ্গ দলীলসহ প্রাঞ্জল বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে অত্যন্ত দ্বায়িত্বশীলভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন৷
৬- সাহসিকতাঃ
সদাহাস্য, রসিকতাসম্পন্ন, নিরহংকার, সাধাসিধে, নিরীহদর্শন এই ব্যাক্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো হক্ব প্রচারে দ্বীধাহীন সাবলীলতা ও দ্বায়িত্বপূর্ণ সাহসিকতা৷ হক্ব প্রচারে তিনি যে কতটা নির্দ্বিধ তার প্রমাণ মেলে গত ২ ডিসেম্বর'২০০৭ তিনি এক পাবলিক লেকচারে এক অমুসলিম দর্শকের প্রশ্নের জওয়াবে তিনি ইয়াযিদ বিন মুআবিয়া সম্পর্কে বলতে যেয়ে 'রাযিয়াল্লাহ' উচ্চারণ করেন এবং 'আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতে'র মত অনুযায়ী কারবালার ঘটনায় তাঁকে দোষী না করে বরং এ ঘটনাকে রাজনৈতিক দূর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেন৷ বহু মতবাদ, বিশেষত শিয়া মতবাদদুষ্ট এলাকায় জাকির নায়িকের এ স্পর্শকাতর মতপ্রকাশ খুব একটা সহজ ছিল না৷ শিয়া ও শিয়া মতবাদাচ্ছন্ন মুসলমানরা তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ শুরু করলে শান্তভাবে তিনি পরিস্থিতি মুকাবিলা করেন৷ তিনি বিভিন্ন আধুনিক জাহেলী মতবাদ নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন মুসলিমবিশ্বের কর্মকান্ড ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন সংশয়হীন চিত্তে৷ তিনি আন্তধর্ম সংলাপে এ কথা সুস্পষ্ট করতে পিছপা হননা যে, ধমর্ীয় সহিঞুতা ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ তাই বলে এর অর্থ এই নয়, অন্য ধর্মকে সত্য বা গ্রহণযোগ্য মনে করতে হবে৷ তিনি মার্কিন সম্রাজ্যবাদের একজন দ্ব্যর্থহীন সমালোচক৷ তিনি মুসলমানদেরকে ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রা ব্যাবহার এবং ডলার-প্রচলিত ব্যাংকে টাকা জমাদান বা লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ টুইন টাওয়ারের ঘটনার পশ্চাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ড্িব্লউ. বুশেরই হাত রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন৷ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য তিনি বুশকে পয়লা নম্বর সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেন৷
৭. স্বতস্ফূর্তভাবে দর্শকদের প্রশ্নের জবাবদানঃ
প্রচলিত সেমিনার বা কনফারেন্স পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে শ্রোতাদের খুব কাছাকাছি হওয়ার জন্য তিনি বক্তব্যের মঞ্চে ডায়াসবিহীনভাবে উপস্থিত হন৷ তাঁর প্রতিটি বক্তব্য শেষে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে যেখানে দর্শকরা সরাসরি মাইকের মাধ্যমে তাঁকে বিবিধ বিষয়ে প্রশ্ন করে৷ আকর্ষণীয় এ পর্বটি মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য খুব উপকারী৷ তিনি সহজ ভাষায় বিভিন্ন উদাহরণ, উদ্ধৃতি দিয়ে সুক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ও যুক্তিসহকারে উত্তর প্রদান করেন৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষকসহ উচ্চ পদস্থ আমলা, কুটনৈতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও এসব অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দেন৷ যখন-তখন কুরআন, হাদীছ ও বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ থেকে পরিপূর্ণ সূত্রসহ উদ্ধৃতি পেশ করায় তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত৷ এছাড়া অনলাইনে তাঁর প্রতিষ্ঠান আইআরএফ-এর পক্ষ সার্বক্ষণিক যে কোন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর দেওয়া হয়৷
৮-আন্তঃধর্ম বিতর্কে অংশগ্রহণঃ
চিরন্তন সত্যের বহিঃপ্রকাশের ব্যাপক ও কার্যকরী মাধ্যম হিসাবে ডাঃ জাকির নায়িক বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের পন্ডিতদের সাথে আন্তঃধর্ম বিতর্কে অংশগ্রহণ করে থাকেন৷ ২০০০ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে আমেরিকান ডাঃ উইলিয়াম এফ ক্যাম্পবেলের সাথে জাকির নায়িক \"ঞযব ছঁত্ধহ ্ ঃযব ইরনষব রহ ঃযব খরমযঃ ড়ভ গড়ফবত্হ ঝপরবহপব\" শীর্ষক এক উন্মুক্ত বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলভাবে তাঁর চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করেন৷ ২০০৬ সালে তিনি ভারতের ব্যাঙ্গালোরে প্রখ্যাত হিন্দু সাধক শ্রী শ্রী রবীশংকরের সাথে 'ঞযব ঈড়হপবঢ়ঃ ড়ভ এড়ফ রহ ঐরহফঁরংস ধহফ ওংষধস , রহ ঃযব ষরমযঃ ড়ভ ংধপত্বফ ংপত্রঢ়ঃঁত্বং্থ শীর্ষক আন্তঃধর্ম সংলাপের আয়োজন করেন৷ কয়েক লক্ষ মানুষ এ সমাবেশে উপস্থিত হয়৷
২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর খৃষ্টসমাজের প্রধান ধমর্ীয় নেতা ভ্যাটিকানের পোপ বেনেডিক্ট (১৬শ) হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক মন্তব্য করার পর সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমনের জন্য মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করলে ২৯ সেপ্টেম্বর জাকির নায়িক তাঁকে উন্মুক্ত সংলাপের জন্য আহবান জানান৷ তিনি বলেন, 'পোপের ইচ্ছামতো আমি কুরআন ও বাইবেলের যে কোন বিষয়ে বিতর্কে রাজী আছি৷ ইটালিয়ান ভিসা পেলে আমি নিজ খরচে রোম বা ভ্যাটিকানে নিকটে যাব৷ আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে সরাসরি সমপ্রচারিত এই উন্মুক্ত ও পাবলিক ডিবেটে অংশগ্রহণ করতে৷ বিতর্ক শেষে একটি দর্শকদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্বও থাকবে যাতে সারাবিশ্বের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ ইসলাম ও খর্ৃষ্ট ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করতে পারে৷'
বলা বাহুল্য, পোপ ইতিপূর্বে মুসলমানদের সংলাপে বসার আগ্রহ ব্যক্ত করলেও জাকির নায়িকের এই আহবানের পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে গেছেন৷ এমনকি সবসময় সরব পশ্চিমা মিডিয়াও এক্ষেত্রে নিশ্চুপ৷
ডাঃ জাকির নায়িকের বক্তব্যের নমুনাঃ
নিম্নে দু'টি বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের সারাংশ উল্লেখ করা হলো-
কুরআনের সত্যতা প্রসংগেঃ
কুরআনের চিরন্তন সত্যতা ও আল্লাহর কালাম হওয়া প্রসঙ্গে বলতে যেয়ে তিনি ১৪০০ বছর পূর্বে কুরআনে বর্ণিত কয়েকটি বিষয় যেমন- বিগব্যাংগ তত্ত্ব, পৃথিবীর আকার, চাঁদের আলো, গ্রহ-নক্ষত্রের পরিভ্রমণ, পানিচক্র, সমুদ্্েরর লোনা পানি ও মিঠা পানি, ভূ-তত্ত্ব ইত্যাদির অবতারণা করেছেন যেগুলোর প্রমাণ সামপ্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া গেছে৷ তিনি বলেন, অবিশ্বাসীরা বলে বসতে পারে এটা 'হঠাত্ করে মিলে যাওয়া'র মত একটা কিছু৷ ইংরেজিতে একে বলা হয় 'ঞযবড়ত্ু ড়ভ ঢ়ত্ড়নধনষরঃু\' বা 'সম্ভাবনার সূত্র'৷ উদাহরণস্বরূপ একটি কয়েন যদি 'ঁটস' করা হয় তবে এ সূত্র অনুযায়ী সঠিক দিকটি অনুমান করার সম্ভবনা ঙ্গ ভাগ বা ৫০%৷ অথর্াত্ 'হেড'ও পড়তে পারে 'টেইল'ও পড়তে পারে৷ আবার যদি দু'বার করা হয় তবে দু'বারই সঠিক অনুমানের সম্ভবনা ঙ্গদ্ধঙ্গ= ঙ্ক ভাগ বা ২৫%৷ যদি তিন বার করা হয় তবে সম্ভবনা ঙ্গদ্ধঙ্গদ্ধঙ্গ= ্#৮৫৩৯;ভাগ বা ১২.৫%৷ এভাবে এই থিউরী অনুযায়ী যদি কুরআনকে বিচার করা যায় তবে প্রথমে ধরা যাক পৃথিবীর আকার নিয়ে৷ একটা মানুষ কোন বস্তুুর আকার নিয়ে প্রায় ৩০ ধরণের চিন্তা করতে পারে, যেমন সোজা, বর্তুলাকার, আয়তকার ইত্যাদি৷ আর অনুমান করে একটা আকার যদি নির্ধারণ করে তবে সূত্র অনুযায়ী তা সঠিক হওয়ার সম্ভবনা গ্গ/৩০ ভাগ৷ চাঁদের আলো নিয়ে কোন অনুমানিক সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়ার সম্ভবনা ঙ্গ ভাগ অর্থাত্ ৫০% ৷ আবার পৃথিবী সৃষ্টির উপাদান নিয়ে যদি অনুমান করা হয় তার যথার্থতার সম্ভবনা গ্গ/১০০০০ভাগ৷ অতঃপর সামষ্টিকভাবে এই তিনটি অনুমানিক উত্তর সঠিক হওয়ার সম্ভবনা গ্গ/৩০দ্ধঙ্গদ্ধ গ্গ/১০০০০ = ৬০০০০০ ভাগের ১ ভাগ বা .০১৭%৷ এভাবে 'সম্ভবনার সূত্র' অনুযায়ী তিনটি বিষয়ের আনুমানিক উত্তর সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা যদি .০১৭% হয় তবে কুরআনে বিজ্ঞান বিষয়ে যে হাজারটা বর্ণনা এসেছে তা গাণিতিক দৃষ্টিতে (.০০ এর পরে যদি ১০০০০ টি শূণ্যও বসানো হয় তবে সেটার অর্থ শূণ্যই হয়) বিচার করলে প্রমাণ হয় যে, কুরআনে যে অনুমান করে কিছু বলা হয়েছে তার সম্ভবনাও জিরো ভাগ৷ সুতরাং যদি প্রশ্ন করা হয়, কে এভাবে সুনিশ্চিত সত্য ও প্রামাণ্য তথ্য দিতে পারেন৷ নিশ্চিতভাবেই তিনি সেই ব্যক্তি যিনি এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন৷ আর তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যার পক্ষে এসব তথ্য দেওয়া সম্ভব৷ এভাবে তিনি অবিশ্বাসীদের নিকট বিভিন্নভাবে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে প্রমাণ দিয়েছেন কিভাবে কুরআন আল্লাহর বাণী এবং রাসূল (সাঃ)-এর বুদ্ধিগত কালাম নয়৷
সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রসংগেঃ
'সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ' প্রসঙ্গে তিনি ২০০৬ সালে মুম্বাইতে একটি সেমিনার করেন৷ যেখানে ইন্ডিয়ার সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হজবার্ট সুরেশ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন৷ ৩ ঘন্টার এই সেমিনারে তিনি ইতিহাস থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের হাতে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন পাশ্চাত্য মিডিয়া ও তাদের বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে সর্বাধিক প্রচারিত যে মিথ্যাচার অর্থাত্ 'সকল মুসলমান সন্ত্রাসী নয় তবে সকল সন্ত্রাসী মুসলমান' তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, সন্ত্রাস যদি কোন ধর্মের বিশেষ করে ইসলামের সম্পদ বলা হয় তবে অন্য ধর্মের লোকেরা যুগে যুগে যে নৃশংস সন্ত্রাস চালিয়েছে তা তুলনায় মুসলমানরা নিতান্তই শিশুতুল্য৷
তিনি বলেন, সন্ত্রাস কোন ধর্মের সম্পদ নয়, এঁটা হল রাজনীতিবীদদের পুঁজি৷ তারা রাজনৈতিক স্বার্থে, অর্থনৈতিক স্বার্থে সন্ত্রাসকে সমাজের বুকে জিইয়ে রাখেন৷ যেভাবে ওসামা বিন লাদেন ৯/১১ হামলার জন্য দায়ী কি না আজও তার কোন প্রমাণ নেই৷ এটা শুধুমাত্র 'হাইপোথেসিস'৷ অথচ একেই উপলক্ষ করে আজ মুসলমানরা লক্ষবস্তু হয়ে পড়েছে৷ আফগানিস্তানে, ইরাকেসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে হাজার হাজার নীরিহ মানুষকে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে৷ এসবের কারণ হয় সেটা ভোট ব্যাংকের জন্য, অথবা ক্ষমতা ও শক্তিমত্তা প্রকাশের জন্য, নতুবা অর্থের জন্য৷ এটা ওপেন সিক্রেট৷ কোন ঘটনা ঘটলেই আমেরিকা প্রমাণ ছাড়াই আল-কায়দাকে, ভারত লষ্কর-ই-তাইয়েবাকে দায়ী করে৷ এসব মূলতঃ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন স্বার্থপ্রণোদিত 'পলিটিক্যাল গেম'৷ বৃটিশদের প্রবর্তিত 'ফরারফব ্ ত্ঁষব' পলিসিই এখন বর্তমান বিশ্বের নীতি৷ তিনি বলেন, সন্ত্রাসকে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে ভৌগলিক বা ইতিহাসগত দিক চিন্তা করতে হবে৷ কারণ আজকে যাকে অন্যরা সন্ত্রাসী বলছেন, আপনাদের কাছে সে মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক! মূলতঃ পৃথিবী জুড়ে সন্ত্রাসের একমাত্র কারণ 'অবিচার'৷ অত্যাচারিত মানুষ যখন বিচার পায় না তখন সৃষ্ট ক্ষোভ থেকে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়৷ তিনি বলেন, আমি এসব সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করছি না যেহেতু ইসলাম কখনো বলেনি নিরপরাধ- নীরিহ মানুষকে হত্যা করতে৷ সুতরাং এটাও অন্যায়৷ আর আমি বারবার বলি, অন্যায়ের বিচার কখনো অন্যায় দিয়ে করা যায় না৷ এতে কোনদিন সুবিচার আশা করা যায় না৷ নীরিহ মানুষ হত্যার পিছনে কোন যুক্তিই পাওয়া যাবে না৷ কিন্তু এটা সত্য যে, সমস্ত সন্ত্রাসের কারণ তথা অবিচার বন্ধ না হলে এসব সন্ত্রাসী ঘটনা বন্ধ হবে না৷ যদি সন্ত্রাস বন্ধ করতে হয় তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন অবিচার-অত্যাচার দূর করা৷ কেননা এসব সন্ত্রাসীদের পক্ষে যুক্তি রয়েছে৷ তারা নিজেদের আত্বীয়-স্বজন, হাজার হাজার মানুষকে তারা নিহত হতে দেখেছে৷ অপরাধীরা তাদের সামনে ঘুরছে৷ কিন্তু তাদের কোন বিচার সমাজে হয় না৷ তাই তারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে৷ আপনি এসব সন্ত্রাসীদের ন্যায়ানুগ শাস্তিবিধান করতে পারেন, কিন্তু তাদের যুক্তিকে অস্বীকার করতে পারেন না৷ উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ২০০৬ সালে ১১ জুলাই বোম্বেতে একটি ট্রেনে ৭টি বোমা বিস্ফারিত হয় যাতে মারা যায় ২০০-এর বেশী নীরিহ লোক, আহত হয় ৮০০-এরও বেশী জন৷ সরকারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় এ ঘটনা ঘটিয়েছে, লস্কর-ই-তাইয়েবা ২০০২ সালের ফেব্রয়ারীতে গুজরাটের গণহত্যার প্রতিশোধ হিসাবে৷ এটা যদি সত্যি হয় তবে ঘটনা পরম্পরায় চিন্তা করুন এটা কি বন্ধ করা যেত না? সহজেই যেত৷ তবে এর জন্য দায়ী কে?- (১) সেই রাজনীতিবীদরা যাদের প্লানে গুজরাটের গোধরাতে ট্রেনে আগুন ধরানো হয়েছিল৷ (২) কেন্দ্রীয় সরকার যারা এটা থামানোর সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও তা করেনি দলীয় স্বার্থে৷ (৩) গুজরাটের সাধারণ জনগণ যারা উস্কানী প্রাপ্ত হয়ে মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল৷ (৪) গুজরাটের পুলিশবাহিনী যারা এই তান্ডব না থামিয়ে নিষ্ক্রিয়ভাবে তা দেখছিল বরং সন্ত্রাসীদের উল্টো সহযোগিতা করেছিলা৷ (৫) গুজরাটের বিচারবিভাগ যারা এ ঘটনায় কোন ব্যাবস্থা নেয় নি৷ (৬) সর্বশেষে যারা এই অন্যায়ভাবে প্রতিশোধ নিয়েছে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে৷ এরা সকলেই সমানভাবে দায়ী৷ তবে আমরা যদি প্রথমটি ঠেকাতে পারতাম তবে শেষোক্তগুলো ঘঁটার সুযোগ পেত না৷ তিনি বলেন, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার মুসলিম সাধারণ জনতার উপর চালানো হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চরম হয়রানী৷ বাড়ী বাড়ী তল্লাশী হয়৷ যদি বই পাওয়া যায় জিহাদের উপর৷ ব্যাস! সেটাই হলো প্রমাণ৷ অথচ একই বই বাজারের বুকস্টলে বহু বছর ধরে পাওয়া যায়৷ যদি এগুলো সন্ত্রাসের কারণ হয় তবে এসব বুকস্টল কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? আর তাই যদি হয় তবে তো কুরআন শরীফ থাকলেই সমস্ত মুসলিমকে গ্রেফতার করতে হয়৷ আমি বলি, দোষীদের শাস্তি প্রদান করুন, কোন সমস্যা নেই৷ কিন্তু দিনের পর দিন অজ্ঞাতস্থানে নীরিহ মানুষকে কেন আটকে রাখতে হবে? কেন তাদের অনেকের কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া অথবা এমন বিষয়ে স্বীকৃতি নেয়া হচ্ছে যা তারা জানেনা? এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বোম্বেতে সেমিনার হলো৷ আমন্ত্রিত প্রাক্তন দুজন পুলিশ অফিসার বললেন, পাকিস্থান ও ভারতের মাদ্রাসাগুলো এর জন্য দায়ী৷ জনৈক এ্যাডভোকেট তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, এমন একটি প্রমাণ কি আপনাদের হাতে আছে৷ তারা তা দিতে ব্যার্থ হলেন৷ এভাবেই চলছে মুসলিম জনসাধারণকে হয়রানী৷ এতে প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়ুক বা না পড়ুক নীরিহ মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্টি করা হচ্ছে ভীতি আর ক্ষোভ৷
আর এসব কাজে মুলতঃ ব্যাবহার করা হয় মিডিয়াকে৷ বিশেষ করে রাজনীতিবীদদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া যারা এক নিমিষেই সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা, হিরোকে জিরো আর জিরোকে হিরো করতে অভ্যাস্ত৷ এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে৷
তিনি বলেন, অনেক মুসলমান সংশয় নিয়ে বলে আমি মৌলবাদী নই, চরমপন্থী নই৷ আমি বলি, একজন মৌলবাদী হিসাবে আমি গর্বিত কেননা আমি ইসলামের যাবতীয় মৌলিক নীতিমালাকে মেনে চলার চেষ্টা করি৷ একজন চরমপন্থী হওয়াও অন্যায় নয় কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন একজন চরম সত্, একজন চরম ন্যায়পরায়ণ, চরম দয়ালু, চরম ক্ষমাশীল হওয়া অন্যায়? বরং এসব ক্ষেত্রে চরমপন্থী হওয়াটাই কোরআনের নির্দেশ৷ কারণ আংশিক বা সুবিধামত নীতি মেনে চলা এটা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী৷ আল্লাহ বলেছেন 'তোমরা ইসলামের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ কর'৷ এভাবে আমাদের এসব মন্তব্য- আলোচনার টেবিল উল্টে দিতে হবে৷
তিনি বলেন, আমাদের মুসলমা
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।