আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুক ভাসাই আজ নোনা জলে...... (পর্ব এক)


রাত ১১টার বাসে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। শীতের রাত কিন্তু কিছুই করার নেই সকাল আটটার আগে হাজির হতে হবে সিলেট। ঐ শাখার বিভাগীয় প্রধানের কাছে অফিসের জরুরী ফাইলটা পৌঁছাতেই হবে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা কোন মতে একটা চাকুরী যোগার হলে তা যেকোন মূল্যে আঁকড়ে রাখতে চায়। ব্যতিক্রম নই আমিও।

যাই হোক গাড়ীতে উঠে পাশের সিটে পেলাম আমারই বয়সী এক সফর সঙ্গী। ভাবলাম যাক বাবা সময়টা ভালই কাটবে। কোন বুড়ো কিংবা মাঝবয়সী পড়লেতো সারাটি পথে হাত সামলে, চুপচাপ বসে থাকতে হতো অথবা ঘুম। দেখে মনে হলো চুপচাপ স্বভাবের তাই বাস ছাড়ার পর নিজে থেকেই পরিচয়টা সেরে নিলাম। জানলাম তার নাম পার্থ, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।

বাপরে বিশাল ব্যাপার। দেশের বাড়ী চট্টগ্রাম, কি যেন জরুরী কাজে সেও সিলেট যাচ্ছে। তার সেই জরুরী কাজের বর্ণনা শুনে দু'একটা শব্দ ছাড়া তেমন কিছুই বুঝিনি। আসলেই স্বল্পভাষী সে। তবে কথা খুব গোছানো।

আমার বেশীর ভাগ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি এক লাইনে। মাঝপথে যাত্রা বিরতিতে নামলাম। খেতে বসি একই টেবিলে। এক কাপ কফি ছাড়া সে কিছুই খেল না। আমি অবশ্য একটা স্যান্ডউইচ আর এক কাপ কফি খেয়েছিলাম।

কফি শেষ করেই রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। আমি খাওয়া শেষ করে ওয়েটারকে বিল আনতে বললে শুনি পার্থ নাকি বিল দিয়ে গেছে। আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা সাধারণত এমন আচরণে অভ্যস্ত নই। আমরা ছোট বেলা থেকেই শিখেছি বন্ধুবান্ধব হোক আর সহকর্মী হোক খেতে বসলে যে যার বিল দেই অথবা ভাগ করে দেই। রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দেখি বাসের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে আর অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।

কাছে যেয়ে ধন্যবাদ জানালাম বিলের জন্য, তারপর নিজেও একটা সিগারেট ধরালাম। জানতে চাইলাম কি দেখছে আকাশের দিকে। বললো, তারা। বাকি যাদের খাওয়া শেষ সবাই বাসে উঠে গেছে শীতের কারণে। একা সেই দাঁড়িয়ে তারা দেখছে।

এর মাঝে লক্ষ্য করলাম, সিগারেট একটা শেষ করে আরো একটা ধরিয়েছে। আবারো জিজ্ঞেস করলাম, চেইন নাকি? এত সিগারেটতো ভাল না। উত্তরে শুনলাম, "ভাই, নিজের বলতে এই একটাই আছে। নিয়মিত অভ্যাস শুধু একটাই। " আবারো যথারীতি গন্তব্যের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু।

এবার উঠে একটা ঘুম দিলাম, কাল সারাদিন আবার কাজ সেরে রাতে ঢাকা ফিরতে হবে। ঘুম ভাঙ্গলো বাসের ঝাঁকিতে। দেখলাম পৌঁছে গেছি উপশহর। এখানেই নামতে হবে। ওদিকে পার্থকে দেখলাম সে ইতিমধ্যে তার ব্যাগ নিয়ে নেমে গেছে।

নিজের ব্যাগ নিয়ে বাস থেকে নেমে দেখলাম সে একটা সি.এন.জি ঠিক করে উঠে যাচ্ছে। ডাক দিতে যেয়ে দেখলাম তার ব্যাগ থেকে কিছু একটা পরে গেল রাস্তায়। ডাক দিলাম, পার্থ ভাই। না সে শুনলো না। সি. এন. জির সাথে আমার দূরত্ব বেড়ে গেল মূহুর্তের মধ্যেই বেশ খানিকটা।

এখন আর ডেকে লাভ নেই, শুনবে না সে। যেখান থেকে সে সি. এন. জি - তে উঠেছে সেখানটায় যেয়ে দেখলাম, রাস্তার উপর পরে আছে তার ব্যাগ থেকে পরে যাওয়া একটি ডায়রী। হাতে তুলে নিলাম। ভাবলাম এখানে হয়তো তার ঠিকানা অথবা ফোন নম্বর পাওয়া যেতে পারে। পৌঁছে দিব ঢাকা ফিরে।

ডায়রীর কোথাও খুঁজে পেলাম না কোন ঠিকানা কিংবা ফোন নম্বর। যাই হোক রেখে দিলাম নিজের কাছে। যদি কোন দিন খুঁজে পাই ফেরত দিব এই আশায়। তবে ডায়রীর মাঝামাঝি একটা পৃষ্ঠায় বড় অক্ষরে লিখা "বুক ভাসাই আজ নোনা জলে...। " চলবে...
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।