মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!
সকালে এক বন্ধুর ফোন;কি করছ?
-তেমন কিছুই না ছুটির দিন তাই স্বভাবতই রি্ল্যাক্স করছি।
-চিড়িয়াখানায় যাবা?
-কি বলছ? মস্করা করছ নাকি-এই বয়সে চিড়িয়াখানায়?
-ক্যান সমস্যা কি?ভাগ্নেকে নিয়ে চল। আমি আমার ভাতিজিকে নিয়ে যাচ্ছি।
সাইদ আর মইনকেও ফোন করেছিলাম-ওরাও যাবে,দুই পিচ্চিকে নিয়ে।
একটু ভেবে বললাম ঠিক আছে যাই।
কাম কাজ নাই যখন একটু ঘুরেই আসি।
এখানে উল্লেখ্য যে আমার ওই বন্ধু এমাসের শেষের দিকে ইংল্যান্ড ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে ডক্টরেট করার জন্য। কয়কবছরের ধাক্কা তাই শেষদিকে ছুটি ছাটাতে পরিবারের প্রিয়জনদের সময় দিচ্ছে।
যাবার আগে আমরা অন্য বন্ধুরাও চেস্টা করছি তার সাথে যতটা সম্ভব বেশী সঙ্গ দিতে। তাই ইচ্ছে না থাকলেও না করিনি।
যথা সময়ে আমার অন্য এক বন্ধুর গাড়িতে করে সদলবলে চিড়িয়াখানা অভিমুখে রওনা হলাম।
প্রবেশ মুখেই ধাক্কা খেলাম। বিশাল লাইন সাপের মত বহুদুর একেবেকে অপেক্ষমান ভিতরে প্রবেশের জন্য। এত্ত লোক? যেন কোন মেলা হচ্ছে ভিতরে।
বেশ কিছুক্ষন লাইনে দাড়িয়ে অবশেষ ভিতরে প্রবেশ।
প্রায় একযুগ বাদে চিড়িয়াখানায় আসা। ভেতরের চেহারাটা প্রায় আগের মতনই রয়ে গেছে। শুধু আগের থেকে পুরোনো জীর্ন আর অবহেলার ছাপ স্পস্ট।
খাচার ভিতরে প্রানীদের এই বন্দীত্ব আমার ভীষন কষ্ট দেয়-কিন্তু এদের অবহেলা অব্যবস্থাপনার যে নজির আজকে দেখলাম তা নেহায়েত অমানবিক ভয়ঙ্কর আর দুঃখজনক বললে কম বলা হবে।
কি বিশ্রী দুগন্ধময় জরাজীর্ন পরিবেশ!কত শতবার এদের অব্যাবস্থাপনার খবর এসেছ পত্রিকায় কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কিন্তু তাতে করে অবস্থার কোন উন্নয়ন তো হয়নি বরং আরো অনেক অনেক বেশী খারাপ হয়েছে।
সারা চিড়িয়াখানা জুড়ে অর্ধেকেরও বেশী খাচা একদম খালি। জংধরা মরচে পড়া সাইনবোর্ডের কাছে গেল কোনমতে নামটা পড়া যায়। বিপন্প্রায় প্রানীর সাইনবোর্ড নিজেরারাই বিপন্ন। হায়েনা ডুংগা নীলগাই থেকে শুরু করে আমার আগের দেখা প্রায় কোন প্রানীই নাই বলতে গেলে। প্রানীদের দিকে একনজর তাকালেই বোঝা যায় এরা কতটা অনাদর অবহেলায় কোন রকম ধুকে ধুকে টিকে আছে।
প্রতিবাদ করার ভাষা এদের নেই-অভিশাপও দিতে জানেনা হয়ত।
কেউ একজন পিছন থেকে বলল,
-ভিতরে কিছু নাই বুঝলাম বাইরে একটা ছবিওতো টাঙ্গিয়ে রাখতে পারত-অন্তত পোলাপানদের ছবিটা দেখিয়েও বলতে পারতাম এইটে এই প্রানী।
আরেকজন বলল,-এগুলো মরে গিয়ে থাকলে এদের মমিটাও অন্তত এখানে রাখতে পারত।
তা কথা শুনেই আরেকজনের বিকট হাসি, কি যে বলেন ভাই মের গিয়ে পচা পরে কিউরেটর খবর পাইছে-তখন ওগুলা গোর দেয়া ছাড়া গতান্তর ছিলনা।
ক্যাঙ্গারু কুমির থেকে শুরু করে আরো কিছু প্রানী এমনভাবে হাত পা ছড়িয়ে মড়ার মত পড়ে আছে যে,ওদের দেখিয়ে আমাদের ছোট বাবুদের কিছুতেই বুঝাতে পরছিলাম না সেগুলো জীবিত।
এদের এহেন দুরবস্থা দেখে ছেলে বুড়ো সবার চেহারাতেই বেদনা আর বিক্তির ছাপ স্পস্ট।
শিম্পান্জির খাচার সামনে প্রচুর ভীড়। বাইরে সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা ‘ধুমপান মুক্ত এলাকা’। কৌতুহলী দশর্কদের ফাক দিয়ে কোনমতে মাথা গলিয়ে দেখি তাজ্জব এক কান্ড। কারো দেয়া একটা সিগারেট মনের সুখে টানছে শিম্পান্জি মহাশয়।
তার সিগারেট টানার সে কি স্টাইল-বর্ষিয়ান স্মোকারকেও হার মানায়। সিগারেট টেনে আবার নাক দিয়ে ধোয়াও ছাড়ছে!
বাইরের সাইনবোর্ডের লেখাগুলোকে সে যেন ব্যাঙ্গ করছে। এইটেই হয়তো তার প্রতিবাদের ভাষা।
ছোটদের পিড়াপিড়িতে অনিচ্ছা সত্বেও সবশেষে সাপ দর্শন! হায় আল্লা কোথায় কালকেউটে আর পোখরাজ। অন্ধকার স্যাতসেতে সবগুলো প্রকোষ্ঠই প্রায় খালি।
দর্শকেরা কাচের ঘরে নাক ডুবিয়ে অতি কৌতুহলী হয়ে যাদের দেখার চেস্টা করছে-তারা বহুকাল আগেই হয়তো মানুষের এই অমানবিক অত্যাচাএরর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চিরশান্তির দেশে পাড়ি দিয়েছে।
সবগুলো খাচা ঘুরে কয়েকটা অজগর আর একজোড়া লাউডগা সাপ ছাড়া অন্য কোন সাপের টিকিটিরও দেখা পেলামনা।
ফেরার পেথে কিউরেটরের সুসজ্জিত অফিস দেখে আমি বন্ধুদের বললাম চলো গিয়ে জিজ্ঞস করে আসি-চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের কেন এই দুরবস্থা?
আমার সেই বন্ধু তৎক্ষনাত বলল,-থাকরে বাপ আর ওখানে যাবার দরকার নেই শেষ মেষ দেখা যাবে আমাদেরই কোন চিড়িয়া বানিয়ে খাচার ভিতর পুরে রেখেছ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।