চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
গাজায় ইসরায়েলীদের চলমান আক্রমনের জন্য পশ্চিমারা ইসরায়েলীদের নয় হামাসকে দায়ী করছে যখন তখন জানার আগ্রহ জানল কে এই হামাস। ঢু দিলাম উইকিতে। চমক অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। সরাসরি বললে বলতে হয় হামাস ছিল ইসরায়েলেরই সৃষ্টি। ইয়াসির আরাফাতের সংঘটন পিএলওকে নাস্তানাবুদ করতে হামাসের উত্থানে সহায়তা যোগায় ইসরায়েল।
উদ্দ্যেশ্য ছিল আরাফাতের সেক্যুলার ফাতাহ মুভমেন্টকে প্রতিহত করা।
১৯৭০সালে কায়রো থেকে ফিরে এসে শেখ আহমেদ ইয়াসিন ইসলামিক চ্যারিটির কাজকর্ম শুরু করেন। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭সালে প্রতিষ্ঠা করেন হামাস। এতে সেসময়কার ইসরায়েলী মিলিটারি সরকারের সম্মতি এবং সহায়তা ছিল। কয়দিন আগে যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় ইসরায়েলীরা তা ১৯৭৮ সালে হামাস প্রতিষ্ঠা করে ইসরায়েলী মিলিটারি সরকারের সহায়তায়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইসরায়েলীরা বিদেশী ডোনেশনের অনুমতি দেয়। মোসাদের আশির্বাদে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিখন্ডে হামাস সংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়। পক্ষান্তরে ফাতাহ র সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হয়।
২০০৭সলার ১২ ফেব্রুয়ারীতে নেসেটে দেয়া ভাষনে প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট বলেন নেতিনিয়াহু (প্রাক্তন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) হামাসকে প্রতিষ্ঠা করেন, এটাকে জীবনদান করেন, ইয়াসিনকে কারাগার থেকে মুক্ত করে তাকে ফুলেফেপে উঠার সুযোগ দেন।
১৯৯১ সালের ইরাকের যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনকে ইয়াসির আরাফাত সমর্থন করলে গালফ দেশগুলো পিএলওর পরিবর্তে তাদের অর্থ সহায়তা হামাসকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু এটিও সত্য যে বিভিন্ন ধরনের চ্যারিটিমুলক কাজের জন্য হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। শুধু গাজাতেই তারা ৬০০টি মসজিদ নির্মান করে। ধর্মীয় এবং সামাজিক কাজকর্মের পরিধি বাড়াতে থাকে হামাস।
এরিমধ্যে ইসরায়েলীদের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে হামাস জড়িয়ে পড়লে ইসরায়েল এবং আমেরিকা হামাসের সাথে সমযোতার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। একসময় গাজা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় ইসরায়েলী বাহিনী।
হামাসের সাথে যুদ্ধ বিরতিরও চুক্তি হয়।
কলিন পাওয়েল চেয়েছিলেন হামাসকে দেখতে আলকায়েদার বিরুদ্ধে একটি সক্রিয় সংঘটন হিসাবে। ইসরায়েলীরাও গোপনে দুএকবার আলোচনা চালায় হামাসের সাথে।
ক্রমেই হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নেয়। ইসরায়েলকে স্বিকৃত না দেয়া এবং সমগ্র ইহুদি জাতিকে তাদের আক্রমনের লক্ষবস্তু করা।
এখন আসা যাক, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়। ইসরায়েলী জনগনের জানমাল বাচাতেই ইসরায়েল বাধ্য হয়েছে এই হামলা চালাতে।
আসলেই কি তাই। ফিলিস্তিনি ইসরায়েলী সংঘর্ষের যে পরিসংখ্যান রয়েছে, তার সহায়তা নিলে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে।
২য় ইনতিফাদা শুরুর পর ২০০৭ সাল অব্দি যেসব জিনিষ পরিলক্ষিত হয়েছে তার প্রধানতম হল ইসরায়েলীদের হতাহতের সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে গেছে আবার ফিলিস্তিনিদের হতাহতের সংখ্যা আগের মতই অনেক বেশি।
২০০২সালে প্রতিমাসে ২২জন ইসরায়েলী মারা যেতে যা ২০০৭সালে ৬জনে এসে দাড়ায়।
২০০২ সালে একজন ইসরায়েলী মারা গেলে আড়াইজন ফিলিস্তিনি মারা যেতেন, সে জায়গায় ২০০৭সালে একজন ইসরায়েলী মারা গেলে ২৫জন ফিলিস্তিনি মারা যায়।
ইসরায়েলী ফিলিস্তিনি সংঘর্ষে ৯৭১জন শিশু মারা যায় যার ৮৮% ফিলিস্তিনি ১২% ইসরায়েলী।
২০০৪সাল থেকে হামাস যে কাসাম মিসাইল ছুড়ে এসেছে তার সংখ্যা ২৬৯৬ এবং তাতে ৪জন শিশুসহ ১১জন ইসরায়েলী এপর্যন্ত মারা গেছে।
অথচ যেখানে ২০০৬সালে শুধুমাত্র গাজা ষ্ট্রিপেই ১৪০০০ আর্টিলারি সেল নিক্ষেপ করে ইসরায়েলী বাহিনী।
তাতে ৫৯জন মারা যায় যার অধিকাংশ সাধারন মানুষ।
বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং টার্গেট করে কাউকে হত্যা করা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক আইনে এটিও বলায় হয়েছে যেকোন অধিকৃত এলাকার কোন মানুষকে আক্রমনের লক্ষবস্তু করা যাবেনা যদিনা সে অস্রবহন করে কোনধরনের হোস্টাইল আক্রমনে উদ্যত নায় হয়। অথচ ইসরায়েলী সৈন্যরা পাথর ছোড়া ঘটনার সময় কিংবা অনুসন্ধান চালানোর সময় অনেক নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গ্রেফতারি ঘটনায় যে মৃত্যুগুলো ঘটেছে তার সংখ্যা অনেক।
আবার হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে গাড়ী চালানো অবস্থায় অনেক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। কোন প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি মৃত এই ফিলিস্তিনিদেরকে।
চেকপয়েন্টে আটকে রাখার ফলে ৬৮জন ফিলিস্তিনি মহিলা চেকপয়েন্টেই শিশু জন্মদানে বাধ্য হন কোন প্রকার মেডিকাল সাহায্য ছাড়াই।
৪জন মহিলা মারা যান ৩৪টি মিসক্যারেজের ঘটনা ঘটে।
ঠিক অমনিভাবে অনেক ফিলিস্তিনির মৃত্যু ঘটেছে তাদেরকে মেডিকেল সুযোগ সুবিধা থেকে বন্চিত করায়।
গাজাবাসী দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য, পানি, চিকিতসার সংকটে আছে। গাজার অর্থনীতি ধংসের মুখোমুখি। গাজাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জেলখানায়।
ওপরের পরিসংখ্যান এবং অন্যান্য আলোচনায় এটি ষ্পষ্ট যে দিনকে দিন ইসরায়েলী সাধারন মানুষের হতাহতের সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে এসেছে। অথচ ফিলিস্তিনি মৃতের সংখ্যা কমেনি কোনভাবে।
আবার যে মিসাইল ছোড়ার অজুহাতের হামাসকে স্বায়েস্তা করতে চাইছে ইসরয়ায়েল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে ওরকম অনেকগুলো অপরাধ করেও ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল । তথাকথিত জংগী দমনের নামে বিমান কিংবা হেলিকপ্টার থেকে বোমা মেরে কিংবা গুলি ছুড়ে সাধারন মানুষ হত্যা করা। গ্রেফতার কিংবা অনুসন্ধানের সময় নির্বিচারে মানুষ মারা। একটি বিশাল জনগোষ্টিকে অবরোধ করে রেখে একটি জাতিকে তিলে তিলে ধংসের মুখে ফেলে দেয়া।
তারপরও নিরীহ এই ফিলিস্তিনিদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে মারতে থাকলে পক্ষান্তরে সত্যিকারের সন্ত্রাসীদেরকে সুযোগ করে দেয়া হবে সন্ত্রাস করার।
তাতে লাভবান হবে কারা। আমেরিকান আর ইসরায়েলের মত তাদের দোসরেরা। কেননা সন্ত্রাস দমনের নামে সারা দুনিয়াতে সন্ত্রাসী কাজকর্ম চালানোর সুযোগ পাবে তারা, পাশাপাশি চলবে অশ্রবানিজ্য আর দুনিয়ার সব (জ্বালানী, খনিজ) সম্পদ নিজেদের পকেটে পুরার।
মাঝখানদিয়ে ফিলিস্তিনিরা কখনোই স্বাধিন হওয়ার সুযোগ পাবেনা। ইরাক আর আফগানিস্তান জ্বলবে সহিংসতার আগুনে।
কিন্তু আসলেই কি তাই? বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমাবনতি আর বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরুন খুব শিঘ্রীই সবকিছু বদলে দিতে শুরু করবে। নতুন করে হিসাব কষতে হবে পৃথিবীর কর্নধার দেশগুলোকে।
বেশ কয়মাস আগে নিওরিপালিকানদের ওপর বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে এক ইহুদি মহিলা থিংক ট্যাংককে দাত কেলিয়ে বলতে শুনেছিলাম যে, হ্যা এটি সত্যি যে আমাদের একটি নিজস্ব একটি এজেন্ডা আছে।
ষ্পষ্টতই ইহুদিদের পরবর্তী টার্গেট ছিল সিরিয়া এবং ইরান।
কিন্তু রিপাবলিকানরা আর ক্ষমতায় নেই।
ওবামা ইরানের সাথে আলোচনায় আগ্রহী। অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন আমেরিকানরা চাইবে না তাদের ট্যাক্সের টাকায় ইহুদিরা অনাচার চালাক। ইসরায়েল হয়তাবা তাই কিছুটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি সামনের নির্বাচনে নিজেদেরকে যোগ্য প্রমানের জন্যই বর্তমান নেতৃত হামলে পড়েছে নিরীহ গাজাবাসিদের উপর।
এক বাঘ মেসশাবককে খেতে উদ্যত হলে সে কাপতে কাপতে বলল হুজুর আমার অপরাধ কি?
তুমি পানি ঘোলা করেছ।
হুজুর আমি ত নীচে, আমি পানি ঘোলা করি কিভাবে?
ঠিক আছে তুমি করনি তোমার বাবা করেছে।
তারপর সেই অজুহাতে বাঘের মেষশাবককে গিলে ফেলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।