মিডিয়া
নিতান্ত কোন দূঘটনা কিংবা আকস্মিক দূর্বিপাকের কথা বলছিনা, তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাবার স্মৃতিচারণ করিছ, আমি আমার প্রিয়তম বাবার কথা বলছি, সেই রাতের কথা বলছি, তারও আগে অসংখ্য রাত মাস আর বছর পেরিয়েছি আমরা, কিন্তু সেই রাতে আমি দেখেছি আমার কোলেই একটি নিশ্চিত মৃত্যু আমার জন্য অপেপক্ষা করছে। কি নির্মম, কি নিষ্ঠুর ! কিছুক্ষণ পর আমার বাবার মৃত্যু হবে, আর একজন সন্তান হয়ে আমাকে নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে ! কিভাবে একজন জীবন্ত মানুষ তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সন্তান হয়ে আমি অর্থবের মতো শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি সেই মৃত্যু! প্রায় এক যুগ আগের কথা বলছি আমি। সেই সময়ে বাবাকে তিনটা কেমোথেরাপি পর্যন্ত সহ্য করেছে এই প্রকৃতি, তারপর চোখ বুজলেন বাবা। তখন সবে মাত্র আমি স্কুলের গন্ডি পার হয়েছি, আমার কলম তখন জেগে উঠবার পৌরুষ অর্জন করেনি, সব কিছু বুঝে উঠার আগে তাই আমাকে মৃত্যুকেই স্বাগত জানাতে হয়েছিলো।
প্রিয় কলম সৈনিক, ব্লগার, কবি জিফরান খালেদের বাবাকে আমি আমার বাবার চেয়ে ভিন্ন ভাবে দেখিনা।
এক যুগ আগে হয়তো নিজের বাবার মৃত্যুকে অসম্ভব করার দাবী নিয়ে আপনাদের কাছে আসবার সামর্থ্য আমার ছিলোনা, তাই জীফরানের বাবার জন্য আপনাদের কাছে এসেছি। শুধু সহযোদ্ধা হিসাবে নয়, একজন বাবা হিসাবেও নয়. কিংবা শুধু মানবিক কারনেও নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে এ.জে.এস.এম খালেদের বেঁচে থাকার এই আকুতি সচেতন মানুষ হিসাবে আমাদের কতটা আলোড়িত করে সেই মাপকাঠি আমার কাছে নেই, তবে আমরা যে চাইলেই অসম্ভব করে দিতে পারি এই মৃত্যুটিকে। আসুন এই মৃত্যুকে না বলি।
স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া এই রোগটিকে ডাক্তারী ভাষায় 'কিউটেনাস টি সেল লাইফোমিয়া'বলা হয়ে থাকে । রক্তের শ্বেত কনিকায় এই ক্যান্সার আক্রমন করে রক্তের গতিকে শ্লথ করে দেয়।
এই ধরণের রোগের চিকিৎসা যেমন দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ, তেমনি ব্যয় বহুল। ১৯৯০ সনে জিফরানের বাবার এই রোগ ধরা পড়ে। দীর্ঘ ১৭ বছরের যুদ্ধের পর নিজের কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছিলেন অনেকটা নিরবেই। দূরারোগ্য এই ব্যাধিটির চিকিৎসা জন্য ডাক্তাররা মেডিকেশনের কথা বলছেন। সেই সাথে ডাক্তাররা ৯০ হাজার ইউ এস ডলারের একটি আনুমানিক চিকিৎসা ব্যায়ের কথাও স্বরণ করিয়ে দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যার্নফোর্ড মেডিক্যাল ও পেনিসেলভিনিয়া মেডিকেশন সেন্টার এই চিকিৎসার জন্য উৎকৃষ্ট স্থান। চিকিৎসা ব্যায়ের এক বিশাল পাহাড় আর ভিসা জটিলতার দুষ্ট চক্রে পড়ে , বেঁচে থাকার যুদ্ধটা থেমে আছে ভারতের চেন্নাই আর ভেলোরে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্য দিয়ে। তবুও খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১২ লাখ টাকা !
এই লেখা যখন আমি লিখছি তখন জিফরান আমাকে টেলিফোনে জানালো তারা বাবা এই বিষয়টি অপছন্দ করছেন, আমি এই বিষয়টি নিয়ে লিখে যেন সময় নষ্ট না করি, তার সময় শেষ হয়ে আসছে, যা হবার হবে.....আমি এক অবাধ্য সন্তানের মতো লিখে চলেছি, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা গুনী শিক্ষকের কথা। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই যিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় অসাধারণ মেধার অধিকারী হবার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের ফুলব্রাইট বৃত্তিও পেয়ে যান, ফিরে এসে দেশের হন।
শিক্ষকতা শুরু করেন চট্র্রগ্রাম বিআইটিতে, বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনেও কিছুদিন কাজ করেন। কাজ করেন বিসিক, ইয়াঙ্গুনের মতো গুও“ত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে শান্তা-মরিয়াম ইউনিভার্সিটিতে টেকনিক্যাল এ্যডভাইজার ও ফ্যাকাল্টি হিসাবে কর্মরত। তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ 'পোশাক শিল্পে ওয়ার্ক স্টাডিজ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কৌশল' এবং 'পোষাক শিল্পে মান ব্যবস্থাপনা' আমাদের গার্মেন্টর্স শিল্পের অন্যতম দলিল। কিন্তু জীবন মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষনে আজ বড় বেশী অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধা।
বিপন্ন হতে চলেছে তার জীবন নিছক অর্থের অভাবে !!
অসম্ভব গুনী, অভিমানী আর সৎ এই মুক্তিযোদ্ধার সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই। সু-শান্ত, সুবিনয় মুস্তফি , জিফরান, ধ্র“ব, নিঝুম আর আমি বসেছিলাম ব্রিকলেনে, সিদ্ধান্ত হলো ব্লগে ব্লগে আমরা এই আবেদন ছড়িয়ে দেবো। নিঝুম লিখবে সচলনায়তনে , আমি সামহোয়্যার ইনএ আর সু-শান্ত আমার ব্লগে । সুবিনয় খুলেছেন ফেসবুক গ্র“প(Click This Link), খোলা হয়েছে একাউন্ট, লিংক আছে পে পলের( ), তৈরী হয়েছে ওয়েব সাইট (http://www.saveafreedomfighter.org) সহায়তার দ্বার খুলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার রেনেটের ভাই সঞ্জয় পেরেরা, ক্রেডিট কার্ডে কিনে দিয়েছেন ৩ হাজার দুশ ডলারের ঔষধ। ব্লগার সিগ্ধা ঔষধ ক্রয় সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে দিয়েছেন, প্রতি মাসে এই ঋণের এই বোঝা বাড়ছে....
আমার কাছে এমন কোন যাদুর চেরাগ নেই যে, আমি একজন বাবা কিংবা একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য এক ঘসাতেই ৯০ হাজার ডলারের মতো বিশাল অংকের অর্থ যোগার করে ফেলবো।
তবে আমি স্বপ্ন দেখি হাজার মানুষের মানবিক চেতনায় একটি অসম্ভব কে সম্ভব করার। এমন দৃষ্টান্ত ব্লগাররা দেখিয়েছেন বহুবার। আজ আবার এ জে এস এম খালেদের জন্য আমাদের মানবিক অনুভূতিগুলো জেগে উঠুক থেমে যাক এই মৃত্যুর ডাক।
একাউন্ট ডিটেইলস :
A. J. S. M. Khaled
Account no. 1510200470775001,
Swift Code: BRAKBDDH, BRAC BANK,
Uttara Branch, Dhaka
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।