আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুল-ভ্রান্তির অবসান হোক ।

নাজিল আযামীর ব্লগ সাইট

বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের ছোট দেশগুলোকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। এ সত্য বিজয়ী মহাজোটের নেতা-কর্মীদের উপলব্ধি করতে হবে। আর মহাজোট নেত্রীতো শুধু টিকে থাকার কথা বলেননি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন। তিনি বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, শিল্প, কৃষি সব ক্ষেত্রেই কাáিক্ষত উন্নয়নের কথা বলেছেন। উন্নত নতুন সমাজের অঙ্গীকার করেছেন।

শুধু তাই নয়, মহাজোট নেত্রী সাধারণ মানুষকে ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার এবং প্রতিটি ঘরের বেকারের জন্য চাকরির নিশ্চয়তাও দিয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহার, জনসভা ও বেতার-টিভি ভাষণে এসব স্বপ্ন দেখিয়ে তিনি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন। এ বিজয়ের দায়িত্ব যারা বোঝেন, তারা ইতোমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন- এত প্রতিশ্রুতি দেয়ার কি কোন প্রয়োজন ছিল? মহাজোট সমর্থক কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীতো পত্রিকার পাতায় প্রকাশ্যেই বলছেন, আওয়ামী লীগের জন্য সামনে রয়েছে অগ্নিপরীক্ষা। তাই বিজয়ের উত্তেজনায় সামন্তবাদ কিংবা ফ্যাসিবাদের ফাঁদে পা না দিয়ে প্রতিশ্রুতি এবং দায়িত্বের হিসাব নেয়াটাই হবে এখন মহাজোটের মূল শক্তি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। জানি না আওয়ামী লীগের আদর্শিক, নৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্খা এ জন্য কতটা প্রস্তুত।

এতবড় বিজয়ের পর জাতির অগ্রগতি ও অর্থবহ কল্যাণের যে ঐতিহাসিক সুযোগ আওয়ামী লীগ পেয়েছে, তার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য যদি দলটি বুঝতে ব্যর্থ হয়- তাহলে তা শুধু দলটির জন্য নয়, জাতির জন্যও হবে দু:খজনক। কারণ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে মহাবিজয়ের পর মহাধসই অনিবার্য হয়ে ওঠে। ইতিহাসের এই সত্য যেন কেউ ভুলে না যায়। জরুরি অবস্খার সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার গুরুত্ব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। তখন তারা আন্তরিকভাবেই গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ চেয়েছেন।

এখন যখন সেই সুযোগ পাওয়া গেল, তখন তা যেন অজাচার, অনাচার ও স্বৈরাচারের ভ্রান্তিতে হারিয়ে না যায়। নির্বাচনের পর একদিনের মাথায় জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, লুণ্ঠন, ঘেরাও ও হতাহতের যে চিত্র লক্ষ্য করা গেল এবং বিএনপি-জামায়াতকে উড়িয়ে দেয়ার যে মানসিকতা প্রদর্শিত হলো তা জাতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। আমরা বুঝতে পারি আশাতীত ও অকল্পনীয় একটি বিজয়ের পর মহাজোটের অনেকের পক্ষেই মাথা ঠান্ডা রাখা কঠিন, পরিস্খিতির বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণও এখন তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অকল্পনীয় বিজয়ের সুফল অর্জন করতে হলে তাদের এখনই বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সমর্থ হতে হবে। প্রথমেই তাদের বুঝতে হবে যে, চারদলীয় জোট নির্বাচনে বেশ কম আসন পেলেও ভোট কিন্তু তেমন কম পায়নি।

আর নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন শীর্ষ নেতা বিজয়ী হতে না পারায় যারা দৃষ্টিকটুভাবে লম্ফঝম্ফ করছেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছেন তাদের জন্য বার্তা রয়েছে। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের প্রচারণার কারণেই এবার জামায়াতের ভরাডুবি ঘটেছে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ প্রকৃত তথ্য হলো, এবারের নির্বাচনে জামায়াতের ভোট বেড়েছে। অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধের মতলবী প্রচারণায় জনগণ প্রভাবিত হয়নি এবং জামায়াতকে প্রত্যাখ্যানও করেনি। ভোট আগের চাইতে বেশি পাওয়ার পরও কেন তারা পরাজিত হলো এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে।

এই প্রশ্নের জবাব জামায়াতই ভাল দিতে পারবে। ইতোমধ্যেই তারা নির্বাচন কমিশনে বেশ কিছু অভিযোগ উথাপন করেছে। এ ব্যাপারে কমিশন কী ব্যবস্খা গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে জনগণ যে জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেনি বরং আগের চাইতে বেশি ভোট দিয়েছে সেই পরিসংখ্যান পাঠকদের জন্য পেশ করা যেতে পারে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর প্রতিদ্বন্দবী আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আবু সাঈদ ৯৮ হাজার ১১৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন অথচ এবার ১ লাখ ২২ হাজার ৯৪৪ ভোট পেয়েও মাওলানা নিজামী বিজয়ী হতে পারেননি।

২০০১ সালে দিনাজপুর-১ আসনে জামায়াত প্রার্থী ৮৮ হাজার ৮১১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন অথচ এবার একই আসনে জামায়াত প্রার্থী ১ লাখ ৪ হাজার ৮৬৮ ভোট পেয়েও পরাজিত হয়েছেন। ২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসনে জামায়াত প্রার্থী ৬৯ হাজার ৯৪৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন অথচ এবার একই আসনে জামায়াত প্রার্থী ৮১ হাজার ৮৩৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। লালমনিরহাট-১ আসনে ২০০১ সালে জামায়াত প্রার্থী ৪৮ হাজার ৯০৭ ভোট পেয়েছিলেন, অথচ এবার ৭৩ হাজার ৬৮৬ ভোট পেয়েও জামায়াত প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এছাড়া পাবনা-৫ আসনে এবার জামায়াত প্রার্থী ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৬৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন ৯৭ হাজার ৪৬৩ ভোট পেয়ে।

তাই বিবেকবান কোন মানুষই ভোটের এই পরিসংখ্যান দেখে বলবেন না যে, জনগণ জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অবশ্য যারা ফ্যাসিবাদে বিশ্বাসী তাদের কথা আলাদা। বাংলাদেশের রাজনীতির যে বাস্তবতা তা বিশ্লেষণ করলে যে কোনো সচেতন মানুষই একথা স্বীকার করবেন যে, কোনো মহল চাইলেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীকে প্রপাগাণ্ডার তোড়ে উড়িয়ে দিতে পারবেন না। আর এই দলগুলোকেও উপলব্ধি করতে হবে যে, একমাত্র গণতন্ত্রের স্বচ্ছ পথেই তাদের বিজয় অর্থবহ হতে পারে। এ পথে প্রতিহিংসার বদলে প্রতিযোগিতার সংস্কৃতিই যেন তারা লালন করেন।

লেখার এ পর্যায়ে আমি ৩১ ডিসেম্বরের পত্রিকা হাতে পেলাম। পত্রিকায় নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, নীল-নকশার এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির হিসাবে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ লোক ভোট দিয়েছে। অথচ নির্বাচন কমিশনের হিসাবে ভোট পড়েছে ৯০ শতাংশ। এমন মহাভোট জালিয়াতি অতীতে কখনো ঘটেনি।

নির্বাচন কমিশন পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল ঘোষণা করেছে। বেগম জিয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ‘ধন্যবাদ' জানিয়ে বলেন, তিনি একটি সাজানো নির্বাচন বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করেছেন এবং এক নীল-নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশে নব্যবাকশাল কায়েমের পথ উন্মুক্ত করেছেন। নির্বাচনে কারচুপি ও নীল-নকশা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে এবং সেগুলো আগামীকাল উপস্খাপন করা হবে। বেগম জিয়া প্রেস ব্রিফিংয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা এবারের নির্বাচন প্রসঙ্গে নতুন ভাবনা সৃষ্টি করেছে। গুরুতর এই অভিযোগের পরিণতি কী দাঁড়ায় তা দেখার জন্য আমাদের হয়তো আরো অপেক্ষা করতে হবে।

নতুন বছরে বাংলাদেশে শান্তি আসুক দল-মত নির্বিশেষে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।