আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলে যায় বসন্তের দিন.........



দিন গুলো একে একে চলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি অন্তিম মুর্হুতটির দিকে। প্রতি জন্মদিনে, প্রতি বসন্ত উৎসবে, নববর্ষে ও নবান্নে সবাইকে আনন্দ খুশীতে মেতে উঠতে দেখেছি। নতুনকে বরণ করে নেয়া, উৎসাহ উদ্দিপনায় আনন্দ ও গানে। আমিও নাচে গানে কবিতায় ও আনন্দে সামিল হয়ে যাই সবার সাথেই।

কিন্তু একটুক্ষণের জন্য হলেও আমার খুব ভেতরের এক সত্বায় কাঁপন ধরে। কেঁপে উঠি আমি কিছু হারাবার বেদনায়। নতুন দিনের শুরুতে আমার ভেতরে একটা সূক্ষ বেদনা জাগে, ফেলে আসা দিন গুলোর জন্য। আমি আসলেই হয়তো দুঃখ বিলাসী অথবা নস্টালজিয়া আমার প্রিয় এক বিষয়। আজ সকাল থেকেই ভাবছিলাম কাল থেকে আবারও এক নতুন বছরের শুরু।

নতুন দিন, নতুন ভোর। শুধুই পুরোনো এই পৃথিবীটাতেই, পুরোনো দিন গুলোকে সাক্ষী রেখে নতুন দিন গুলোতে হেঁটে চলা। এ বছরে আমি অনেক পেয়েছি, হারিয়েছিও কিছুকিছু। তবে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশে প্রাপ্তিটাই অনেক বেশী বলে মনে হয়। অপ্রাপ্তিগুলো ভাবতে চাইনা।

ভাবছিলাম এ বছরে নতুন করে কি কি পেয়েছি, অনেক গুলো ভালোলাগা,ভালোবাসা, ভালোলাগার দিন ও ঘটনা। কিছু নতুন প্রিয়জন ও বন্ধু। কিছু ভ্রমন স্মৃতিও এবছরটাকে স্মরণীয় করে রাখবে। এই ব্লগটাতেও এসেছি এ বছরেই। এটাও আমার এক অবিস্মরণীয় প্রাপ্তি।

ব্লগের পাতাগুলিও ঠিক যেন ডায়েরীর পাতাগুলোর মতই বছরটাকে আজীবন ধরে রাখবে। ইচ্ছে হলেই পাতা উল্টিয়ে দেখে নেওয়া। স্কুল জীবন থেকেই লুকিয়ে ডায়েরী লেখার অভ্যাস গড়ে উঠেছিলো। লুকিয়ে বলছি কারণ আমি বড় হবার সাথে সাথে একটু চাঁপা স্বভাবের হয়ে উঠি। অনেক কথা বলতাম হয়তো সবার সাথেই কিন্তু নিজের কিছু একান্ত কথা কাউকেই বলতে পারতাম না।

আমার সে নীল ডায়েরীটা ছিলো আমার অতি আপন প্রিয় এক বন্ধু। খুব বিশ্বাসী আর কাছের এক বন্ধু। যাকে সব বলা যায়। এই ব্লগের পাতাটাও অনেকটা সেই রকম। ঠিক আমার ছোটোবেলার প্রিয় সেই নীল ডায়েরীটার মত না হলেও অনেকটাই তেমন।

আমি আমার এই প্রিয় বন্ধুটাকেও খুঁজে পেয়েছি এ বছরেই। আর সাথে কিছু অনেক অনেক বড় হৃদয়ের মানুষের দেখা পেলাম। যাদের অনেককেই আমার এই জীবনে ভোলা হবেনা। ২০০৮ আমাকে অনেক দিয়েছে। ক্লাস টেনে পড়তাম যখন, সে বছর প্রথম ডায়েরী লেখা শুরু করি।

আজ সেই প্রথম ডায়েরী থেকে তার পরবর্তী প্রতি বছরের ডায়েরীগুলো বের করে নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। হঠাৎ চোখ আটকে গেলো একখানে। যেখানে আমার প্রথম সমুদ্র দর্শনের বর্ণনা লিখেছিলাম। সমুদ্রের কাছে প্রথমবার যখন যাই তখন বিকেলবেলা। অনেক দূর থেকেই সমুদ্রের গর্জন কানে আসছিলো।

হেঁটে হেঁটে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম সমুদ্রের কাছে। সুর্য্যটা তখন ডুবু ডুবু। কিছুক্ষন পরেই সূর্য্যাস্ত দেখতে পাবো, সবাই বলাবলি করছিলো। খুব হইচই করছিলো সবাই। ডুবুডুবু সূর্য্যের মায়াবী আলো, উথাল পাতাল বাতাস আর সমুদ্রের গর্জনের সেই দারুন ভালোলাগাটা কিছুতেই আমি আজও ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনা।

আর ডায়েরীতে যখন লিখেছিলাম তখন তো আমি নিতান্তই কিশোরী। তবুও এক নিমিষে মনে পড়ে গেলো সেই বিকেলটা। সবার সাথে হাঁটছিলাম আমরা সমুদ্রতটে। কিন্তু আমার খুব খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো একা হয়ে যেতে। সমুদ্র আর ঐ বিকেলটার সৌন্দর্য্য একা একা নিজের মত করে মন দিয়ে অনুভব করতে।

আমাদের দলটা খুব হইচই হট্টগোল করছিলো। এত হট্টগোল হইচই এর মাঝে কি এত সৌন্দর্য্য মন দিয়ে অনুভব করা যায়??? দ্বিতীয়বার যখন গিয়েছিলাম, তখন আমি একুশ। সেবার আমি সবার থেকে সন্ধ্যাবেলাটাই ঠিকই একা হয়ে গিয়েছিলাম। চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ কিন্তু আমি একা একা বালুকাবেলায় হেঁটে গিয়েছিলাম বহুদূর!!!!!! সেদিনও মনে পড়ছিলো সেই কিশোরীবেলার সমুদ্র দেখার স্মৃতিটা। আরো একবার সমুদ্রের বালীয়াড়ীতে হাঁটতে চাই আমি।

যদিও সেটা স্বপ্ন। কখনও পুরণ হবে না হয়তো। কেন ? সে প্রশ্নের ঊত্তর শুধুই ঐ নীল ডায়েরীটাতেই লেখা যায়। সামনের দিন গুলো তার নিজের নিয়মেই বলে দেবে নতুন বসন্তের কথা। তবুও আমি মিস করি ফেলে আসা অতীত আর ফেলে আসা দিন গুলোকে।

সাথে সেসব দিনের ভালোলাগা ও ভালোবাসাগুলোকে। তাই নতুন বছরের প্রক্কালে সবাই যখন নতুনের বরনোৎসবে মেতে ওঠে আমি তখন চুপিসারে আনমোনা হই পেছনের বসন্তগুলোকেই ভেবে। যেখানে আর কখনও ফেরা হয়না। ফিরে যাওয়া যায়না। চলে যায় বসন্তের দিন ............................... সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।