আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ আসলে লড়াই হবে দাঁড়িপাল্লা বনাম দাঁড়িপাল্লার



দাঁড়িপাল্লার একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। কোন কিছু মাপার সময় দাঁড়িপাল্লার দুটি পাল্লা যখন সমান সমান হয়ে যায়, সেটা দেখতে কেন জানি ভালো লাগে। দোকানদারের প্রতি একটা গোপন শ্রদ্ধাবোধ জেগে ওঠে, লোকটা ভালোই। সৎ আছে। এই দাঁড়িপাল্লা আরো সুন্দর হয়ে ধরা দেয়, যখন তা আমাদের বিচার বিভাগের চিহ্ন হয়ে আঁকা থাকে আদালতের দেয়ালে অথবা রাখা থাকে বিচারকের টেবিলের সামনে।

আমরা আশ্বস্ত হই। ন্যায়বিচারের স্বপ্ন ধারণ করি বুকে। এমনি করে দাঁড়িপাল্লা অনেক জায়গাতে থাকে। আমরা নিয়মিত-ই সেসব দেখতে পাই। তবে একটা দাঁড়িপাল্লা আমাদের কখনোই দেখা হয়না।

একটা দাঁড়িপাল্লা আমরা নিজেদের ভেতরেই নিয়ে চলি। দেখি না। কিন্তু অনুভব করলে প্রতি পদে পদে টের পাই তার অস্তিত্ব। কারন আমরা আসলে সে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে পথ চলি প্রতিদিন। যে কোন কিছু করার আগে সে দাঁড়িপাল্লার-ই কাছে যাই।

মেপে নিই নিজেকে, নিজের কাজকে। মেপে নিই যা করছি তা কতটুকু ভালো। অথবা কতটুকু খারাপ। আমরা প্রতিদিন-ই সে দাড়িপাল্লায় মেপে মেপে যাই আমাদের অন্তর্গত বিষয়গুলো। ২. পৃথিবীর অধিকাংশ সৌন্দর্যের উপরই একটা বাজে দখল থাকে।

যে দখলে 'সৌন্দর্য' কখনো কখনো তার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়। হারিয়ে ফেলে নিজস্ব সত্তা। অনেক কিছুই সে সাক্ষ্য দেয়। ইরাকের উপর যখন বুশের দখল চলে আসে, তখন ঐতিহ্যের ইরাক হারায় তার সৌন্দর্য। পার্বত্য উপত্যকা আফগানিস্তান যখন তালেবান জঙ্গীদের শোষনে থাকে, সেখানেও চিরায়ত সৌন্দর্য হয় ভুলুন্ঠিত।

অথবা অতোদুর ইরাক অথবা আফগানিস্তানের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। এদেশের নদীগুলোর দিকেই তাকান, নদী যখন চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে। নদী যখন ভরাট হয়ে তা হয় ব্যবসার উপকরন তখন শুধু নদী নয়, নদীমাতৃক এই দেশও পড়ে যায় তার অস্তিত্ব সংকটে । তেমনি দাঁড়িপাল্লাও যখন দখল হয়ে, হয়ে যায় জামায়াতের প্রতীক, তখন কেন জানি দাঁড়িপাল্লা নামটা মুখে নিতেই অসম্ভব অসহ্য লাগে। ঘৃনা চলে আসে মনের অজান্তেই।

কষ্ট হয় ভেবে, একটা ভালো জিনিসকে কিভাবে অপবিত্র করে যায় একটা শ্রেণী। জামায়াত। তবে এটা ভেবে কষ্ট থাকেনা আর যাই হোক মনের দাঁড়িপাল্লায় তো আর জামায়াতের দখল নেই। যে দাঁড়িপাল্লা-ই আসলে প্রকৃত পরিমাপের জায়গা। ৩. আজ ২৯ ডিসেম্বর।

আমার যদি ভুল না হয়, তবে কয়েক বছর যাবৎ এই দিনটাকেই পালন করা হচ্ছিল ঘৃণা দিবস হিসেবে। যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের বিরুদ্ধে ঘৃনা প্রকাশের দিন এটা। আজ আমাদের নির্বাচন। বহুল আকাঙ্খিত নির্বাচন। এই নির্বাচন, অনেক কিছু নির্ধারনের নির্বাচন।

শুধু, কোন দল ক্ষমতায় যাবে সে নির্ধারণ না এই দিনে সবচেয়ে বড় নির্ধারনের বিষয় আমরা আসলে কতটা সচেতন হয়েছি? কতটা বুঝতে শিখেছি ভালো মন্দের পার্থক্য? কতটা চিনতে শিখেছি নিজেদের অস্তিত্বকে? কতটা ঘৃণা করতে শিখেছি আমাদের অস্তিত্ব বিনাশে লিপ্ত থাকা ঘৃণ্য পশুদের। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ আমাদের জয় হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় জয় হবে, যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে। তাদের কাগুজে, লোক দেখানো দাঁড়িপাল্লার বিরুদ্ধে জেগে উঠবে আমাদের ভেতরের দাঁড়িপাল্লা। যে পাল্লায় ওজন হবে আমাদের বিবেকের, বোধের, ওজন হবে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়া সেই সব মানুষগুলোর রক্তের।

আসুন শেষবারের মতো মনের দাঁড়িপাল্লায় মেপে নিই নিজেদের। প্রত্যাখান করি দাঁড়িপাল্লা ধারীদের। যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরকে। আসুন শেষবারের জানিয়ে দেই, আমাদের রক্তের অনুতে পরমানুতে এখনো নুর মোহাম্মদের রাইফেল গর্জে ওঠে। এখনো অসামান্য গতিতে ছুটে চলে মতিউরের যুদ্ধ বিমান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।