আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ অনুরোধ - একাত্তরের ঘাতকদের বর্জন করুন।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

বাংলাদেশ আজ একটা ক্রশ রোডে দাড়িয়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে শুরু হবে নাগরিকদের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ - ভোট উৎসব। আপনি যদি একজন ভোটার হন - আর আপনার এলাকায় কোন যুদ্ধাপরাধী সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়ে থাকে আর আপনি যদি কোন কারনে একবারও ভেবে থাকেন সেই যুদ্ধাপরাধীকে ভোট দেবেন। তাহলে আপনাকে অনুরোধ করবো - ভোট দেবার আগে একবার নিজের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন - - যে দেশে আপনি বাস করছেন, সেই দেশটাকে স্বাধীন করার জন্যে যারা জীবন দিয়েছে সেই শহীদদের কাছে আমাদের ঋনের পরিমান কতো? - আমরা কি আমাদের দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম নস্টকারীদের গাড়ীতে জাতীয় পতাকা উড়া দেখতে চান? - আপনি কি আবারো বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি - এই ধরনের মিথ্যাচার দ্বারা ভিভ্রান্ত হতে চান? - আপনি কি ৭১ এর আগে এ জন্ম নিলে একজন মুক্তিযুদ্ধা হতেন? - আপনি কি চান যুদ্ধাপরাধীরা বিচারের সন্মুখিন হউক? এরপর ভাবুন - দেশের শত্রু এই যুদ্ধাপরাধীদের ভোট দিয়ে কি আপনি নিজের বিবেককে পদদলিত করবেন? আপনার সুবিধার জন্যর নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী যুদ্ধাপরাধীদের সংক্ষিপ্ত বিবরন দেওয়া হলো। (২) আজ সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ব্যানারে অংশ নিতে যাচ্ছে চিহ্নিত ২৪ যুদ্ধাপরাধীসহ প্রায় অর্ধশত স্বাধীনতাবিরোধী প্রার্থী।

চিহ্নিত এসব যুদ্ধাপরাধীদের ১৮ জনই জামাতের টিকেটে চারদলীয় জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির ব্যানারে ৪ জন এবং মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে আছে আরো ২ ঘাতক যুদ্ধাপরাধী। ১) ’৭১-এর নরঘাতক আল-বদর বাহিনীর সমগ্র পাকিস্তানের প্রধান আজকের জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামী পাবনা-১ আসনে বিএনপি-জামাত জোটের প্রার্থী। একাত্তরে ‘মইত্যা রাজাকার‘ হিসেবে পরিচিত এই ঘাতক আল-বদর নেতা আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করে সদম্ভে বলেছিলেন, ‘এই দল পাকিস্তানের বির"দ্ধে পাকিস্তানি মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে তুলেছে। হাত মিলিয়েছে ভারতের সঙ্গে।

পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে। ’ কেবল তাই নয় নিজামী ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তান ধ্বংসের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তায় ওই সকল ব্যক্তিকে খতম করতে হবে যারা পাকিস্তানের বির"দ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ’ একাত্তরের ১৫ সেপ্টেম্বর জামাতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামেই নিজামীর ঘোষণার এই সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। ২) ’৭১-এ একজন সাচ্চা পাকিস্তানি হিসেবে নিজামী মুক্তিকামী বাঙালিকে কেবল শত্র"ই মনে করেননি, একই সঙ্গে তাদের ‘খতম’ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। ফরিদপুর-৩ আসনে খোদ বিএনপির প্রার্থীকে বাতিল করে দিয়ে ৪ দলীয় জোট নেত্রীকে ম্যানেজ করে জোটের প্রার্থী হয়েছেন আরেক নরঘাতক যুদ্ধাপরাধী জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ।

অসংখ্য অপকর্মের নেপথ্য নায়ক, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম সারির একজন একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান আল-বদর প্রধান মুজাহিদ। ৩) বিএনপিকে ম্যানেজ করে এবারো পিরোজপুর-১ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী সেজেছেন একাত্তরের কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য জামাতের বর্তমান কর্মপরিষদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায় বইয়ে স্পষ্ট করে বলা আছে, মওলানা পরিচয়ের অন্তরালে এই ঘাতক ধর্মের দোহাই দিয়ে দালালির পক্ষে নসিহত করতেন। হিন্দু নারীদের গনিমতের মাল উল্লেখ করে পাকি সেনাদের সহায়তায় চালিয়ে ছিলেন বীভৎস কর্মকাণ্ড। ৪) ‘একাত্তরের ঘাতক দাললরা কে কোথায়’ বইয়ে তো বটেই সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি এমনকি ইসলামী ঐক্যজোট প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় আছে এই ঘাতকের নাম।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি কুখ্যাত ফজলুল কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রামস্থ বাড়ি ও স্বউদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জেলখানাটি ছিল বাঙালি নিধনের কসাইখানা। ঘাতক ফললুল কাদের চৌধুরীর দুই ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী তাদের বাড়িতে বাঙালিদের ধরে এনে নৃশংস নির্যাতন চালাতেন। স্বাধীনতার পরপরই বিচারাধীন অবস্থায় হার্টফেল করে মারা যায় ঘাতক ফজলুল কাদের চৌধুরী। কিন্তু বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয় ও কুণ্ডেশ্বরী বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকাণ্ডসহ অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ও বীভৎস নির্যাতনের নায়ক দুই ভাই বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হিসেবেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ৪ দলীয় জোটের ব্যানারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম-৬ আসনে এবং একই প্রতীক নিয়ে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম-৫ আসনে।

৫) রংপুর-২ আসনে ৪ দলের প্রার্থী হয়েছেন জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। দাঁড়িপালা প্রতীকে দাঁড়ানো একাত্তরের এই ঘাতক ছিলেন নরঘাতক আল-বদর বাহিনীর রাজশাহী জেলা শাখার প্রধান। স্বাধীনতার ৩৭ বছর পরও কুখ্যাত ঘাতক মওলানা সুবহানকে দেখলে ভয় পান পাবনার মানুষ। একাত্তরের তার নৃশংস চেহারার আজো কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তার বীভৎস চেহারার ভয়াবহ প্রমাণ পেয়েছিল পাবনার মানুষ।

আজকের নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই ২০০১ এর আতঙ্কে ভূগছেন পাবনাবাসী। কারণ নির্বাচনেও জামাতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য পাবনা-৫ আসনে চারদলের প্রার্থী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। ৬) নিজ দল ও জামাতের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে জয়পুরহাট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আরেক ঘাতক আবদুল আলীম। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিকামী বাঙালিদের সারিতে দাঁড় করিয়ে নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তৎকালীন জয়পুরহাট মহকুমার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এই নরঘাতক।

৭) মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিকামী বাঙালির ওপর নৃশংসতা চালিয়ে সাতক্ষীরা অঞ্চলে বাঙালিদের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছিল নরঘাতক আল-বদর নেতা আব্দুল খালেক মণ্ডল। তার নৃশংসতা এমন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জল্লাদ খালেক’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন কুখ্যাত এই ঘাতক। অথচ ‘জল্লাদ খালেক’ খ্যাত একাত্তরের এই যুদ্ধাপরাধী নরঘাতক আল-বদর আব্দুল খালেক মণ্ডল নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে বিএনপি-জামাত জোটের প্রার্থী। গাইবান্ধা-১ আসনে জামাতের প্রার্থী আবু সালেহ মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মিয়ার পায়ে এখনো আছে মুক্তিযোদ্ধাদের করা গুলির নমুনা। একাত্তরে ৪ দলীয় জোটের এই যুদ্ধাপরাধী প্রার্থী ছিলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রাজাকার বাহিনীর সদস্য।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে জামাতের প্রার্থী এম রিয়াসত আলী বিশ্বাস ছিলেন আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের শান্তি কমিটির সেক্রেটারি। সরাসরি হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ নানা দেশ-বিদেশী তৎপরতায় জড়িত হয় এই ব্যক্তি। ৮) একাত্তরের কুখ্যাত শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর কেন্দ্রীয় সংগঠক শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস খুলনা-৬ আসনে জামাতের টিকেটে ৪ দলের প্রার্থী। দাঁড়িপাল্লার প্রতীকে ঐ আসনে নির্বাচন করছেন একাত্তরের এই রাজাকার। ৯) চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জামাতের প্রার্থী মওলানা হাবিবুর রহমান ছিলেন জেলা শান্তি কমিটির সদস্য।

সক্রিয় সদস্য হিসেবে চালিয়েছিলেন অপতৎপরতা। সিলেট বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল জানিয়েছেন, সিলেট-৫ আসনে জামাতের প্রার্থী ফরিদউদ্দিন চৌধুরী আল-বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১০) ভোলা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মোশারেফ হোসেন শাজাহান। একাত্তরে যার ভূমিকা ছিল সরাসরি দেশের বিরুদ্ধে। ১১) কক্সবাজার-১ আসনে জামাতের প্রার্থী এনামুল হক মঞ্জু মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন।

একই সঙ্গে ছিলেন আল-বদরের কমান্ডার। ১২) খোদ রাজধানী ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী একাত্তরের আরেক যুদ্ধাপরাধী এস এ খালেক। পুরোপুরি অক্ষরজ্ঞান শূন্য এই যুদ্ধাপরাধী একই এলাকা থেকে ২০০১ এর নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। ১৩) একাত্তরে কুখ্যাত রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সহায়তায় খূলনা অঞ্চলে মুক্তিকামী বাঙালি ও তাদের ধনসম্পদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন চিহ্নিত ঘাতক যুদ্ধাপরাধী মিয়া গোলাম পরওয়ার। এরপর গত নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে ৪ দলীয় জোটের ব্যানারে জামাতের এই নেতা জয়ী হলে পুরো অঞ্চলের মানুষ আবার দেখতে পেলো তার যুদ্ধাপরাধী ভয়ঙ্কর চেহারা।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দেশব্যাপী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গণদাবির মধ্যেও আজকের সংসদ নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের ব্যানারে অংশ নিতে যা"েছন একাত্তরের এই ঘাতক জামাত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার। ১৪) মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা যুদ্ধাপরাধীদের যে ৫০ জনের তালিকা প্রকাশ করেছিলেন তাতে প্রথম সারিতেই আছেন একাত্তরের আরেক ঘাতক ধর্মব্যবসায়ী জামাত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম। অথচ জামাতের টিকেটে সাতক্ষীরা-৪ আসনে আজকের নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের ব্যানারে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে অংশ নিয়েছেন একাত্তরের এই ঘাতক। ১৫) বাগেরহাট-৪ আসনে ৪ দলীয় জোটের ব্যানারে নির্বাচন করছেন সাবেক সাংসদ আরেক স্বাধীনতাবিরোধী জামাত নেতা মুফতি আবদুস সাত্তার আকন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করতে যাওয়া এই ব্যক্তি জোট সরকারের পুরো মেয়াদে ভয়াবহ অপকর্মের জন্য চিহ্নিত হয়েছিলেন ‘গণশত্র"’ হিসেবে।

১৬) সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় আছে একাত্তরের আরেক চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী আবু সাইদ মোঃ শাহাদাত হোসেন। ৪ দলীয় জোটের ব্যানারে ২০০১ এর পর এবারো যশোর-২ আসনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদী নেতা। এছাড়া, ৪ দলের ব্যনারে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, ফজলুর রহমান সুলতান ময়মনসিংহ-১০, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে মোহাম্মদ সামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান সরাসরি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। (দৈনিক ভোরের কাগজের সৌজন্যে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।