সুখি হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় বিবেক হীন হওয়া।
একটু তাড়াহুড়ো করে আমাদের আগ্রার পথে রওনা হওয়ার উদ্দেশ্য শেষ বিকেলের আলোয় তাজমহলের অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করা। কিন্তু এবারো আমাদের সকল প্ল্যান ভেস্তে যাওয়ার যোগাড় হল। ভিলেন বরাবরের মত সেই ড্রাইভার। ব্যাটা এমন স্লো ড্রাইভ করছে যে আগ্রা পৌঁছতে কয় ঘণ্টা লাগাবে আল্লাহ মালুম।
আজমির ছেড়ে আসার পথে দু পাশের পাথুরে পাহাড়গুলো আবারো নজর কাড়ল।
কিছুদূর পর আমরা পাহাড় ফুঁড়ে বানানো একটা টানেলের দেখা পেলাম। টানেলের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার….ঠিক যেন ভূতের গলি।
টানেল পার হতে গিয়ে গা একটুখানি ছমছম করে উঠল। প্রিন্সেস ডায়না এরকম কোন এক টানেলেই তো এক্সিডেন্ট করেছিলেন পাপারাজ্জিদের কবল থেকে পালাতে গিয়ে।
তবে সেটা ছিল সম্ভবত প্যারিসের কোন রাস্তায়।
যে কোন জার্নিতে আমার একটা বাজে অভ্যাস হচ্ছে জানালায় সর্বক্ষণ চোখ রাখা। উদ্দেশ্য যাতে দর্শনীয় কোন জিনিস মিস হয়ে না যায়। কিন্তু অনেককে দেখি পর্যটন ট্যুরে এসেও জার্নি সময়কালীন অবসরে চোখ বন্ধ করে ঘুমায়। নির্দিষ্ট ভেনু ছাড়া অন্য জিনিষের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
কিন্তু আমার এইম থাকে অল্প পরিশ্রম ও ব্যায়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি যত বেশী সমৃদ্ধ করা যায়। হিসাব করলে দেখা যায় মানুষের জীবনের একটি বিরাট অংশ ঘুমের পেছনে ব্যয় হয়। তাই ঘুরতে এসে ঘুমিয়ে সময় অপচয়ের কোন মানে হয়না।
আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে কোন এক মফঃস্বল শহরের বুক চিরে। আশে পাশে রয়েছে প্রচুর সবুজ গাছ গাছালি।
এ রকম পরিবেশে কিছু বন্য প্রানি দেখতে পাওয়া অসম্ভব কিছু না। কিছুদূর যাওয়ার পর দূরে একটা ক্ষেতের পাশে সবুজ রঙয়ের কিছু নড়েচড়ে উঠতে দেখে মন বলে উঠল ইউরেকা………. এতক্ষণ আমার অনুসন্ধিৎসু মন ওকেই যেন খুঁজে ফিরছিল। ক্ষেতের একপাশে ইটের দেওয়ালের উপর বসে আছে অদ্ভুত সুন্দর একটা ময়ূর।
সাথে সাথে আমি চিৎকার করে ড্রাইভারকে বললাম- রুখ যাও। এই প্রথম কড়া ধমক খেয়ে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ড্রাইভার ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল।
ওকে বুঝিয়ে বলা হল যে আমরা ময়ূর দেখব। আমি গাড়ি থেকে নেমে ময়ূরের ছবি তুললাম। চুপচাপ লক্ষ্মী ছেলের মত বসে আছে সে। এ রকম প্রাকৃতিক পরিবেশে ময়ূর দেখার যে থ্রিল, তা চিড়িয়াখানার খাঁচায় হাজার ময়ূর দেখেও পাওয়া যাবে না মোটেও। এরপর সামনে গিয়ে আরও অনেক ময়ূরের দেখা মিলল।
এক ক্ষেতে দেখতে পেলাম বিশাল এক ময়ূরের ঝাঁক। সংখ্যায় ৫০-৬০ টা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত ওদের ছবি তুলতে পারিনি। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম খুব কাছে থেকে ময়ূরের একটা স্ন্যাপ নিব। যেই ভাবা সেই কাজ।
একটাকে টার্গেট করে আস্তে আস্তে এগুতে থাকলাম। কিন্তু কিভাবে যেন সে টের পেয়ে সচেতন হয়ে গেল। আমাকে আরও কাছে ভিড়তে দেখে সচকিত হয়ে দিল ভোঁ দৌড়…….
রাস্তার মাইল পোস্ট বলছে আগ্রা আর বেশি দূরে নয়।
কিন্তু মেঘে মেঘে কখন যে অনেক বেলা হয়ে গেল সেটা টের পাইনি ময়ূর সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে কিছুটা সম্মোহিত হয়ে পড়ার কারনে। খুব কাছ থেকে আগ্রা ফোর্ট দেখলাম।
সম্রাট শাহজাহান আপন পুত্র কর্তৃক বন্দী হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলি এখানেই কাটিয়েছিলেন।
আমরা হোটেল খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যা নেমে এল। নাহ আজ আর তাজমহল দর্শন হবেনা। তাই আপাতত আশেপাশের সৌন্দর্য অবলোকনে মনস্থির করলাম। ভাল রুম খুঁজতে গিয়ে এক হোটেলের বারান্দায় গিয়ে দেখি পাশের বিল্ডিঙয়ের ছাদে কয়েকটা বাঁদর বসে ঘুড়ি উড়াচ্ছে।
কি অবাক কান্ড!!!
আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত হোটেল পেয়ে গেলাম। খানিক ফ্রেশ হয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম একটু ইভনিং ওয়াকের পাশাপাশি সাইট সিইং করার অভিপ্রায়ে।
সাইট সিইং শেষে ইটিং পর্বও সমাধা হয়ে গেল। ব্যস এখন ঘুম পরীর দেশে না গেলেই নয়। কাল সকালে ফ্রেশ মুডে তাজমহল দেখতে যেতে হবে না ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।