আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময় এসেছে সামনের দিকে তাকানোর

http://shudipto.co.nr

আগামীকাল বহুল প্রত্যাশিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশে যারা আছেন তাঁরা ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তার মূল্যবান ভোটটি কাকে দেবেন। যারা প্রবাসে আছেন, তাঁরাও দূর থেকে নির্বাচন সম্পর্কিত সব খবরাখবরই রাখছেন। স্যাটেলাইট চ্যানেল আর ইন্টারনেটের যুগে পৃথিবী অনেক ছোট হয়ে গেছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল বিদেশে যাঁরা আছেন তাঁরা কোন কোন সময় খবর জানাতে দেশের মানুষের চেয়েও এগিয়ে থাকেন।

আমার কয়েকজন প্রবাসী আত্মীয়র সাথে কথা বলে আমার এমনটাই মনে হয়েছে। বাংলাদেশে দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দল - বিএনপি আর আওয়ামী লীগ। তারা যেহেতু এখন আর একক নির্বাচন করছে না, তাই তাদের নতুন নাম হয়েছে চারদলীয় জোট আর মহাজোট। বাংলাদেশের মানুষেরা মূলত এই দুটি দলকেই ভোট দেবে এবং নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এ দুই দলের মাঝে থেকে কেউ ক্ষমতায় আসবে। অনেকে আগাম ভবিষ্যৎ বাণী করছেন কোন দল ক্ষমতায় যাবে সেটা নিয়ে - যার বেশির ভাগ আসলে বিশ্লেষণ নয় বাগাড়াম্বর এবং ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ, তবে আমি সেদিকে যাচ্ছি না।

কারণ আমার লেখার মূল বিষয় নির্বাচনে কে জিতবে সেটা নয়, বরং নির্বাচনের পরে আমরা কিভাবে জিততে পারি সেটা। বাংলাদেশ এখনও একটি নবীন রাষ্ট্র। স্বাধীনতার মাত্র ৩৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, যা আপাতদৃষ্টে অনেক লম্বা সময় মনে হতে পারে। কিন্তু মুশকিল হল আমাদের গণতন্ত্রের বয়স মাত্র ১৫ বছর (২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়টি নিঃসন্দেহে গণতন্ত্র নয়)। গণতান্ত্রিক অভ্যাসগুলোও এখনও আমাদের মাঝে ঠিকমত গড়ে ওঠে নি।

এর আরেকটি প্রধান কারন হল শিক্ষার হার। জাতি হিসেবে আমাদের সবচেয়ে গর্বের যে জায়গাটি সেখানেই আমাদের কলঙ্ক। আমাদের সেরা অর্জন ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা। আমরা সবাই জানি সেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল দুটি প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে। একটি ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী।

আর একটি (এবং আমার মনে হয় এরাই আমাদের আসল শত্রু) ছিল আমাদের দেশে জন্ম নেয়া কিছু মানুষ যারা আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং সর্বতোভাবে সাহায্য করেছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে। শুধু তাই নয়, পরাজয় নিশ্চিত জেনে এরা রাতের আঁধারে ডেকে নিয়ে নিয়ে খুন করেছিল আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, উদ্দেশ্য ছিল জাতি হিসেবে আমাদের পঙ্গু করে দেয়া। পৃথিবীর কোন দেশেই যুদ্ধাপরাধীদের এত সাদরে গ্রহণ করা হয় নি যতটা হয়েছে আমাদের দেশে। আমরা যদি শুধু রাজনীতিবিদদের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে চাই, তাহলে হয়ত তা করতে পারব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইতিহাসের পাতায় আমাদের নাম লেখা হবে এক কলঙ্কিত জাতি হিসেবে যারা তাদের জন্মশত্রুর পদলেহন করে এসেছে সারা জীবন।

সেই সাথে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পরবর্তী প্রজন্ম। বিগত পুরুষের ব্যর্থতার দায় হয়তো তারা ঘোচাবে দেশকে আবার ৭১ পূর্ববর্তীসম অন্ধকার কোন অধ্যায়ের দিকে নিয়ে। আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। যে যাই বলুক, এ কথা অনস্বীকার্য যে গত ২০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের নতুন একটি ধারা। এরা রাজনীতিতে অতটা সক্রিয় নয়, কিন্তু এরা রাজনৈতিক ঘটনাবলী নিয়ে সব সময়ই সচেতন।

তারা মূলত চায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অবশ্যই গণতন্ত্রের মাধ্যমে। রাজনীতিবিদরা যাই বলুন না কেন, এদের মতামতই আসলে তাদের প্রভাবিত করে। তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনও এই গোষ্ঠীর চাহিদার মুখেই সৃষ্টি হয়েছিল। সেটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে, নাকি খারাপ সেটা ভবিষ্যৎ ভালো বলেব। এবারে অনেকেই নৈরাশ্যবাদী হয়ে বলছেন, সবকিছুই আগের মতই থাকল - কিছুই তো পরিবর্তন হল না।

তাদের বলি, চিন্তা করে দেখুন এই আপনিই কি বছর দুয়েক আগে বলেন নি 'না' ভোটের কথা? 'না' ভোট যদিও নির্বাচনে কোন প্রভাব রাখবে বলে আমি মনে করি না, কারণ আমি আপনি হয়তো 'না' ভোটের মর্ম বুঝছি, কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তা দুর্বোধ্য রয়ে গেছে প্রচারণার অভাবে। আর যারা বুঝেছেন, তাদেরও একটি বড় অংশ নিজেদের দুই দলের গণ্ডি থেকে বের করতে পারেন নি। অথবা বলা যেতে পারে বের করার চেষ্টাই করেন নি। কালকের নির্বাচনে কোন দল জিতবে তা আমি জানি না। কিন্তু আমরা, অর্থাৎ জনগণ যদি জিততে চাই তাহলে এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে।

আর সচেতনতার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল, যুদ্ধাপরাধীদেরকে রাজনীতি থেকে বিতারণ করা এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমরা যে গ্লানি গত ৩৭ বছর ধরে বহন করে আসছি তার অবসান ঘটানো। একই সাথে আরো একটি বিষয় নিয়েও চিন্তা করার প্রয়োজন আছে, সেটা হল যুদ্ধাপরাধীদের দ্বিতীয় প্রজন্ম। এরা হয়ত নিজেরা সরাসরি যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিলো না, কিন্তু তাদের মন মানসিকতা সেরকমই। এরা এখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের পেশার সাথে যুক্ত হয়ে। তাদের মূল লক্ষ্যও কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষের মতই।

সুতরাং বৃদ্ধ যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা তাদের হাত থেকে মুক্তি পাবো এমন ভ্রান্ত ধারণা যেন আমাদের পেয়ে না বসে। আসুন আমরা সামনের দিকে তাকাই এবং সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে প্রতিহত করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হই। অনেক না পাওয়ার মাঝেও এটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।