আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিসমাস...সান্তা ক্লজ...গিফট ফ্যান্টাসি... এবং ......আজকের বাংলাদেশ............



ক্রিসমাসের উৎসবটা আমার কাছে খুব ছোটবেলা থেকেই একটা অন্যরকম অনুভূতির জায়গা দখল করে আছে। স্কুল জীবনের শুরু একটা মিশনারি স্কুল দিয়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তারপর তিন বছর অগ্রনীতে পরেছি। অতঃপর দুই বছর ওয়াই ডব্লিউ সি এ তে পড়ে ক্লাস সিক্সে হলি ক্রসে ঢুকে একেবারে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম।

অগ্রনী স্কুলে পড়ার সময়টুকু ছাড়া বাকীটুকু আমার কেটেছে মিশনারি প্রতিষ্ঠানেই। ফলে ক্রিশ্চিয়ানিটি আর ক্রিসমাস জাতীয় বিষয়গুলো খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি সবসময়। ছোট ছিলাম যখন, কার্টুন গুলোতে ক্রিসমাস ট্রি, লাল-নীল বল, সান্টা ক্লজ, রেইনডিয়ার এসব দেখতে দেখতে ভাবনায় বিভোর হতাম যে সান্তা ক্লজ আমার ঘরেও আসবে। একটা বড় উপহারের বাক্স রেখে যাবে। সাথে থাকবে অনেক অনেক মজার মজার চকোলেট... কিন্তু সান্তা আসতোনা।

সান্তার জন্য লিস্টি বানাতাম। কি কি চাই আমার। তাকে চিঠি লিখতাম। কিন্তু সে আসতোনা। একসময় ভাবতাম, সান্তার বুঝি খুব গরম লাগে এই দেশে এলে...কিংবা আমার ঘরের ওপর চিমনি নেই বলে বুঝি ও ঢুকতে পারেনা।

...কিংবা আমার ঘরে ক্রিসমাস ট্রি নেই বলেই হয়তো এদিকে ফিরেই তাকায় না। ...কিংবা সান্তা কেবল ক্রিশ্চিয়ানদের ঘরেই যায়...... কিন্তু সান্তা তো সবজান্তা। নর্থ পোলে তার গোপন আস্তানায় বসে সে তো সবার খবরই পায়। কোন বাচ্চাটা এবার অনেক উপহার পেয়েছে বলে খুশিতে ধেই ধেই করে নাচছে, কিংবা কোন বাচ্চাটা কিছুই পায়নি বলে রাস্তার ধারে মুখ গোমড়া করে বসে আছে...সবার কথাই জানে। তাহলে আমার কথা জেনেও কেন সান্তা আমার ঘরে আসেনা??... এরকম ভাবতে ভাবতে বড় হলাম...ছোটবেলার উচ্ছাসটা কেটে গেলো, কিন্তু সান্তা মনের মধ্যে রয়েই গেলো।

সান্তার কাছে প্রতি ক্রিসমাসে উপহার চাওয়াও বন্ধ হলোনা। এখনো চাই... তবে সান্তা সম্বন্ধে এখন চিত্রায়নটা ভিন্ন। না, তার লাল-সাদা পোশাক, লম্বা-সাদা দাড়ি, রেইনডিয়ার চালানো রথ, উপহারের ঝুলি এই অবয়বটা চেঞ্জড হয়নি। কিন্তু এখন মনে হয় সান্তা ঠিকই সবার ঘরে আসে। উপহারও দিয়ে যায়।

কিন্তু সেই উপহার তার মতই অদৃশ্য। সে হয়তো কারো মনে দিয়ে যায় আনন্দ, কারো মনে ভালোবাসা, কারো জন্য সততা, কারো জন্য নিঃস্বার্থপরতা.........হয়তো সোনালি-রূপালি ম্যাজিক পোশন এর মত সেগুলো সান্তা ছিটিয়ে দিয়ে যায় সবার ঘরে...... আমার ঘরেও নিশ্চয় আসে...আমি টের পাইনা......কিন্তু ঠিক কী কী যে সে দিয়ে যায়, তাও তো বুঝিনা...... গতবার বোধহয় বেশি কিছু দিয়ে যায়নি আমায়......তাই হয়তো বছরটাও ভালো যায়নি সবমিলিয়ে......আজ রাতে সান্তা কী নিয়ে আসবে আমার জন্য????... সান্তা আছে কি নেই সেই বিতর্কে আমরা নামতেই পারি। যুক্তিখন্ডন করতে পারি। বলতে পারি সান্তা একটা ফ্যান্টাসি...... হলোই বা। ফ্যান্টাসিতে একটু গা ভাসাতে সমস্যা তো নেই... বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা ফ্যান্টাসিতে যাইনা কেন??...সান্তার কাছে আমরা চাইতে পারিনা 'একটা সুন্দর বাংলাদেশ'???...বাংলাদেশ একটা রূপকথার রাজ্যের মত হয়ে উঠুক, সেইটা ভাবতে পারিনা??......সান্তা আজ রাতে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সততা, বন্ধুতা, ভালোবাসা, উদারতা.........এরকম সব উপহার দিয়ে যাক......দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো তাদের নিজেদের নিয়ে দুঃখিত হোক, যুদ্ধাপরাধী রাজাকারেরা তাদের কৃতকর্মের জন্য অপরাধীবোধ করুক, তোষামোদী রাজনীতিবিদেরা নিজেদের স্বার্থ ভুলে দেশের জন্য ভাবুক......বড় বড় নেতা-নেত্রীরা পারস্পরিক কোন্দলের জের ধরে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করুক একটা 'স্বাধীন-সুন্দর' বাংলাদেশের জন্য......... বাংলাদেশের জন্য যা কিছু ভালো সব হোক...আর বাংলাদেশের জন্য ভালো করার জন্য যা যা দরকার সান্তা একটু একটু করে যদি সবার ঘরে সেগুলো বন্টন করে দিয়ে যায় তাহলেই তো হলো।

কোটি কোটি মানুষ এখানে। সবার মিলিত শক্তির পরিমাণটা কিন্তু কম হবেনা......... সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা.........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।