আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনে হয়...নিতান্তই ইহা একটি গল্প..... কিংবা........



শেষ বিকেলের রৌদ্দুর তীর্যক ভাবে ছুয়ে গেছে জল। ঝিকীমিকী নৃত্য জলতরঙ্গে। হাওয়া বইছে। এক ধরনের হিম ছড়ানো। অনেক দূরের দৃষ্টিসীময়ি শফেদ পটভূমি।

কুয়াশায় বুনা বিশাল এক মসলিন যেন সেই কতটা দূরে ঝুলে আছে! এই নদীটির তীর প্রতিদিন অসংখ্য পদচারণায় সজীব হয়ে উঠে। কিছু গল্পের শুরু এবং কিছু স্বপ্নের লীন হওয়া বিদূঢ় গল্পও এই নদীটির জল বয়ে নিয়ে যায় অনেক দূর, যেন হারিয়ে যায়। যাতে কেউ খুজে না পায়। আমি আর জয়ুমিতা প্রায়ই আসতাম এখানে। নদীর ঢালু তীরে বসে কতদিন কত গল্পে আমরা ছাড়িয়ে গিযেছি কত সীমানা।

"ওই দেখ্ দেখ্ একটা কি যেন জলে ডুব দিল?" প্রিয় অখন্ড নিরবতা (দু'জনেরই) ভঙ্গ হত তার কোন বিস্ময় ধ্বনিতে। আমি কিছুটা সময় নিয়ে বলতাম "ওটা পানকৌড়ি। " তার মুখের দিকে তাকিয়ে। জয়ুমিতার চোখ ততক্ষনে খুজে বেড়াচ্ছে পানকৌড়িটাকে। "আর একটা নয় দুটো......ওরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে।

" জয়ুমিতা এবার তাকাত আমার দিকে। আমি হাসতাম। "ইস্ যদি আমি জলে ডুব দিতে পারতাম!" বলত সে। এদিকে আমি একটা কচি ঘাস তুলে নিয়েছি। হঠাৎ করেই বললাম " ইস্ তোর মাথার চুলগুলো যদি সব কচি ঘাস হয়ে যেত!" "হোয়াট" ধ্বনি তার।

আমি প্রচন্ড হাসিতে ফেটে পড়ি। "তোর ভয়ংকর হাসি বন্ধ কর্ ......ফুল স্টপ। " কিন্তু আমার হাসি থামতেই চায় না। কিছু লোকজন বোধহয় আমাদের দিকে ফিরেও তাকায়। "দেখ্ আমাদের দিকে লোকজন কিভাবে তাকাচ্ছে, কি ভাববে তারা?" তবুও হাসি থামে না আমার।

ঠোটের কোনে হাসি জমে। জয়ুমিতা রাগ দেখায়। মেয়েরা এটা ভাল পারে। মুখায়বে ঙ এর মত একটা ভঙ্গি ধারন করে। বলি আমি "জলের মাঝে ডুবার এত সাধ কেন রে?"...."আচ্ছা এই জলের নিচে কি আছে?" বলে জয়ুমিতা।

এভাবেই আমরা প্রতিক্ষনে কথোপকথনের মানচিত্রহীন পথে নতুন মানচিত্র এঁকে যাই। আবার বলি "একটা আঙ্গুল ধরবি?" অনামিকা এবং মধ্যমা বাড়িয়ে দিই। "শুধু একটা?" জয়ুমিতা বলে এবং আমার মধ্যমা তার স্পর্শ অনুভব করে। "না আজ জলের নিচে ডুব সাতার নয়.......মনি-মুক্তো অন্যদিন খুজব.....তুই একা যেতে চাইবি......জানতে কি আছে জলের নিচে অচেনা ঠিকানায়......" জয়ুমিতা হাসে। বড়ই নিঃশব্দে।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি 'মোনালিসা' আঁকার পূর্বে বুঝি এরকম কোন হাসি দেখেছিলেন। আমি মুগ্ধ হই আরও। "যদি অনামিকা ধরতিস তবে না হয় এখনই জলে ডুব দিতাম....... ......একসাথে। " ভেবেছিলাম জয়ুমিতা আমার কথা শুনে বুঝি কিছু বলবে। সে উঠে দাড়াত।

আমিও। তখন নদীর তীর ধরে হেটে যেতাম কিছটা পথ। এলোমেলো হাওয়ারা আমার প্রতিদ্বন্দী হয়ে জয়ুমিতার চুলে খেলা করে। "জ্বরের ঘুরে ভাল থাকি........দেখতে আস কেমন আছি........রাখো হাত কপালটায়.......পুড়ে যাওয়ার কিছু থকে না বাকি..........একা হয়ে শুয়ে আছি..........একা আমি স্বপ্নবাজ.........জ্বরটা এলই বুঝি বাচি.........তুমি এসে পড়বে আজ........তোমার জ্বরে আমি পুড়ি........প্রতিদিন প্রতিরাত....... পুড়ি বলেই আসো তুমি.......অনিচ্ছাতেও রাখতে হাত। " বাপ্পার এই গানটা আমার জোশ লাগে।

সেবার প্রচন্ড জ্বরে হাসপাতালের বেডে যখন চারটা দিন ভীষণ একা হয়ে ছিলাম, জয়ুমিতা ছিল আমার নিঃসঙ্গতার কাংখিত শত্রু হয়ে। দীর্ঘ সময়। তার সেবা আজও লালন করে চলেছে আমার দেহ। কখন যে সে আসত কিংবা যেত প্রথম দুই দিন কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। তৃতীয় দিন যখন স্বজ্ঞানে বসুন্ধরা ধরা দেয় দেখি তার ক্লান্ত মুখায়ব।

একজন মানুষের চেহারা কতটা দুশচিন্তায় বিধ্বস্ত হলে দক্ষ চিত্রকরের অংকিত ছবির মতই ফুটে উঠে তা প্রথম বুজেছিলাম। "এখন বুঝি আমার পালা" বললাম আমি। "মানে" বলল সে। "দ্বিতীয় মাদার তেরেসা হবি নাকি.........তোর অবস্থা তো আমার চেয়েও খারাপ দেখছি" বলার পর সে হাসল। এ হাসির জন্যই আমাকে হাজার বছর বাচতে হবে।

তারপর প্রতিদিনই গল্পগুলো গাঢ় হয়। আকাশ নিলীমায় জমে আরও নীল। লোভে লোভে একদিন ক্যাম্পাসে জয়ুমিতার সামনে প্রবল বৃষ্টিতে ভিজলাম। জ্বর পালিয়েছে বুঝি অনেকটা দূরে। আসলই না।

বুঝলই না আমার বৃষ্টিতে ভিজার গূঢ় রহস্য। পাদটীকাঃ ........ গল্পটা এখানেই শেষ করতে হচ্চে বলে আশ্রয় নিচ্ছি পাদটীকার। জয়ুমিতা এবং আমি এখনও আছি। তবে সংগীত এখন অচেনা সুরে........অবস্থান যোজন যোজন দূরে........। ভীষণ অজানায়।

কেন? যদি কেউ গল্পটা পড়ে থাকেন তবে তার কল্পনা শৈলীর উপরই ছেড়ে দিলাম। আমাদের প্রচিলিত সমাজ ব্যাবস্থায় এরকম ঘটার যে কয়েকটি কারন চিহ্নিত করা যায় তারই কোন একটি আমদের ঠেলে দিয়েছে কতটা যে দূরে..........। এটা অনাকাংখিত গল্প। স্পষ্ট করা তাই নিষ্পোয়জন। নয় কি?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।