আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব।
দুই ভাই। যমজ।
নাম তাদের বুদ্ধদেব আর মহাবুদ্ধ।
দুজনেই ভীষণ হাবাগোবা। তা তারা নিজেরা বোঝে না। তাদের বিশ্বাস, আমি আমার ভাইয়ের চেয়ে
ঢের বেশী বুদ্ধিমান। বিচক্ষণ।
দূরদর্শী। এক কথায় যাকে বলে, বুদ্ধ।
গ্রামের মানুষজন তাদের এই পারস্পরিক রেষারেষির কথা জানে। বিষয়টি তারা উপভোগ করে। মজা
করার জন্যে, একজনকে অন্যজনের বিরুদ্ধে তাতায়।
রাস্তায় বুদ্ধদেব যাচ্ছে ,কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরলো--জানো ,মহাবুদ্ধ তোমার জন্য কি বলছিল ?
--কি বলছিল ? মহাবুদ্ধের নাম শুনলেই জ্বলে ওঠে বুদ্ধদেব।
--বলছিল, বুদ্ধদেব আসলে একটা বুদ্ধু, আসল বুদ্ধ তো আমি।
বুদ্ধদেব হাসে । বলে--আরে ওর নাম যে কেন মহাবুদ্ধ, তাই ভাবি। আসলে ও একটা মহাবুদ্ধু।
বুদ্ধু
না হলে কি কেউ অংকে গোল্লা পায়?
কথাটা মহাবুদ্ধের কানে ওঠে। সে রাগে। তবু ক্রোধ দমন করে হেসে-হেসে বলে--বুদ্ধু, বুদ্ধু, আমার
দাদাটা না একেবারে বুদ্ধু, আরে ত্রিপিটকের বুদ্ধদেব কি অংক কষতেন? তিনি ছিলেন বুদ্ধ, মানে
কিনা জ্ঞাণী। আর ওই জ্ঞাণ জিনিষটা কি অংকে আছে? অংকে গোল্লা পেলেও কিছু যায়-আসে
না। আসল জ্ঞাণ আছে বিজ্ঞাণে।
সেই বিজ্ঞাণে কে ফেল করেছে জানো? হুঁ-হুঁ, তোমাদের ওই
অংক-বিশারদ বুদ্ধদেব। তারমানে আমি আসল বুদ্ধ আর দাদা মহা বুদ্ধু।
আড়ালের তর্কযুদ্ধ একদিন সামনে চলে আসে। দুই ভাই মুখোমুখি হয়। নিজের-নিজের যুক্তিতে
কেউ হার মানতে রাজী নয়।
ফয়সালা আর হয় না।
হাসতে-হাসতে দুই ভাইকে কুস্তি লড়িয়ে দিল সকলে। কেউ কাউকে ছাড়ে না। দুজনেই আছাড়-
পিছাড় খায়। ভিড়ের মাঝে হাততালি পড়ে।
হার-জিৎ আর হয় না।
শেষমেষ প্রস্তাব উঠলো--দুজনেই চলে যাও নদীর ধারে। ওখানে বুড়ো বটগাছের নিচে তপস্যা
করো। তাতে নিশ্চয় বোঝা যাবে, কে আসল বুদ্ধু।
দুই ভাই ছুটলো নদীর ধারে।
পদ্মাসনে বসে ধ্যানমগ্ন হলো দুজনে। বুদ্ধত্বের প্রমাণ কি যে-সে
কথা!
বটগাছের সবখানে কাঠপিঁপড়ের ভিড়। তাদের কামড়ে দুই ভাইয়ের প্রাণ অস্থির। তবু নির্বিকার
দুজনে। শরীরের জ্বলন সহ্য করা যায় কিন্তু না জিতলে যে মনের জ্বলন কমবে না।
মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে, বুদ্ধদেব তা টের পেল। বলল--ভাইরে গেলুম।
--পিঁপড়েতে খেয়ে ফেল্লে দাদা। পিঠ চুলকে বলল মহাবুদ্ধ।
বুদ্ধদেবের সারা শরীরে বিষজ্বালা।
দু-হাতে নিজের শরীরের এখান-সেখান চুলকোতে-চুলকোতে
সে বলল--নে তুই জিতে গেলি, তুই হলি বুদ্ধ, আর আমি বুদ্ধু।
--না-রে তুই বুদ্ধ, আর আমি বুদ্ধু।
--না ভাই, আমারা দুজনেই বুদ্ধু।
--সমান বুদ্ধু।
দুই ভাই হাত-ধরাধরি করে বাড়ি ফিরল।
একে-অপরের পিঠ চুলকে দেয় তারা। ধন্যবাদ দেয় বিষ-পিঁপড়েদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।