আমি সবার সাথে আছি .............
কিশোরগঞ্জ, ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮, সুলতান রায়হান ভূঞা রিপন ঃ
১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও সেদিন বিজয়ের আনন্দ পায়নি কিশোরগঞ্জবাসী। সারা দেশের আকাশে লাল-সবুজের পতাকা উড়লেও কিশোরগঞ্জ শহরে সেদিন উড়ছিল পাকিস্তানি পতাকা। সেদিনও শহরের নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজাকার-আলবদরদের হাতে। বিজয় দিবসেও পাক হানাদার বাহিনীর দোসরদের সাথে প্রচণ্ড লড়াই করতে হয়েছে আমাদের দামাল ছেলেদের। ঝড়েছে রক্ত।
অবশেষে দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে কিশোরগঞ্জ স্বাধীন হয় ১৭ ডিসেম্বর।
দীর্ঘ ৯ মাস জীবন বাজি রেখে রক্তয়ি যুদ্ধের পর ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে লাল-সবুজের পতাকা। অনেক ত্যাগ-তিতীা ও অসংখ্য তাজা প্রাণের বিনিময়ে বাংলার পূর্বাকাশে উদিত হয় কাঙ্খিত রক্তিম স্বাধীনতার সূর্য। বিজয়ের আনন্দে সারাদেশ উন্মাতাল। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আনন্দ ছিলনা কিশোরগঞ্জবাসীর মধ্যে।
সেদিনও তাদের মনে ছিল অজানা আতংক। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার বদলে কিশোরগঞ্জের আকাশে উড়ছিল পাকিস্তানের পতাকা। শহর নিয়ন্ত্রণ করছিল হানাদার বাহিনীর দোসর এদেশীয় রাজাকার-আলবদর ও আল শামস বাহিনী। পাক হানাদার বাহিনী ১২ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ ছেড়ে গেলেও শহরে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে অবস্থান নেয় স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার-আলবদর বাহিনী। ফলে কিশোরগঞ্জকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়।
পরিস্থিতি বেসামাল দেখে রাজাকার বাহিনী বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পনের প্রস্তাব দেয়।
১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের চারপাশ ঘিরে ফেলে শক্ত অবস্থান নেয় মুক্তিবাহিনী। একইদিন গভীর রাতে মুক্তিযুদ্ধের কোম্পানী কমান্ডার কবীর উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ড. মাসুদুল কাদের, পাটুন কমান্ডার দিলীপ সরকারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল করিমগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে সতাল এলাকায় এসে অবস্থান নেন। অবস্থা বেগতিক দেখে রাজাকার বাহিনী অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আজিমউদ্দিন হাইস্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক হেলাল উদ্দিনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করবে বলে খবর পাঠায়। ১৭ ডিসেম্বর সকালে একটি খোলা জিপে করে মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সশস্ত্র দল সর্বপ্রথম কিশোরগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে।
কিছুণের মধ্যেই চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে। শহরের পুরানথানা শহীদী মসজিদ সংলগ্ন ইসলামীয়া ছাত্রাবাস মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার- আলবদর বাহিনী।
রাজাকার-আলবদর বাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর মূহুর্তেই বদলে যায় শহরের চিত্র। বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠে চারপাশ। পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে কিশোরগঞ্জের আকাশে উড়ানো হয় স্বাধীন- সার্বভৌম প্রিয় বাংলাদেশের রক্তিম পতাকা।
আর এভাবেই সারাদেশ স্বাধীন হওয়ার একদিন পর মুক্তির স্বাদ পায় কিশোরগঞ্জবাসী।
০১৭১১৬৬৩৩২৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।