আমাদের দুনেত্রী দীর্ঘ ১৬ বছর পর মুখোমুখি হয়ে কথা বলেছেন বেশ কিছুদিন আগে। সেনাকুঞ্জে কী কথা বলেছেন তারা। দেশ, জাতি, নির্বাচন এসব কিছু নিয়ে নয়। কথা বলেছেন খাওয়া দাওয়া নিয়ে। আরেকটু সময় হলে হয়ত রুপচর্চা নিয়েও কথা হত।
কেননা জেল থেকে বের হয়ে দুনেত্রীর মলিন চেহারায় এখন জ্বেল্লা দিচ্ছে। কি তার রহস্য। এ জাতির জানার খুব সখ। কিন্তু দুর্ভাগা আমরা। সময়ের অভাবে সৈন্দর্য ও রুপচর্চা বিষয়ে তাদের গুরু গম্ভীর আলোচনা আমাদের উপভোগ করা হল না! স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম এ মতিন দুনেত্রীর ওই দিন কথা বলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই ণের জন্য পুরো জাতি দুই বছর ধরে অপোয় ছিল।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো জানান: সেনাকুঞ্জে শেখ হাসিনা বললেন, আমরা সব সময়ই আলাপ করেছি, আমরা তো একসঙ্গে ছিলাম। এম এ মতিন তখন বলেন যাতে আলাপ করতে পারেন এজন্য দুইজনকে একসঙ্গে রেখেছিলাম। হাসিনা জোক করে বললেন, না দরজা তো বন্ধ রাখতেন সব সময়। দেয়াল দিয়ে রাখতেন। মতিন বললেন, দেয়ালের মধ্যে কিন্তু কাঁচের গ্লাস ছিল, গ্লাস খুলে আপনারা কিন্তু কুশল বিনিময় করতেন।
সেকথা আমি শুনেছি। শেখ হাসিনা বললেন, না এটি ঠিক নয়। শেখ হাসিনা জানালেন, আমার রান্নার আয়োজন ছিল। আমি রান্না করে উনাকে রেগুলার খাবার পাঠিয়েছি। খালেদা জিয়া বললেন, হ্যাঁ আমি উনার খাবার খেতাম।
রান্না প্রসঙ্গে বনফুলের বিখ্যাত তর্ক ও স্বপ্ন গল্পের একাংশ বলা যেতে পারে। একজন বলছেন মাংস আগে ভেজে পরে সিদ্ধ করে নিলে সুস্বাদু হয়। অন্যজন প্রতিবাদ করলেন। বললেন মাংস আগে ভাজলে সিদ্ধ হওয়া শক্ত। সেজন্য মাংস আগে সুসিদ্ধ হলে পরে ঝোলটা মেরে ভাজা ভাজা করে নিলেই ভাল হয়।
তুমি জান না।
-যে সব বাবুর্চি আগে ভাজতে চায় তারা বাবুর্চি নয় তারা বেকুব। জাপানে কি করে শুনবে?
-জাপান টাপান বুঝি না। তুমি বাবুর্চিদের অপমান করার কে। তুমি দেশের বাবুর্চিদের অপমান করে দেশকে অপমান করছো।
অভদ্র কোথাকার।
-কি যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। নিজে দুনিয়ার কোন খবর রাখবে না আবার ফদর ফদর করে তর্ক করতে আসা।
-বেকুব।
-ফের বেকুব বলছ?
-ক্রমাগত বলবো।
তুই বেকুব, তোর...।
-তবে রে...
-তবে রে...
ভালোই ভালোই সেনা কুঞ্জে এই দুই বক্তার মত রান্না বিষয়ক কথপোকথন আর এগোয়নি। এগোলে যে কি হত! সংলাপটির কুশিলব যদি খালেদা-হাসিনাই হতেন তবে তার পরবর্তী পর্বটা হয়ত সরাসরি রাজপথে অনুষ্ঠিত হত। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তখন এক পক্ষের হাতে থাকত লগি, লাঠি, বৈঠা অন্যদের কাস্তে, কোদাল ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা চাই না, লগি-বৈঠা-কাস্তে-হরতাল এসব আবারো ফিরে আসুক।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ঘটনা বিশ্লেষণে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে খালেদা-হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রদর্শনের হাত আরো শক্ত হয়েছে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে খালেদা-হাসিনা কারান্তরীত হওয়ার সময় জনগণ খুব একটা উচ্চবাচ্য করেনি। মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল। তাতে অযোগ্যরা যদি ঝরে যায় সে যেই হোক না কেন তাতে জনমানুষের খুব একটা যায় আসে না।
১/১১ পরবর্তী ধরপাকড়াওয়ের সময় সারা দেশেই কিন্তু এ অবস্থা বিরাজ করছিল। বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে সমর্থ হলে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার বিনষ্ট না হলে মাইনাস টু ম্যানেজ টুতে পরিবর্তিত হত কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। দ্রব্য মূল্যের অসহনীয় আস্ফালনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সাধারণ মানুষ হিসেব কষেছে খালেদা-হাসিনার আমলে দুর্নীতি-ফুর্নীতি যাই থাকুক, চাল-ডাল সহনশীল দামে কেনা গেছে। তাই দুর্নীতি দমন ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা সৃষ্টির কৌশল দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির কাছে মার খেয়েছে।
এখন দেশের মানুষ অনেক সহ্য করেছে। তবে এই সহ্য মতা কতদিন থাকবে সেটা দেখার বিষয়। দুই নেত্রী নিজেদের প্রমাণ করার আবারও সুযোগ পেয়েছেন। নেত্রীদ্বয় এই সুযোগ হাত ছাড়া করলে দেশের গণতন্ত্রের জন্য অশণি সংকেত হয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় রাশিয়ান গল্পটি স্মরণ করা যেতে পারে।
রাশিয়ার শাসক ব্রেজনেভের সময়ে একবার গাম বা আঠা সংকট নিয়ে কথা উঠল। ব্রেজনেভ ডাক মন্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, স্ট্যামের পেছনে গাম বা আঠা থাকছে না থাকায় মানুষ নাকি স্ট্যাম্প ইনভেলপে লাগাতে পারছে না?
ডাক মন্ত্রী ভয়ে ভয়ে বললেন, কমরেড আপনার ছবি সংবলিত স্ট্যাম্প ছাড়া হয়েছে সারা রাশিয়ায়। কি কারণে যেন মানুষ স্ট্যাম্পের উপরের দিকে থুথু লাগাচ্ছে (যেখানে ব্রেজনেভের ছবি আছে), নিচের পিঠে নয়।
এমন যেন না হয় আমাদের দু'নেত্রীর ক্ষেত্রে। এ বিষয়টি তাদের মাথায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিগত সময়ে রাজনীতিবিদদের বহু গলাবাজি, বক্তৃতা-বক্তব্য শুনেছি। ভোজবাজির মত তাদের ঠগবাজিও দেখেছি। দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসেছে। ইলেকট্রিক ট্রেন, ঢাকা শহরে আন্ডার গ্রাউন্ড রুট, পাকা রাস্তার ওপর ব্রিজ, ব্রিজ ভেঙ্গে নদী, নদী ভেঙ্গে ব্রিজ এরকম ভুরি ভুরি ছলাকলা মিশ্রিত ছেলে ভুলানো কথা মালায় আমরা ভুলেছি। বিশ্বাস করেছি।
নির্বাচনের আগে রাজনীতিকদের আশ্বাস শুনতে শুনতে কান ঝালাফালা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পথিকৃৎ হচ্ছেন হাসিনা-খালেদা। এবারও তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারের নামে যে তা ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছুই না তা মানুষের বুঝতে বাকি নেই। সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে, তাদের কল্যাণার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে, রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকে এ যাবত যত মহৎবাণী(!) উচ্চারিত হয়েছে, সেগুলো সংকলিত করে যদি বই বানান যায়, তাহলে কত পৃষ্ঠার বই তৈরি হবে তা বলা মুশকিল।
এসব কারণে রাজনীতিকদের ফাঁকা বুলিতে জনগণের মনের আনাচে কানাচে ফুলে ওঠা স্বপ্নের বেলুন চুপসে যেতে খুব একটা সময় নেয়নি। মাননীয় হাসিনা-খালেদা, আপনারা আমাদের জন্য অনেক বলেছেন। অনেক করেছেন। এবার আমাদের ক্ষমা করেন। আল্লাহর দোহাই, এবার আপনারা দুজনই বলেন, কি কি করবেন না।
আমাদের জন্য আপনাদের আর কিছু করা লাগবে না, শুধু না করলেই আমারা ভাল থাকব। হাসি মুখ করে করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ভাল কথা। সাধুবাদ দুজনকেই। কিন্তু নির্বাচনে হারের পর সুক্ষ্ম, স্থূল, বিষম, অসম এরকম নানা কিসেমের জ্যামিতিক কারচুপির অভিযোগ আনবেন না।
সংসদ বাদ দিয়ে রাজপথকে কথা বলার জন্য বেছে নেবেন না। হরতাল, গাড়ি ভাংচুর, ক্যাম্পাস দখল মোট কথা জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি করবেন না প্লিজ। জাতীয় ইসু্তে আপনারা বিভাজিত হবেন না। হাসিনা- খালেদা এদেশের মানুষ আপনাদের এখনও ভালবাসে। আপনাদের তারেক জিয়া বাথরুমে পড়ে কোমরে ব্যথা পেলে যেন রাজপথে আর কোন ব্যবসায়ী কিংবা কর্মীকে মরতে না হয়।
আপনাদের এবার হ্যাঁ বলতে বলছি না, এবার দয়া করে না বলুন। না বলার জন্য আরো অনেক বিষয় আছে। কিন্তু জানি আপনারা আমাদের জন্য নাও বলতে পারবেন না। কেননা ইতোমধ্যে আপনারা দুজনই দুর্নীতিবাজ রাজনীতকদের মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে পুরষ্কৃত করেছেন। দুর্নীতি এবং অসুদপায় অবলম্বনের জন্য অনেক নেতাকে মনোনয়ন দিতে আইনগত বাধা থাকায় তার স্ত্রী, পুত্রদের মনোনয়ন দিয়েছেন।
ফলে এইসব অপকর্মকে উৎসাহীত করা হয়েছে। অন্যদিকে ত্যাগী, দেশপ্রেমিক অনেক নেতা-কর্মী বঞ্চিত হয়েছেন। আপনারা দুজনই জেলে, হাসপাতালে, আদালতে এমনকি বক্তৃতায় সবখানেই কূটকৌশলেই জয়ী হওয়ার চেষ্টা যে রাজনীতিকরা করেন এবং হনও বটে, তাদের ভালবাসেন। কত মিল আপনাদের! অথচ দুজনে মুখোমুখি হন না, কথা বলেন না। চৌম্বক সম মেরুতে পরস্পর বিকর্ষণ করে।
চৌম্বকের গুণাগণ কি সমগুণ সম্পন্ন আপনাদের মধ্যে আবিষ্ট হয়েছে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।