আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গত জোট সরকারের পাঁচ বছরের কার্যকলাপের সঙ্গে ইশতেহারের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা 'সাপ্তাহিক অগ্রযাত্রা'র সম্পাদক মাসিক ' সুন্নিয়ত' পত্রিকা ও সাপ্তাহিক জা'আল হক পত্রিকা'র উপদেষ্টা ওলামায়ে আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা'য়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক, বিশ্ব সুন্নী ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আঞ্জুমানে আশেকা

গত জোট সরকারের পাঁচ বছরের কার্যকলাপের সঙ্গে ইশতেহারের মিল খুঁজে পাওয়া যায় নাঃবিএনপির ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে ৪ দলীয় জোটের দুঃশাসনে শোষণ-দুর্নীতি-লুটপাটের রাজত্বের আত্মপক্ষসমর্থনমূলক সমালোচনা নাই। ফলে বলা যায়, বিএনপির মানসিকতা পরিবর্তনের কোনো আভাস ইশতেহারে নেই। রাজনৈতিক দলগুলো ঘটা করে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করছে, যা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। বিএনপির ইশতেহারে দেশে বিরাজমান সব সমস্যা ও ইস্যুই স্থান পেলেও তা নিরসন হবে বলে মনে হয় না। কারণ বিশেষ করে যেসব ইস্যু ও দাবি নিয়ে ৪ দলীয় জোটের শাসনামলে কয়েক বছর ধরে এ দেশের জনগণ আন্দোলন করে আসছিল।

বিগত জোট সরকারের আমলে বিশ্ব দরবারে বহুবার দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। সেই জোটেরই নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন এখন সময়ের জোরালো দাবি। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে এমন লোকজনকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা তদন্তাধীন ও বিচারাধীন।

আইনগত জটিলতায় যাদের মনোনয়ন দেওয়া যায়নি, সে ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে তাদের দুর্নীতিবাজ পরিবারের সদস্যদের। এবারের ইশতেহারে অনেক ভালো ভালো কথা বলা হলেও গত জোট সরকারের পাঁচ বছরের কার্যকলাপের সঙ্গে ইশতেহারের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। পাঁচ বছরের দুঃশাসনের জন্য কোনোরকম দুঃখবোধ নেই তাদের। কোনো রকমের স্বীকারোক্তিও নেই। অথচ তাদের কারণেই ১/১১-এর জন্ম হয়েছিল।

রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সবকিছুতে দলীয়করণ ও লুটেরাতন্ত্র থেকে বের হয়ে আসার কোনো দিকনির্দেশনা বিএনপির ইশতেহার বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়নি। অথচ শেষ পাঁচটি বছর এ ব্যাপারেই তারা সিদ্ধহস্ত ছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন-সবকিছুতেই ছাপ ছিল দুর্নীতি ও দলীয়করণের। এবারের ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি বিএনপি দিয়েছে তা প্রকৃত পরিস্থিতির একেবারেই উল্টো। ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হলেও এর কৌশলটা কী হবে তা বলা হয় নি।

অথচ জোট সরকারের আমলেই তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের চাপ এড়ানোর বিষয় বা তাদের নির্দেশনা না মানার কথা বলা হয় নি। বিদ্যুৎ ঘাটতি আমাদের বড় সমস্যা। সিরাজগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প চালুর সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।

রাজনৈতিক বিবেচনায় জোট সরকার তা বাতিল করে। মজার ব্যাপার তাদের ইশতেহারে বলা হচ্ছে, নির্বাচিত হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে ওই প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও গত দুই বছর চেষ্টা করে পারেনি। তাছাড়া রয়েছে গ্যাসের সরবরাহ সংকট।

নতুন প্রকল্প চালু করতে চাইলেই গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে দেশি কোম্পানিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। অন্যদিকে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে ৪৯ শতাংশ গ্যাস সরকারকে কিনতে হয় ডলারে। এসবক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কষ্ট রিকভারি ও বিদেশী কোম্পানির স্বার্থে ভর্তুকী প্রদান বন্ধ করার কোনো ঘোষণা ইশতেহারে নেই। আবার কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়ে অনেক দিন থেকেই আন্দোলন ও বিতর্ক চলছে।

এ নিয়েও কিছু বলেনি বিএনপি। সব মিলিয়ে আমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকাংশেই নাজুক। এই নাজুকতা থেকে বের হওয়ার পথ বাতলে দিতে পারেনি বিএনপি। ইশতেহারে হাজারো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বলা নেই অর্থসংস্থান কী করে হবে।

গত জোট সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থা। অধিকাংশ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। ড্যাব নেতাদের পরামর্শে চিকিৎসকদের নিয়োগ ও বদলি করা হয়েছে। পাঁচ বছরে শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি ব্যাপক প্রসার লাভ করে। সাধারণ পাঠ্যক্রম, মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেন ইত্যাদি নানামুখী শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সমন্বিত ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার কথাও কিছু বলা নেই।

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও আগের কীর্তিকলাপের কারণে আস্থা রাখা যায় না। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার অঙ্গীকার একটি ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশকে মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী দেশরূপে প্রচারের সব অপতৎপরতা শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে ইশতেহারে বলা হয়েছে। কিন্তু মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন করার কথা বলা হয় নি। সুতরাং এ ব্যাপারে বিএনপির মনোভাব নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নবোধক চিহ্ন রয়েই যায়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।