::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
অনেক অনেক দিন পর একটা দুর্দান্ত ডকুমেন্টারী মুভী দেখলাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রকে নিয়ে 'একাত্তুরের শব্দ সেনা'। ছবিটার পরিচালক কাওসার আহমেদ এবং সজল খালেদ। সজল ভাই বিএমটিসি (বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব) তে আছেন। এবং বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের একজন পর্বতারোহী।
সজল ভাইকে সামান্য চিনি। উনার কাছেই শুনেছিলাম ছবিটার মেকিং এর গল্প। শোনার পর থেকেই আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে ছিলাম দেখার জন্যে। আজকে প্রিমিয়ার শো-তে আসার জন্যে আগে থেকেই রেডী ছিলাম।
গতরাতে ঘুমাই নি, আজ সকালে ঘুমিয়ে উঠলাম বিকেলে অনেক দেরীতে।
উঠেই সর্বনাশ দেরী হয়ে গেছে। সামহোয়ার ইন ব্লগের ব্লগার নকীব খানকে বলছিলাম আসবো। সে ফোন করে জানালো সে শাহাবাগে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে, আমি তখন কেবল টুথব্রাশ নিয়ে বাথরুমে যাবার জন্যে রেডি হচ্ছি। তরিঘরি করে এসে দেখি জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে তিল ঠাই আর নাহিরে। নকীব বুদ্ধি করে আগে থেকে সীট দখল করে রেখেছিল দেখে রক্ষা।
প্রিমিয়ার শো সম্পর্কে আমার কোন আইডিয়া ছিল না। জানতাম ডকুমেন্টারী মুভী বোধহয় বানানো হয় টিভি চ্যানেল গুলোতে দেখানোর জন্যে আর কিছু ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানোর জন্যে। কিন্তু ছবিটা দেখেই ধারনা পাল্টালো। অনেক বড় মাপের একটা কাজ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকা নিয়ে বলার কোন অবকাশ নেই।
রনাঙ্গনে মুক্তিপাগল যোদ্ধাদের সাহস, ধৈর্য আর মনোবল দিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। সামরীক এবং বেসামরীক মুক্তিযোদ্ধাদের জবানীতে তাদের প্রেরনার কথা শুনলাম।
দেরী করে আসার জন্যে একদম শুরুর কিছু ক্লিপস মিস করেছি। শুরুতেই দেখানো হলো বেলাল চৌধুরী, মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং অন্যান্য বেতার ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিরা কিভাবে হঠাত করে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এবং কলুরঘাটে সমাবেত হলেন। এরপরে বেতারকেন্দ্র থেকে বাঙ্গালী টেকনিশিয়ানদের নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু করলেন।
প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ওয়ারলেস ভাষনের কপি মাইকিং হচ্ছিলো। সেটাই রেডিওতে ঘোষিত হলো। রাজনৈতিক নেতা এম এ হান্নান এই ঘোষনা পত্রটাই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বেতারে ঘোষনা করলেন। বেলাল আহমেদের জনৈক প্রবাসী ব্যাবসায়ী বন্ধুর মাধ্যমে ওনারা ইস্টবেঙ্গলের একজন সিনিয়র মেজর হিসাবে মেজর জিয়াকে পেলেন। মেজর জিয়া তখন পোর্টে সোয়াজ এবং আরেকটি যুদ্ধজাহাজকে (বাঙ্গালী খালাসীরা অস্ত্র খালাসে অস্বীকার করলে সেখানে বিদ্রোহ শুরু হয়) প্রটেকশান দিতে এসে ভেতরের খবর জানতে পারেন।
মেজর জিয়া সোয়াজকে রক্ষা করতে অস্বীকার করে তার ফোর্স নিয়ে অন্যত্র সরে যাবার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। মেজর জিয়া এসে বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষনা করলেন আমাদের স্বাধীনতার অমর ঘোষনা পত্র। লেঃ (পরে রাষ্ট্রদুত) শমসের মবিন চৌধুরী এবং আরেকজন কালুরঘাট নিরাপত্তার দায়ীত্ব নেন। অপারেশন সার্চলাইটের চট্টগ্রাম পর্ব নিদারুন ভাবে ভেস্তে যায় ইস্টবেঙ্গলের সৈনিকদের দৃড়তায়। বাধ্যহয়ে ইনফ্যান্ট্রি ফেল করলে পাকিস্তানী বোম্বার গুলো কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রকে বিধ্বস্ত করে দিয়ে যায়।
সীমান্ত পেরিয়ে ১ কিলোওয়াটের একটা ট্রান্সমিটার নিয়ে সবাই চলে যায় আগরতলা পড়ে কলকাতা শহরে।
এর পরে ধিরে ধিরে বাংলা ভাষা আর সাহিত্যের মহান সব কবি, শিল্পিরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে জড়ো হন। আসাদ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুন আর আল-মাহমুদের একসাথে দেয়া ইন্টারভিউটা অনেক আকর্ষনীয় লাগলো। ব্যাক্তিগত ভাবে আল-মাহমুদের কবিতার অনেক বড় ভক্ত আমি। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই কবি কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে সরাসরি রণাঙ্গনে ছিলেন।
দুঃখের বিষয় বর্তমানে এই বর্ষিয়ান কবি জামাতীদের চক্রান্তে এখন জামাতী ইস্লামীর একজন ব্যাক্তিত্ব।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল সম্ভবত এম আর আখতার মুকুলের চরমপত্র। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উপরে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা অন্যতম সেরা একটা বই 'আমি বিজয় দেখেছি', অথচ মুভীতে উনার এত স্বল্প উপস্থিতিটা আশা করি নি। অনেক অজানা ইতিহাস জানা হলো। যেমন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে দ্বৈরথে নামা পাক সরকারের ঢাকা বেতার কেন্দ্র।
কবি ফররুখ আহমদের সাথে আরো নেতৃস্থানীয় সাহিত্যিকেরাও ছিলেন তাতে। তার একজন এখনো বাংলা সংবাদ পত্র জগতে প্রতাপের সাথে টিকে আছেন। শত্রুদের চিনে রাখাটা খুব দরকার। এদের ব্যাপারে আরো বেশী আলোচনা হলে ভালো হত। অবশ্য এটাও সত্যি স্বাধীন বাংলায় রাজাকার আর তাদের দোসররাই সবচেয়ে শক্তিশালী।
তাছাড়া স্বল্প দৈর্ঘের ডকুমেন্টারীতে পুরো ৯মাস তুলে আনাটা কঠিন। ছবির ফিনিশিং দেখে মনে হলো তারাহুরো করে শেষ করা হয়েছে।
তবে সত্যিকার ভাবেই ছবিতে গ্রাফিক্স, এনিমেশন, ক্যামেরার কাজ, সাউন্ড কোয়ালিটি এবং টেকনিক্যাল কাজ গুলো অনেক উচু মানের। অনেক দিন মনে রাখার মত একটা সন্ধ্যা ছিল
ওয়েবসাইটঃ http://www.sbbk.org/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।