আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ স্পেশাল ডিজ্যুস গল্প: অহম

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অহম ১. রাইমার ব্যাপারটা নিয়ে মিথিলা বেশ কদিন ধরেই আমার কান ভারী করে আসছিল। মিথিলা মেয়ে ভালো, কোন সন্দেহ নেই। তারচেয়েও বড় কথা ডিপার্টমেন্টে শুধু মিথিলাই আমার স্কুলের, তাই শুরু থেকেই ওকেই আমার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী বলে জানি। অথচ, গত কদিন ধরে এই মিথিলাকেই আমার অসহ্য মনে হচ্ছিল। যতবারই কাছে এসে ইনিয়ে বিনিয়ে সে রাইমার নামে বলার চেষ্টা করছিল, ততবারই আমি মনেমনে বলেছি, "মিথি, তোর বোঝা উচিত, রাইর সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেলেও তোর সাথে আমার কিছু হওয়া সম্ভবনা?"।

হ্যাঁ, আমার শতভাগ ধারনা হয়ে গিয়েছিল যে, আজ তিন বৎসরের ঘনিষ্ট বন্ধুত্বের পর মিথি এখন চাচ্ছে আমাদের এ্যাফেয়ার হোক, রাই ছিটকে পড়ুক! দেখতে যে আমি অন্য ছেলেদের তুলনায় একটু বেশীই হ্যান্ডসাম, সেটা আমি জানি। আমার হাইট ভালো, নিয়মিত ব্যয়াম করি, বেশ হার্ড লেভেলের; তারওপর যেকোন আড্ডাতেই মেয়েদের যেচে এসে গায়ে পড়া আচরণ। ব্যাপারটা মাঝেমাঝে এমন দাঁড়ায় যে আমার নিজেরই দৃষ্টিকটু লাগে, এবং এটাও ঠিক যে মেয়েদের এি অনাকাঙ্খিত আকর্ষিত হবার ব্যাপারটায়া আমি বেশ ক্লান্ত। কারণ আছে, সেটা হলো ব্যাপারটা আমি অনেক আগে থেকেই বুঝতে পেরেছি। সেজন্যই ইদানিং বিরক্তিকর মনে হয়।

সেই এসএসসি'র সময়ের কথা, আমার বয়েস তখন কত হবে? ষোল বা সতের? তখনই বাড়ীওয়ালার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে মৌটুসী আপুর অতিরিক্ত আহ্লাদ থেকে ব্যাপারটা প্রথম আঁচ করতে শুরু করি; তারপর যেদিন মৌটুসী তার ন্যাকামোভরা চিঠিটা আমার ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে যায়, তখনতো বুঝেই ফেলি সবকিছু। মৌটুসীর ব্যাপারে উৎসাহ না থাকলেও সেদিন আমি খুশী হয়েছিলাম, কারণ বুঝে ফেলেছিলাম যে আমাকে দিয়েই হবে। তখন অবশ্য একই সাথে কিছুটা আতংকিত বোধ যে করিনি সেটা বলবনা। কারণ, সবাই আমার হতে চাইলে কিভাবে হবে? সেথেকেই হয়ত মেয়েদের ব্যাপারে আমি খানিকটা অস্বস্তিপ্রবণ, আর এই অস্বস্তির কারণেই হ্য়তবা, গত কয়েকদিনের মিথিলার কথাবার্তায় মনে হতে থাকে যে রাইর নামে সে বানিয়ে বানিয়ে এতকিছু বলছে, কারণ একটাই, সে চায় আমার আর রাইর ব্রেকআপ হোক। কিন্তু যা সত্য সেটা হলো, গতকাল বিকেলে আমার সে ধারনাটা পুরোপুরি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে।

পিজা গেটের বাইরে রাইমা আর অরুন বসে ছিল, খুব ঘনিষ্ট, আমার জন্য যেটা রীতিমতো অপমানকর! তারপর, একসময় বাইকে উঠে রাইমা পেছন থেকে অরুনের কোমর জড়িয়ে ধরে, অন্তরঙ্গভাবে, ছিঃ!! আমি ভাবতেই পারিনি রাইমা এত নীচে কিভাবে নামে? মিথি আমাকে দেখিয়ে দিয়েই চলে গেছে, যাবার সময় শুধু বলেছিল, "এখন নিজেরটা নিজে বুঝে নে। " অবশ্য এভাবে হাতেনাতে ধরিয়ে দেয়ার মতো নীচু কাজ মিথিলার করার কথা না, এটা করতে সে বাধ্য হয়েছে আমার কারণেই। কারণ, এর আগ পর্যন্ত আমি ওর কথাকে পাত্তা দিতে চাইনি, যতবারই ও আমাকে বলতে এসেছে "রাই তোকে ঠকাচ্ছে", ততবারই আমি এমনসব প্রশ্ন করেছি, চাক্ষুস প্রমাণ চেয়েছি যে মিথির জায়গায় অন্যকেউ হলে অপমানে হয়ত আমার সাথে আর কথাই বলতে আসতনা। মিথিলা আসলেই ভালো মেয়ে, সন্দেহ নেই। তবে আমি অবাক হচ্ছি আমার নিজের আচরণে।

ঠিক এই মুহূর্তে আমার রাইমাকে নিয়ে ভাবার কথা। কিন্তু সেটা না করে আমি ভাবছি মিথিকে কেন ভুল বুঝেছিলাম সেটা নিয়ে। একইসাথে এটাও ঠিক যে, শুধু মিথিই না, আমি মূলতঃ ভাবছি ফার্স্ট ইয়ারের সেই মেয়েটার কথা, নাম ইরিন। ঝর্নার মতো চঞ্চল, সেদিন আবীরের বাসায় ড্যান্স পার্টিতে যখন বিয়ারের গ্লাস হাতে আমার দিকে এগিয়ে এসেছিল, সত্যি বলতে কি, অনেকদিন পর আমি নতুন করে খানিকটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। রাইমার সাথে প্রথম দেখার সময় যেটা হয়েছিলো।

চরিত্র খারাপ হলে আমিও ইরিনকে নিয়ে ফুর্তি করতে পারতাম, রাইমা টেরও পেতোনা। অথচ আমি সৎ থাকতে চেয়েছি, ড্রিংকসের গ্লাস হাতে একটু জড়িয়ে ধরে মুখোমুখি হয়ে নাচাকে এ যুগে কেউ "চিট" করা ভাবেনা। আর রাইমা আমাকে এভাবে অপমান করে যাচ্ছে!! আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, যে সিদ্ধান্তটার জন্য কাল সারারাত জেগে শুধু একটার পর একটা সিগারেট ফুঁকেছিলাম। সিদ্ধান্তটা নিতে যে আমার কষ্ট হয়নি, তা না। বরং, বারবারই গত চার বছরের সব স্মৃতি এসে হামলে পড়তে চাইছিল।

রাইমাকে নিয়ে কক্সবাজার ট্রিপ, ফার্নিচারের দোকানে ঢুকে ওর ঘরসাজানোর প্ল্যান প্ল্যান খেলা, ওদের বাসায় গেলে সালমা আন্টির (রাইমার মা, যিনি আমার শাশুড়ী হতে পারতেন) আপ্যায়নের সময় আমার মুখ টিপে হাসা, সেটা দেখে রাইমার খুনসুটি, আরো কত কি! চারবছর কম সময় না! এটাকে জলে ভেসে যেতে দেয়া যায়না, কিন্তু আমি জানি আমার ভয় নেই। আসবে, যাবে -- এটাই প্রেম ভালোবাসায় সবচেয়ে বড় সত্যি, গুরু নবু ভাইও তাই বলত। সমস্যা শুধু একটাই এখন, ব্রেকআপের কথা শুনে রাইমার প্রতিক্রিয়া কি হয়! যাই হোক, আমি সরাসরি মুখের ওপর বলে দেব, "অনেক হয়েছে, তোমার সাথে আর না!" ভাবতে ভাবতেই নিজের ফেয়ার লেডীর চাবি দিয়ে স্টার্ট হাঁকাই ইঞ্জিনে। গাড়ী ছুটে চলে, রাইমাকে ডাম্প করতে যাচ্ছি, আমার ভাবতে ভালো লাগছে। ভাবতে ভাবতেই এটাও ঠিক করে ফেললাম যে কেন ডাম্প করছি সেটা রাইমাকে বলবনা।

শুধু বলব, "বোরড হয়ে গেছি। " নিজের অজান্তেই মুখে মুচকি হাসি টের পাচ্ছি। ২. প্ল্যানমতো কিছুই হয়নি। কারণ, রাইকে আমার কিছু বলা লাগেনি। টপকাপির গরম কফিতে সিপ করতে করতে ওই বলছিল, "শাতিল, আমার পক্ষে আর সম্ভব না।

" আমার অবস্থা বিশেষ ভালোনা। গত কয়েকরাত ঘুম হচ্ছেনা। মাথাটা জ্যাম ধরে আছে, রাইর কাছে হার মানবনা, নাকি ইরিনের দিকে ট্রাই দেবো, বুঝতে পারছিনা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।