আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ ৪ জন্মদিন আপোষহীন নেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়া : আগাম অভিনন্দন

পথে নেমেছি; পথই আমায় পথ দেখাবে।

[জনৈক ব্যক্তি একটি লেখা আমাকে ইমেইল করেছেন; লেখাটি সবার সাথে শেয়ার করার জন্য পোস্ট করলাম। ] বিভিন্ন কারণে অকারণে আমরা মানব প্রজাতির সদস্যরা গোচরে-অগোচরে অনেক সময়েই অসত্য কথা বলে থাকি বা একান্ত বাধ্য হয়েই বলি। পরে আবার তা আমরা অনেকেই শুধরে নেই। ছোটখাটো অসত্য কথা বা তথ্য (সরাসরি মিথ্যা উল্লেখ করছি না এজন্য যে তাতে কেমন জানি একটু 'উলঙ্গ' শোনায়) সাধারণত: ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন সবাই মহানুভবতার কারণে।

বিশেষ করে ঘোরতর বিপদের সময় কেউ যদি অসত্য বলে প্রাণে রক্ষা পান সে ক্ষেত্রেও নিশ্চয় সামান্য অসত্যের কারণে যে অন্যায়টি হবে তা প্রাণের মূল্যের চেয়ে নিশ্চয় বড় অপরাধ নয় আমাদের সমাজের কাছে। কিন্তু কেউ যদি 'হলফনামা' দিয়ে অসত্য বা মিথ্যা তথ্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন বা জোড় গলায় তা প্রতিষ্ঠিত করতে চান নির্লজ্জ বেহায়ার মত তখন তাকে কোন্ মানদণ্ডে ফেলবো আমরা সাধারণ নাগরিকরা ? আর তা যদি হয় আমাদের তথাকথিত আপোষহীন নেত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে। তাহলে আমরা লজ্জায় মুখ দেখাই কী করে? তাকে বলা হয় গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী, ২ বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ছিলেন সরকার প্রধান। আগামী ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারও তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী একাধিক আসনে।

প্রচুর জনপ্রিয়তা তাঁর - এ কথাটি তো অস্বীকার করার উপায় নেই কারো। কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সংগ্রাম ত্যাগ তো অনেক। সমস্যা তার আন্দোলন সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষা নিয়ে নয়। গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পীর পক্ষে অপর আইনজীবী মো: মোতাহের হোসেন সুজা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি নোটিশ পাঠিয়ে দেন। নোটিশে তিনি অভিযোগ করে দাবি তুলেছেন যে, জন্ম তারিখ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে -তাই ভোটার তালিকা থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নাম বাদ দিতে হবে।

বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ টুয়েটিফোর ডটকমকে এডভোকেট সুজা বলেছেন, খালেদা জিয়া ভোটার তথ্য ফরমে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তাই তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা। অন্যথায় খালেদা জিয়ার নাম বাদ দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশনা পেতে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিডিনিউজ সহ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় যে, নোটিশ প্রদানকারী অভিযোগ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৪ বার বিভিন্ন তারিখে তার জন্ম তারিখটিকে ভিন্ন ভিন্ন তারিখের উল্লেখ করেছেন।

আর এ নিয়েই যত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। নানা বিতর্কের অবতারণাও হয়েছে। নানা সমালোচনার ঝড়ও বইছে এখন রাজনীতির অঙ্গনে। সাধারণত: বাংলাদেশে মেট্রিকুলেশন বা এসএসসি সার্টিফিকেট বয়সের যে তারিখটি থাকে তাকেই গ্রহণযোগ্য জন্মতারিখ হিসেবে ধরা হয়। সরকারিভাবে সেটিই স্বীকৃত।

আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যতটুকু জানি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এ সার্টিফিকেটে যে জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ থাকে তাকে পরবর্তীতে কেউ যদি হলফনামা বা 'এফিডেভিট' দিয়ে বদলাতেও চান তা আর গ্রহণযোগ্য হয় না। তবে হ্যাঁ কোন কোন সময়ে কারো সঠিক জন্ম তারিখ অর্থাৎ তিনি যেদিন পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন সেই দিনটির পরিবর্তে যদি অন্য কোন তারিখকে স্কুল সার্টিফিকেটে নিবন্ধন করানো হয় সেই নিবন্ধিত জন্ম তারিখটিই অফিসিয়াল জন্ম তারিখ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে- এটিই নিয়ম। কিন্তু দু:খের বিষয় যে, বাংলাদেশে শুধুমাত্র একজন মাত্র ব্যক্তির জন্ম তারিখ নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ তিনি কথিত আপোষহীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচন কমিশনের কাছে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সুজা যে নোটিশ পাঠিয়েছেন তাতে আমরা আমাদের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৪ বার জন্ম হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

(পাঠক আমায় ক্ষমা করবেন, আমি শুধু তথ্যের ভিত্তিতেই এ কথার অবতারণা করছি)। তাহলে একটু দেখি এই অসামান্য নেত্রী যে ৪ বার জন্ম গ্রহণ করেছেন তার সন তারিখ। নির্বাচন কমিশনে প্রদত্ত নোটিশ থেকে দেখা যায়- (১) ১৯৬১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার নথিপত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৪৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। (২) বিয়ের কাবিননামায় (সেটি নিশ্চয়ই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবিত থাকা অবস্থায়) জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৯৪৭ সালের ৯ আগস্ট। (৩) ১৯৭৮ সালের ১ এপ্রিল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস উল্লেখ করেছেন তবে কোন তারিখ দেন নি।

(৪) গত ২৯ নভেম্বর ভোটার তথ্য ফরমে জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। আমার মত ক্ষুদ্র বুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকের মাথায় কোনভাবেই ঢুকছে না যে একজন ব্যক্তি কিভাবে এই পৃথিবীতে ৪ বার জন্মগ্রহণ করতে পারেন। সনাতন বা প্রচলিত হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ তাদের মধ্যে এক ধরনের বিশ্বাস রয়েছে যে মনুষ্য জন্মের পরও আবার তাদের জন্ম হতে পারে। কিন্তু ইসলাম ধর্মে যতটুকু জানি জন্মান্তরবাদ নেই।

আর আমাদের বিএনপি চেয়ারপার্সন যেহেতু ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তাই তাঁরতো সেই সুযোগও নেই। কিন্তু তিনি বিভিন্ন সময়ে তাঁর যে জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন তাতেতো মনে হয় তিনি ৪ বার জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু সঙ্গত কারণেই তা ঘটেনি। তাহলে কি হয়েছে ? এর উত্তরে আমরা যেটি দেখতে পাচ্ছি তা হলো তিনি তাঁর জন্ম তারিখ একেকবার একেক সন ও তারিখ উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তিনি অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন জেনেশুনে।

তাতে তিনি তো শুধু নিজের সাথে নয় নিজের দুই স্বনামধন্য পুত্র, আত্মীয় স্বজন, তার দলের নেতাকর্মী সর্বোপরি এদেশবাসীর সাথে চরম প্রতারণা করেছেন। এটিকে প্রতারণা না বলে কোন্ অভিধায় অভিহিত করা যায়- আমার অন্তত জানা নেই। সর্বশেষ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে যে তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করেছেন তাতে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন- ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। আর নির্বাচনী ফরমের সাথে একটি 'হলফনামা' বা 'এফিডেভিট' ও নিশ্চয় জমা দিতে হয়েছে। তাতে বলা হয় যে, তিনি যে সব তথ্য প্রদান করেছেন তার সবই সত্য।

যদি প্রমাণ হয় যে কোন তথ্য সঠিক দেন নি তাহলে সেজন্য মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। তবে গত ৩ নভেম্বর দৈনিক সমকাল পত্রিকায় রিপোর্ট অনুযায়ী এডভোকেট মো. মোতাহের হোসেন সুজার পাঠানো নোটিশটি নির্বাচন কমিশন 'আমলে' নেয় নি। আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশনের বড় কর্তাব্যক্তিরা এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন। কারণ এই মিথ্যা ও প্রতারণার বিষয়টি কোন সাধারণ অবুঝ নাগরিক করেন নি। (যদি অভিযোগকারি আইনজীবীর অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ বিভ্রান্তি নিয়ে।

) আমরা যদি ম্যাট্রিকুলেশন বা এসএসসি সার্টিফিকেটের জন্ম তারিখটি সঠিক হিসেবে ধরি তাহলে অন্য ৩টি জন্ম তারিখ ভুয়া, অর্থাৎ আমাদের এই কথিত আপোষহীন নেত্রীর যে কোন একটি জন্ম তারিখ সঠিক হিসেবে মেনে নিলে অন্য ৩টি ভুয়া হিসেবেই প্রতীয়মান হবে। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন এই নেত্রীর জন্মদিন নিয়ে দুর্জনদের নানা সমালোচনা শুনতে রাজী নই। আশা করি তিনি নিজেই এ ব্যাপারটি খোলাসা করবেন দেশবাসীর কাছে। তিনি নিশ্চয়ই দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট করে বলবেন কবে তিনি তার রত্নগর্ভা মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে এই বাংলাদেশকে আলোকিত করেছিলেন। সত্যিকার জন্মদিনটি জানতে পারলে পুরো জাতি আমরা সবাই মিলে গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনটি সাড়ম্বরে পালন করতে পারতাম।

প্লিজ ম্যাডাম আমাদের মত নাখান্দা নাগরিকদের বঞ্চিত করবেন না, আশাকরি আপনার শুভ জন্মদিনটি পালন করার জন্য। বিষয়টি আপাতত: নির্বাচন কমিশনের কাছে বিবেচনাধীন। কিন্তু বর্তমান নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (আমরা বিশ্বাস করি তারা নিরপেক্ষ) সঠিকভাবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর তা যদি না হয় তাহলে বিষয়টি নিশ্চয়ই আদালত পর্যন্ত গড়াবে। জানি না সেখানে মহামান্য বিচারকদের বিচারে কী হবে।

তবে আমাদের মহামান্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক জন্মতারিখ নির্ধারনের জন্য আদালত পর্যন্ত যেতে হবে তা আশা করি না। কারণ তাতে আশংকা অনেক দুর্গন্ধই বের হবে। বিএনপি'র নেতাকর্মীদের কাছে এই দেশনেত্রী'র জন্ম দিন নিয়ে উটকো বিতর্ক-সমালোচনা নিশ্চয়ই সুখকর হবে না। সর্বশেষ সম্প্রতি পত্রিকাতে দেখলাম- নির্বাচনী ফরম পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ম্যাডাম খালেদা জিয়া নাকি লিখেছেন 'স্বশিক্ষিত' সত্যিই খুব গর্ববোধ হলো বিষয়টি জানতে পেরে। পৃথিবীর কয়টি দেশের নেতানেত্রী আছেন যারা ম্যাডাম খালেদা'র মত 'স্বশিক্ষিত' ? আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকদের চরম-পরম সৌভাগ্য যে আমরা স্বশিক্ষায় শিক্ষিত একজন আপোষহীন নেত্রী পেয়েছি।

আশা করি তিনি এভাবে দেশে আরো অনেক 'স্বশিক্ষিত' লোক সৃষ্টির প্রকল্প নেবেন যাতে করে প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য টাকা ব্যয় অনেক কম হবে। তবে এক দুর্মুখের মন্তব্য এ ধরনের কথিত স্বশিক্ষিতরাই নাকি কোন কিছুকে পাত্তা না দিয়ে নিজের জন্মতারিখ বার বার বদলাতে পারেন। তবে ম্যাডাম আপনি ওসবে কান না দিয়ে নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিশ্চয়ই দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবেন যে আপনার জন্মদিন ৪টি নয় সত্যিকার ১টি এবং তা '.......' অমুক দিন। আমরা সবাই সেদিন জন্মদিন পালনের অপেক্ষায় রইলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।