জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...
আজ সকালে জাহাঙ্গীরনগর বেড়াতে যাব বলে- কাল সারারাত একটুও ঘুমাইনি। ভোরবেলার ঘুম চিরকালই আমার প্রিয়, সে কারনে কোন ঝুকি নেইনি।
জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস দেখতে এই প্রথম যাওয়া। ক্যাম্পাসের লেক আর তার পাখিদের গল্প অনেক শুনেছি- কিন্ত আর্শ্চয্য কোন দিন যাওয়া হয় নি। আজ হলো- যখন পৌছলাম ঘড়িতে তখন ৫টা ৪৫ এর মতো।
তখনো জাহাঙ্গীরনগরের ঘুম ভাঙ্গেনি।
মৃদু ডিমলাইটের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে পাতলা কুয়াশার একটা চাদরে আগা-পাশ-তলা ঢেকে জাহাঙ্গীরনগর ঘুমাচ্ছিল- কোন অঘোর ঘুম নয়, প্রভাতের অলস নেশা নেশা ঘুম। ক্যাম্পাসে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে, ফলে প্রায় ফাকা ফাকা চারিপাশে নৈশব্দ্যের পটভুমিকায় ঘুমের আদর্শ পরিবেশই বটে।
ক্যাম্পাসের ভিতরের রাস্তায় দু একজন প্রাতঃভ্রমনকারীর দেখা মেলে। গলায় ক্যামেরা ঝোলানো আমাদের ছোট দলটিকে তারা কৌতুহলের চোখে দেখে।
আর এসবের মধ্যেই পুর্ব দিগন্তে সুর্যের লাল আভার আভাষ দেখা দেয়। ক্রমশঃ প্রস্ফুতিত হতে থাকে চারপাশের নিসর্গঃ।
যেখান থেকে শহরে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো ছাড়ে-বাস গ্যারেজের ঠিক পেছনেই বিশাল লেক। নরম সকালের রোদ এসে পরে লেকের ওপারে বিশাল গাছগুলোর ওপর। কুয়াশার ঘেরাটোপ খসে পড়তে থাকে।
লেকের ওপর ঝুকে আছে গাছের শাখা-প্রশাখা, নিচে টলমল করা লেকের পানিতে নিজের চেহারা দেখে, কান পেতে শোনে সকালের নিশঃব্দ সংগীত, একটু একটু মাথা দোলায়। লেকের পানির সাথে তার সখ্যতা আরও নিবিড় হয়ে ওঠে।
ঘুম ভাঙ্গে পাখিদের- চারিদিকের নৈশঃব্দ্য ভেদ করে শোনা যায় পাখিদের কলকাকলি। শুরু হয় অনন্ত আকাশে পাখিদের ওড়াওড়ি। লেকের পানিতে একসাথে ঝাপ দিয়ে পড়া আবার সেখান থেকে একসাথে উড়তে শুরু করা।
পুর্ব দিগন্তে লালচে আভার পটভুমিতে পাখিদের ওড়াওড়ি, অর্ধবৃত্তাকারে ছন্দোবদ্ধ ভাবে। এখনও পরিযায়ী পাখিদের আগমন শুরু হয় নি। বড় জোর দু-এক সপ্তাহ, তারপরেই শুরু হয়ে যাবে অতিথি পাখিদের ভীড়ের মেলা।
ডানদিকে মেয়েদের হলের বাঁ পাশে লেকের পাড়ে দাড়িয়ে আছে ত্রিকালজ্ঞ এক পেপেগাছ। দুরের বিশাল বিশাল সব গাছদের সঙ্গ এড়িয়ে খোলা মেলা জায়গায়।
খুবই বিচক্ষন সিদ্ধান্ত।
বটতলা থেকে সকালের নাস্তা খেয়ে চা খেয়ে যখন ফিরছি রোদে ভেসে যাচ্ছে বিশ্ব-চরাচর। ঝাকড়া মাথার গাছটার পিছনে ধু ধু মাঠ, দূরে ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর।
ফেরার সময় হয়ে গেল......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।