আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক সকালে ঝুমতলি গাঁয়ে.............



শহরের শেষ প্রান্তে গেলেই বিশাল বাস স্টপেজটা। একদিন ভোর সকালে ওদিকটায় হাঁটতে যাই। উদ্দেশ্যহীন এই বেড়িয়ে পড়া। "ঝুমতলি যাবে ঝুমতলি" কন্ডাকটরের চিৎকার ধরে এগোই। কি দারুণ মনকাড়া একটা নাম।

আজ ঝুমতলি যেতে চাই। বাসে বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ভোরের আকাশ দেখি। এমন সকালে ঝুমতলি যাবার সময় সাথে কেউ থাকলে কেউ ভালো হতো। ঘুমজাগা চোখে আলুথালু একটা বেনী। সবুজের বুকে ছোট ছোট কমলা ফুলের শাড়ী।

ব্লাউজটা গাঢ়ো কমলা রং এর। পায়ে দুই ফিতার স্যান্ডেল। মুখে শুধু হালকা করে ক্রিম মাখা। চোখে রাতের কাজল লেপটানো। দুজনে হঠাৎ বেড়িয়ে পড়া তাই ওর কাছে কোন ব্যাগ নেই।

আর এজন্য পাশে বসে গুন গুন করে অভিযোগ করতে থাকবে। আকাশ দেখতে দেখতে আমার ভাবনার সেই অপরুপাকে বলি একটা গান শোনাবে.......ও গুন গুন করে গান শোনাবে...... "এ দিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিলো দ্বার। আজি প্রাতে সূর্য উঠা সফল হলো কার?" বনে বনে ফুল ফুটেছে দোলে নবীন পাতা........এতদুর আসতেই আমার ভাবনাকে মিথ্যা করে পাশে বসে বেশ দশাশই চেহারার একজন মহিলা। আমি কুঁচকে সরে বসে থাকি..... মন খারাপ হতে থাকে....... আমি এখনো সেই মেয়েটির গন্ধ পাচ্ছি। শিউলী ফুলের মত।

মহাসড়কের কোনায় আমাকে নামিয়ে দিয়ে বাসটি চলে যায়। আমি তাকিয়ে বাসটার ধূলা উড়িয়ে চলে যাওয়া দেখি। মেয়েটির জন্য মন কেমন করে। আমার অন্তরবাসিনী। দুরে তাকাই ।

যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। আকাশ যেখানে সবুজের সাথে মিশে গেছে সেদিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করি। ক্ষেতের আইল ধরে হাটতে শুরু করি। দুরে বাঁশ বাগানের পিছনে জন বসতির আভাস। কারো নাম ধরে কেউ ডাকছে........ হাতের ডানপার্শে এরকটা ছোট কবরস্হান।

কয়েকটা কবর বেড়া দিয়ে বাঁধানো। কিছুক্ষন দাঁড়াই। অচেনা মানুষগুলোর জন্য প্রার্থনা করি। কে ছিলো তারা কে জানে। কয়েকটা বড়ই গাছ সেখানে ছায়া দিচ্ছিল।

বড়ই পাতার ঝির ঝির হাওয়ায় কেমন শীতল হয়ে গেলাম......। কে জানে চলে যাওয়া মানুষদের অভিবাদন কি না! বড়ই পাতার দিকে তাকিয়ে মন কেমন উদাস হলো। হাঁটতে হাঁটতে একটা বাড়ীর বিশাল আঙিনায় এসে পড়ি। একজন বৃদ্ধ একটা মাচানের উপর বসে......। তার মাথার উপরে একটা বড় তাল গাছ।

আমার দিকে অবাক চোখে তাকায়। আমি সালাম জানাই। এবং হাঁটতেই থাকি। থামি না। মেঠোপথ ছেড়ে এবার সড়কে উঠি।

সেখান থেকে একপাশে নেমে যাওয়া ঢালু সরিষার ক্ষেত। এমন হলুদ সরিষা । মনে হয় ছুঁলে আমি হলুদ হয়ে যাবো। হয়তোবা এখানে হলুদ বসন্ত এসে ঘুরে গেছে। হলুদ ক্ষেতটা পার হতেই একটা ছোট খাল।

একটা নাম না জানা বড় গাছের নীচে চুপ বসে থাকি। আমার ভাবনার মেয়েটি কোথা থেকে যে উদয় হয়....... ও পানিতে শাপলা আনতে ছোটে। হাত নেড়ে বারবার আমাকে ডাকতে থাকে। আমি ওর ছুটাছুটি দেখি। মনে ভাবি এমন একটা সকালের জন্য বারবার ঝুমতলি আসা যায়।

হঠাৎ একটা লোক এসে সামনে দাঁড়ায়। নীল রং এর পান্জাবী পড়া। কাঁধে লাঙ্গল। তার পিছনে কয়েকটা ছোট ছেলে মেয়ে। ওরা অবাক হয়ে আমাকে দেখে।

চাষী লোকটি গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে দুরে চলে যায়। আমি সুরের মূর্ছণায় অবাক হয়ে ভাবি জীবনের এই যে জলরং ছবি। মাটির পথ। অচেনা মানুষেরা। ঘুমহীন রাত জাগা চোখে কোন এক খেয়ালী আবেগে ঝুমতলি গাঁয়ে আসা এ যেনো এক স্বপ্ন আমার।

দু'চোখ মেললেই যেনো দেখতে পাবো আমার দু'হাত ভরা সরিষা ফুল। স্বপ্নের সুন্দরতায় বিস্মিত আমি চেয়ে দেখবো শিউলী ফুলের গন্ধ মাখানো এক মেয়ে আমার পাশে. অবাক হতে হতে ভাববো স্বপ্ন সত্যির মাঝামাঝি এ কোন আমি। এমন স্বপ্নময় সুন্দরর সকালের জন্য আমি অজস্রবার ঝুমতলি যেতে রাজি। (এক পথিকের স্বপ্ন) আবার ঝুমতলি Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।