আমি পার্থিব বাস্তবতায় অস্থির, অপার্থিব স্বপ্নপায়ী কেউ একজন . . .
শেষ ক'টা দিন ভার্সিটির বাজে ধরনের চাপে পিষ্ট ছিলাম। বাঘা-বাঘা মেজর কোর্সগুলো একসাথে আক্রমন করায় শক্তভাবে দাড়িয়ে মোকাবেলা করতে বেশ কষ্ট হয়েছে। ফাইনাল, প্রোজেক্ট, প্রেজেন্টেশন, রিসার্চ পেপার বা ডিবেইট গুলোর তান্ডবে আমি মোটামোটি বিপর্যস্ত !!! গত ৩ আর ৪ তারিখ নিয়ে লিখে রাখতে ইচ্ছা হলো তাই কি-বোর্ড-এ ঝড় চালাচ্ছি বেশ বড় একটা বিরতির পর।
মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নামের বেশ ট্রিকি একটা কোর্সে এবার বললো একটা সার্ভিস নিয়ে কাজ করতে হবে। খাবারের সার্ভিস নিয়ে সমাজের আপার লেভেলদের টার্গেট করে ক্যাটারিং সার্ভিস এর সম্পূর্ণ বিজনেস প্ল্যান।
আমি আর আমার গ্রুপমেট(ঝুমুর) মিলে বেশ কোমড় বেঁধে শুরু করলাম প্ল্যান করা। আমাদের কোম্পানির নাম "PURPLE DREAMS" আর ট্যাগলাইন হলো "Your dream is our command"... আরেকটু বিস্তারিত “Your dream is our command. A bride can dream for a colorful and wistful wedding, a person can dream for an ecstatic re-union or a business tycoon can dream for a successful seminar or workshop… just let us know what you dreamt of. We exist to convert your dream into reality. We are sure that you will be very satisfied with our service and even that will exceed the expectation of yours.”
লোগোটা আমার ভাই ব্লগার "জিগস"-র করে দেয়া! সে একটা অসাধারন ভাল ভাই সওওওওব ক্ষেত্রে!!!
কোম্পানি ভ্যান-ও যুক্ত হলো মোবাইল সার্ভিস এর জন্য... আবার প্যারিস হিলটন আপা হাসতে হাসতে কোম্পানির ইনঅগরেশনে পোজ-ও দিলেন !!!
ভ্যান রং করে দিয়েছে সাইফুর ভাই... আর লোগোটাও তার এ্যটাচ করে দেয়া! এই ভাইটা আমাকে অসাধারন সব সাপোর্ট দেয়!!!
এটা অবশ্যই ফটোফানিয়া থেকে আমার বানানো!
[http://www.photofunia.com]
এসব নানা ধরনের ঢং করে প্রোজেক্ট ডিজাইন চুড়ান্তভাবে শেষ করার পর নিজেকে মাত্র সন্তান প্রসব করা মা-র মতো লেগেছে!
যাই হোক... ৪ তারিখ জমা রিপোর্ট ...
|| ০৩ তারিখ ||
রিপোর্টে বেশ কিছু লেখা বাকি...পাগলের মতো টাইপ করছি সন্ধ্যা থেকে...হঠাৎ রাত ৪টায় ট্রান্সফর্মার বার্স্ট করে কারেন্ট চলে গেলো!
আই.পি.এস. দিয়ে কাজ করছি...হঠাৎ আই.পি.এস. বন্ধ হয়ে গেলো। পানি শেষ!
আমার ভেতরটা ভয়ে শেষ! বাবার ল্যাপটপ এনে বসলাম। পাঁচ-আট মিনিট পর বন্ধ হয়ে গেলো... চার্জ শেষ!
রাত প্রায় সোয়া চার তখন...
|| ০৪ তারিখ ||
স্রষ্টার কাছে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছি চরম! ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তিনি কারেন্ট দিলেন ভোর পনে সাতটায়। আবার শুরু করলাম কাজ... প্রায় শেষ কাজ! আবার কারেন্ট গেলো...
তারাহুরোয় শেষ তিন লাইন সেভ করিনি... ১৫ মিনিটের মাথায় কারেন্ট আসলো... মেইল থেকে ঝুমুরের করা অংশটা ডাউনলোড করতে গিয়ে দেখি ডাউনলোড ম্যানেজার ওটা ডাউনলোড করবে না।
মহা বিপদ... হঠাৎ দেখি গোল্লা (জিগস) অনলাইন...ওকে বলাতে ও ডাউনলোড করে পাঠালো।
সোয়া দশটায় কাজ শেষ করে প্রিন্ট নিতে গিয়ে দেখি প্রিন্টার দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে!... ঢুপঢুপ শব্দ-ও করলো..আমার কাছে সেটা শুনতে ব্যঙ্গ করা "খিকখিক" হাসির মতো লাগলো।
রিপোর্ট প্রিন্ট নিতেই হবে... ঝুমুরকে ফোন দিয়ে ওর শ্বশুরবাড়ি গেলাম। পেইজ ৩টা প্রিন্ট হয়েই ঘটঘট শব্দ হয়ে প্রিন্টার বন্ধ!!! ৪-৫ দিন আগের কেনা এইচ.পি.-টার দেমাগ দেখে আমি আর ঝুমুর রাগের চোটে গালি-গালাজ দিয়ে এইচ.পি.-র পূর্বপুরুষ বা উত্তরসুরিদের যাচ্ছেতাই ভাবে চরম অপমান করলাম!
এরপর দৌড়াতে দৌড়াতে গেলাম একটা দোকানে... ওদের অফিস ২০০৭ নাই, সিডি দিয়ে বললাম ইনস্টল করতে... তারা ভাবের পাহাড়ের উপর বসে বলে দিলো সম্ভব না! ঝুমুরকে জিদ ধরে বললাম বাসা থেকে ল্যাপি নিয়ে আয়... ওদের প্রিন্টারের সিডি ইন্সটল করে তারপর প্রিন্ট নিবো!
ঝুমুর ল্যাপটপ নিয়ে আসলো... ভাবের পাহাড়ওয়ালারা আবারো বলে... তারা তাদের প্রিন্টারের সিডি হারিয়ে ফেলেছে!!!
মাথা প্রায় খারাপের মতো হয়ে আমি আর ঝুমুর মোটামোটি বিপর্যস্ত... তখন একটা ছোট্ট খুপড়ি ধরনের দোকান দেখলাম... গিয়ে দেখি দু'জন ভাই বসা... তারা বললো ল্যাপটপে তাদের প্রিন্টারের সিডি ইন্সটল করে নিতে। খুশিতে আমি-ঝুমুর বাক্যহারা! পৃথিবীতে এখনো মহামানব আছে !!!
প্রিন্টারের সিডি ইন্সটল হতে হতে ঝুমুরের ল্যাপটপের চার্জ চলে গেল! আমি স্রষ্টাকে বললাম...অনেক উত্তেজনায় আছি! আর কতো !!!???
মহামানব ধরনের ভাইয়াগুলো উপরের তলার ইলেক্ট্রিকের দোকান থেকে থ্রিপিন প্লাগ এনে চার্জের ব্যবস্থা করে দিলেন! আবারো আমি-ঝুমুর কৃতজ্ঞ !!! এ ধরনের মানুষগুলোর জন্য খারাপ সময়টাও পরাজিত হয়!
এর ঠিক দশমিনিটের মাথায় কারেন্ট গেল... ল্যাপটপ-ও বন্ধ!
আধঘন্টা পর কারেন্ট আসলো...প্রায় পনে ৩টায় রিপোর্ট প্রিন্ট নিয়ে নিজেকে যুদ্ধ জয়ীর মতো লাগছে...
ঠিক তখন গাড়ির টায়ার বার্স্ট করলো!!!
ঝুমুরকে দিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিলাম... আর অবাক হয়ে ভাবলাম...
"অভাগী যেদিকে যায়...সাগর শুকিয়ে যায়!!!"
[শেষ পর্যন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে খুব ভাল মতো, স্যার-ও বেশ খুশি! আমি আন্তরিক ধন্যবাদ দিচ্ছি জিগস, সাইফুর ভাই আর ছন্নছাড়ার পেন্সিল- কে ...আমার দুঃসময়ে অসাধারন ভাবে অবলম্বন হয়ে ওঠার জন্য!!!]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।