আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই সময় আর এই সময়! স্মৃতিচারণ!

ইমরোজ

অনেকদিন হলো মোহাম্মদপুরের চাপ খাইতে যাওয়া হয় না। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া হয় না। অনেক স্কুলের বন্ধুদের থেকে এতটাই দূরে সরে গেছি যে তাদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ নেই। খুব মনে পড়ে আমরা স্কুলের উল্টোদিকের মাঠের ভেতর জমিয়ে আড্ডা দিতাম। পরের দিন পরীক্ষা আছে, অথচ আমাদের পড়াশোনার কোন চিন্তা নাই।

গল্প করেই যাচ্ছি। আজকে হঠাৎ করেই সেই পুরনো রাস্তা দিয়ে রিক্সা দিয়ে আসতে গিয়ে মনে পড়ছিল সবই। আরও বেশি কষ্ট লাগছিল যখন স্কুল পড়ুয়া কতগুলো ছেলে সেই একই জায়গায় বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। দুনিয়ার অর্থহীন কথাবার্তায় তারা সময় পার করে দিচ্ছে দিব্যি। অথচ আমি আজ দর্শকের আসনে।

নিজেকে কেমন বদলে ফেলেছি। অথবা বদলে কীভাবে গেলাম তা নিজেও টের পাইনি। একবার ভাবলাম আমার বন্ধুর বাসায় একটা টোকা দিয়ে দেখি। ও যদি বাসায় থাকে তাহলে এই মাঠের কোণায় বসে এককাপ চা শেষ করে হলেও তো পুরনো কিছু কথা হবে। যেই কথাটা ভাবছি রিক্সা ততক্ষণে মোহাম্মদপুর ছেড়ে লালমাটিয়ার গলি দিয়ে ঢুকে পড়েছে।

এইখানটায় পুরীর দোকানে ভরপুর। এই পুরীগুলো খেতে অদ্ভুত স্বাদ হয়। পুরীর সাথে যদি কাবাব নেওয়া যায় তাহলে তো কথাই নাই। বিহারী খানা। গন্ধটাও আসছে, অন্য সময় হলে ঝাপিয়ে পড়তাম খাবার জন্য।

পকেটে বাবার দেওয়া টাকার তোয়াক্কাও করতাম না। কিন্তু আজকে আমার পকেটে অনেক টাকা। হাজারের উপরে, অথচ আমি খরচ করতে পারছি না। কারণ সেদিনের থেকে আজকের মধ্যে একটা ছোট পার্থক্য ছিল। টাকাটা আমার নিজের আয় করা, তাই এর কদর বুঝতে শিখেছি।

তাই মাঝে মাঝে নিজে অভুক্ত থেকে হলেও নিজের ছোট বোনটার জন্য কাবাব কিনে নিয়ে যাই, বাবা মা কে অনেক কিছুই দিতে ইচ্ছে করে। দেইয়ো। এরকম কী সবার হয়? নিজেকে এমন সামাজিক করে ফেলতে পারলাম কী করে? আমি তো সেইদিনও ফ্রীজ থেকে কোকটা বের করে শেষ করে ফেলতাম, বোনটা জানতেও পারত না বাসায় বাবা কোক এনে রেখেছেন। আর এখন কোক এনে রাখলে, বোনকেই বলি, আমাকে একটু দে। নিজের মধ্যে স্বার্থপরতা যায়নি এখনও।

মাঝে মাঝেই পাগলামি করে বসি। নিজের আমোদের একটা ব্যাপার আছে। খুব যখন ইচ্ছে হয়, পুরান এলাকা গুলো দিয়ে উদাসীন ভাবে ঘুরে বেড়াই। এখন যেমটা ঘুরছি। আর এইসব এলাকার সেইসব স্মৃতি মনের বাঁকে বাঁকে উকি দিতে থাকে।

সেদিন সাকিবকে ফোন করে বললাম, এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। চল একদিন চাপ খেয়ে আসি। ওর জবাবটা পেয়ে মনে হলো আসলেই আমরা অনেক পুরনো হয়ে গেছি। আমার সময় হলে তার সময় হয় না। তার সময় হলে আমার হয় না।

মাত্র "দুইজন মিলে গিয়ে কী মজা হবে রে"? জানি হবে না। তবু তোর সাথে কতদিন গল্প করি না। হাবিব রেস্তোরায় খেতে গিয়ে একবার কী আকামই না করেছিলাম। বোরহানি ফেলে পুরো টেবিল মেসাকার করে...সবাই হাসছি, যেন কিছুই হয় নাই। আর তমোর উপর্যপুরি কমেন্ট চলছে।

কমেন্টটা কি নিয়ে বেশ মনে আছে। গত ক্লাসে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ম্যাডামকে সে জিজ্ঞেস করে বসল, অন্তঃসত্ত্বার পুং লিঙ্গ কী? আমরা পেছনের বেঞ্চে হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি। ম্যাডাম হেসে বললেন, এর কোন পুং লিঙ্গ নাই। আমরা সবই জানি যদিও, তবু তমকে দিয়ে প্রশ্নটা করালাম। এইভাবে স্কুলের সবদিন কত ঘটনায় ভরপুর থাকত।

আর স্কুল শেষে জম্পেশ আড্ডা। স্যারদের বাসায় গিয়ে নানা প্রকারে আজকের ক্লাসটা করব না করব না করে আর করাই হত না। স্যারদের সেই হাসিমাখা উত্তর আর প্রায়শই উত্তমমধ্যমের কথা কার না মনে নেই? অথচ, দিনের শেষে আর কিছুই করতে ইচ্ছে করেনা। কাউকে বললে, সে নস্টালজিক হয়ে যায়, কথা হয়, কিন্তু দেখা করার মত ফুরসত থাকে না কার!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।