জাতীয় বিমান বন্দরের সামনে লালন ভাস্কর্য। মতিঝিলের বিমান বাংলাদেশের অফিসের সামনে বালাকা ভাঙ্গা নিয়ে দেশব্যাপী তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছে এইগুলো ধর্মের কথা বলে ভাঙ্গা হচ্ছে। মাঠ গরম রেখে বিশেষ ধর্মীয় দলগুলোর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এগুলো করা হচ্ছে। নির্বাচনের পূর্বে এমন ঘটনা মোটেই সুখোকর নয়।
যারা এই কাজ গুলো করছে তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে নিশ্চয়ই।
ইসলামের বিধান মতে, নিরাকার এক আল্লাহর উপাসনা ইসলাম বিশ্বাসী লোকজন করে থাকেন। (যারা মুসলমান হয়েও ইসলামী বিধান মানে না তাদের কথা আলাদা ছাড়া)। শুধু মাত্র মাত্র জন্মসূত্রে মুসলামান হওয়া যায় না।
জন্মসূত্রে ইহুদী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া যায়।
কেউ ইচ্ছে করলেই এই দুই ধর্মে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না। তবে ইসলাম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ধর্মে যে কেউ ইন এবং আউট হতে পারে।
ধর্মের দিক দিয়ে সবচেয়ে সহজ ও পরিচ্ছন্ন ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ইসলামের নামাজ সংস্কৃতি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একই কাতারে শামিল করে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি থেকে সাধারন এক দিন মজুর এক সাথে একই ইমামেরে পেছনে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করে যে সমতা প্রদর্শন করতে পারে অন্য যে কোন ধর্মে তা নেই।
এক সময় কাষ্ট প্রথার কারনে কিছু মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতাটুকু ও ছিল না। বেদ পড়া ও শোনার কারনে নিন্মবর্নের মানুষের উপর যে নিমর্মতা চালানো হয়েছিল তা পরিনামে ধর্ম ত্যাগে বাধ্য হয় তারা।
আষ্টিক, দ্রাবিড়, আর্য, নিন্মবর্গের নানা লোক বিভিন্ন সময়ে ধর্মান্তরিত হয়।
এক সময় এই দেশে আরব বনিকরা চট্রগাম পোর্টের মধ্যে দিয়া বানিজ্য করতে আসে।
এই মুসলিম লোকগুলো ব্যবহারিক ( মোয়ামেলাত) জীবন এতটাই সুন্দর ছিল যে মানুষ স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে।
তলোয়ারের জোরে ইসলাম এই দেশে আসেনি।
অত্যাচারিত অসহায় মানুষগুলোর একমাত্র আশ্রয় হলো ইসলাম। সুফী, সাধক, ধর্ম প্রচারকগন মিশন নিয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছেন দশ দিগন্তে।
ভাস্কর্য বা মূর্তি ভাঙ্গা বা গড়া আমাদের মত সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশের কাজ নয়। এগুলো নির্মান করে বিপুল পরিমান রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে ঠিক তেমনি এগুলো ভেঙ্গে সাধারন সেন্টেমেন্টকে উস্কে দেওয়াও ঠিক নয়।
এসব কাজের সস্তা ইমোশন সাময়িক চমক সৃষ্টি করবে তবে এটা আত্মঘাতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।
ভাস্কর্য বা মুর্তি রাষ্ট্র গড়েছে এগুলো রাষ্ট্রকেই প্রয়োজনবোধে সরাতে হবে।
মনে রাখতে হবে ভালো কাজের জন্য আইন হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ।
আমাদের দেশের কত মানুষ রাস্তায় ঘুমায়, কনকনে শীতের মধ্যেও একটি শীত বস্ত্র যার নেই, যে শিশুর জন্ম নেওয়ার পর একটুকু দুধের ব্যবস্থা করতে পারে না যে রাষ্ট্র সেই রাষ্ট্র বিশাল অংকের বাজেটে তৈরী করে ভাস্কার্য বা মুর্তি তৈরী করতে। অনুৎপদশীল সেক্টরে এই বিশাল বরাদ্ধ নিস্প্রান পাথর আমাদের আমাদের কি কল্যান আনবে আমি বুঝি না।
আমি মন্দির, পেগোডা, চার্চের প্রতিকৃতি বা মুর্তির ব্যাপারে বলছি না। আমি বলছি, সংখ্যাগরিষ্ট এই মুসলামানদের দেশে প্রকাশ্য মুক্তস্থানে ভাস্কর্য বা মুর্তির কথা বলছি। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবেচনায় মনুমেন্ট স্থাপন করা হয়। এনিয়ে বিতর্ক রয়েছে দেশে বিদেশে । কিন্তু আমাদের দেশের মত এমন অভাগা দেশ কোথাও নেই যারা নিজের হাতে নিজেরাই আইন তুলে নিচ্ছে।
কেউ এটা তৈরী করেছ আবার কেউ এটা ভেঙ্গে দিচ্ছে। আইনের প্রতি কেউ শ্রদ্ধা পোষন করছে না। যেন সবাই রাজা। যার যা খুশী তাই করবে।
খবরে প্রকাশ, ভুইফোর ইসলামী দল আল বাইয়েন্যাত এই কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
এর আগেও এই সংগঠন দেওয়াল লিখন করে প্রচার করেছে, ইসলামের নামে গনতন্ত্র হারাম, টিভিতে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার হারাম।
যে দেয়ালের পাশে মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করে যেখানে তারা কোরআন হাদীসের বানী লিখে রাখে। (দিক শতদিক)
এসব কর্ম কান্ডের সচেতন প্রতিবাদ খুব একটা দেখা যায় না। তাই এদের দৃষ্টতা অনেক বেড়ে গেছে। স্পর্শ কাতর বিষয়ে ঘৃনা ছড়িয়ে হয়ত কারো হয়ে এরা কাজ করছে।
এদের কার্মকান্ড নিষিদ্ধ করা এখনই জরুররি। নইলে বাংলা ভাই অথবা শায়খ রহমানের মত এরাও জাতির ঘুম হারাম করে দিতে পারে।
ইসলামের নামে এসব গদ্দার (বৈঈমানরা) ছিল এবং এরা থাকবে পদ লেহনকারী হিসেবে।
এদের কর্মকান্ডর দায়ভার যেন সাধারন ধর্ম প্রান মুসলমাদের উপর না পড়ে। এটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক উজ্জ্বল
নজীর স্থাপন করে বিগত দিনগুলোতে। ঈদ ও পূজা এক সাথে উদযাপিত হয়েছে বছরের পর বছর।
বিজয়ের মাসের আর কয়দিন আসবে নতুন বছর। নতুন বছর নিয়ে আসুক, অনাবিল নতুন গনতন্ত্রের বারতা।
ফিরে আসুক নাগরিক জীবনের স্বত্ত্বি।
ভাস্কর্য বা সোন্দর্যবর্ধক স্থাপনা ভাঙ্গা নয়,
মনের কালিমা ভেঙ্গে নিজেকে মুসলিম দেশের একজন আত্মমর্যাদাশীল
গর্বিত নাগরিকে পরিনত করি। সেটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।