"You may like a situation which is not good for you And You may dislike a situation which is good for you." (Al- Quran)
মানিক,প্রিন্সেস ডায়ানা ও নারীমূর্তি (পর্ব-১)
মানিক,প্রিন্সেস ডায়ানা ও নারীমূর্তি (পর্ব-২)
৬.
মানুষের মন যে কী বিচিত্র! বিশেষ করে পুরুষ মানুষের মন বেশি বিচিত্র হয়ে যায় যখন তারা প্রেমে পড়ে। এমন কী কোন নারীমূর্তির প্রেমে পড়লেও..পুরুষ মানুষ একরকম অন্ধই হয়ে যায় প্রথম প্রেমের বেলায়।
মানিক নামের গ্রামের সহজ সরল ছেলেটি তার অবচেতন মনের প্রিয় মুখছবিটি একটি মূর্তির (ডিসপ্লে ডল) মধ্যে দেখেই তার প্রেমে পড়ে গেল.. সে ঈদের মার্কেটে এমন চেহারার কোন মেয়ে অবশ্যই দেখবে এই আশায় দিন গুজরান করছে.. অন্যকোন মেয়ে কিংবা অন্য কোন বিষয়ের চিন্তাই সে মাথায় স্থান দিচ্ছে না । সে এটাও চিন্তা করছে না সে যদি ঐরকম চেহারার কোন মেয়ে দ্যাখেও তাহলে ঐ মেয়েটি তাকে পছন্দ করবে কী না ! আর সেই বা কীভাবে তাকে বলবে তার ভাললাগার কথা.. ঢাকা শহরের মেয়েরা কোন সেল্সম্যান কে বিয়ে করবে কী না তাও তার ভাবনায় নাই।
মায়ের বাধ্যগত সন্তানটি জীবনে প্রথমবারের মত মায়ের সাথে মিথ্যা বলে ফেলে.. মায়ের পছন্দের মেয়েটির চেহারা দেখারও প্রয়োজন মনে করে না.. সবই প্রথম প্রেমের অন্ধত্বের জন্য..
৭.
কোরবানী ঈদের বাকী আর একমাস।
মানিকের যেন আর তর সয় না। যদিও ঈদের মার্কেট মোটামুটি শুরু হয়েছে । সে মহিলা মেয়ে সবাইকে এক পলকে বিচার করে নেয় যে দেখতে তার ডায়ানা ডলের মত কী না। গত একসপ্তাহ ধরেই তাকে হতাশ হতে হচ্ছে। একইরকম চেহারা তো দূরে থাক.. বিন্দুমাত্র মিলও নাই..
অবচেতন মনে হতাশা বাসা বাঁধতে থাকে...
সে বেড়াতে যাবার সিন্ধান্ত নেয় ।
ছুটি নিয়ে সে কোন দিন চিড়িয়াখানা কোনদিন রমনা পার্ক কোনদিন ধানমন্ডি লেক এমন কী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা হলগুলোর সামনেও সে ঘোরাঘুরি করে । তার একটাই আশা ডায়ানা ডলের মত কোন মেয়েকে যদি দ্যাখে.. কিন্তু কাছাকাছি চেহারার কোন মেয়েকেও সে দেখতে পায় না.. সে বড়ই আশ্চর্য হয়..এরকম চেহারার কোন মেয়েই কী নাই ? পরক্ষণেই এ ভাবনা সে উড়িয়ে দেয় .. এরকম মেয়ে থাকতেই হবে.. সে তার মায়ের কথা অমান্য করেছে এই রকম চেহারার একটা মেয়ের জন্য..
বৃহস্পতিবার রাতটি তার খুব খারাপ ভাবে কাটে। রাতে ভাল ঘুম হয়নি। সে এখন মোটামুটি ভয়ানক দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছে.. এরকম মেয়ে না পেলে কী হবে..
রাতে ঘুম না হওয়ায় ঘুম ভাঙল একটু দেরিকরে। অবশ্য সমস্যা নেই আজও সে ছুটি নিয়েছে ইডেন কলেজ যাওয়ার জন্য .. সে ব্রাশ করে এসেই একটি জিনিস খেয়াল করে তার রুমটি বেশ অগোছালো আর ধূলোবালিতে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে ।
নারীমূর্তি মানে ডায়ানা ডলের প্রেমে পড়ার পর থেকেই সে আর কোন কাজই রুটিন মাফিক করতে পারেনি.. সব শুক্রবার ভোরে সে তার রুম পরিষ্কার করত.. সে আজ তার রুম পরিষ্কার করার সিন্ধান্ত নেয়।
ধূলোবালি মুছতে মুছতে প্রায় ১২ টা বেজে যায়... এবার পত্রিকা ম্যাগাজিন গোছগাছ শুরু করে .. অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র সে এক জায়গায় জড়ো করতে থাকে.. এবার সে ড্রয়ারটি খোলে .. ড্রয়ারে অনেক হাবিজাবি কাগজপত্র..সে সব একসাথে নিচে ফেলে..
একটি অছেঁড়া খাম কাগজপত্রগুলোর উপর বসে রয়েছে..
সে বুঝতে পারে তার মায়ের পাঠানো চিঠি এটি যার ভেতর পারুলের ছবি রয়েছে..
সে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে মন দেয়.. কিন্তু বেশিক্ষণ কাজে মন বসাতে পারে না..তার মায়ের সাথে মিথ্যা বলার কারণে প্রথমবারের মত তার হৃদয়ে অপরাধবোধ দেখা দেয়.. সে হঠাৎই চিঠিটি খোলার সিন্ধান্ত নেয়..
মানিক ধীরে ধীরে চিঠিটি খুলতে থাকে.. সাদা কাগজে লেখা চিঠি আর আর একটি কাগজে মোড়া কী যেন.. মানিক বুঝতে পারে ওর ভেতর পারুলের ছবি..সে প্রথমে চিঠিটি পড়ার সিন্ধান্ত নেয়।
সাদা কাগজে মায়ের লেখা .. বেশিরভাগই পারুল মেয়েটিকে নিয়ে লেখা... ও এবার অন্যকাগজটি বের করে.. সেখানে একটি ছবির উল্টো পিঠ দেখা যাচ্ছে .. ছবিটি ওল্টাতেই ওর মাথায় যেন আকাশ ভেং্গে পড়ে .. এ কাকে দেখছে সে.. এ তো পারূল নয় .. এতো নারীমূর্তি মানে ডায়ানা ডল.. এটা কীভাবে হল!! মা তো পারুলেরই ছবি পাঠিয়েছে ..তাহলে.. তাহলে..
পরক্ষণেই মানিক ঠিক করে ফেলে তাকে কী করতে হবে.. সে ব্যাগ গোছাতে থাকে .. পুরো রুমটি অগোছালো রেখেই সে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়..
হায়রে প্রেম জুমা’র নামাজের কথাও মানিক ভুলে যায়...
৮.
মানিক যখন বাড়ীতে পৌঁছল তখন বিকাল । সে বাড়ীর সামনে এসে স্তব্ধ হয়ে যায়..ওদের মূল দরজায় তালা ঝুলছে.. সে বুঝতে পারে না.. ব্যাপার কী?..পাশেই তার খালারা থাকে খালার বাড়ীতে গিয়ে ছোট খালাকে সালাম করে কুশলাদি বিনিময় করেই জিজ্ঞেস করে তার আব্বা - আম্মার কথা..
ঃ অ আপা আর দুলাভাই তো পারুলদের বাড়ীতে। তুই জানস না আজ পারূলের বিয়ে ? ওরা তো তোর সাথেই চাইছিল কিন্তু শুনলাম তোর না কী পছন্দ হয় না.. তা বাবা তোর পছন্দ হয় নাই কেন? পারূল তো সুন্দরী মেয়ে..
মানিকের তখন জবাব দেয়ার অবস্থা নাই ।
তার মাথা ঘুরছে মনে হচ্ছে যে কোন সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাবে.. খালাকে কোন জবাব না দিয়েই সে পারুলদের বাড়ীর দিকে দৌড়াচ্ছে.. টানা পাঁচ মিনিট দৌড়ে সে পারুলদের বাড়ীতে উপস্থিত হয়..
৯.
এই বাড়ীতে আজ সাজ সাজ রব । মানিক ঢুকেই দ্যাখে সব মানুষগুলো যেন বাড়ীর বড় উঠানে এক জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে .. সে ও ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায়.. কমিনিউটি সেন্টারের মত করে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে .. সেই মঞ্চে পারুল ও তার বর বসে আছে ।
বিয়ের পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা চলছে...মানিক অলক্ষ্যে চোখ মুছতে থাকে সে স্তম্ভিত! বাকরুদ্ধ! সে একদৃষ্টে পারুলের দিকে তাকিয়ে আছে...
ওর কাছে মনে হল ওটা য়েন পারুল নয়..ওর নারীমূর্তি মানে ডায়ানা ডল.. .. যেন শাড়ি জড়িয়ে বসে আছে.. পাশে বসা ওর বর টিকে “বাংলার নারী” দোকানের কাস্টমার বলেই ওর মনে হয়.. যে কাস্টমার আজ শাাড়ী সহ ডলটি নিয়ে যাবে ..
এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন.. মায়ের কথা না শোনা জনিত দুর্ঘটনায় মানিক তার ডায়ানা ডলের বাস্তব মেয়েটিকে হারিয়ে ফেলল... (শেষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।