http://yousufsultan.com/
আরব আমিরাত এখন বিশ্বের অন্যতম ট্যুরিষ্ট কান্ট্রি। রাজধানী আবুধাবী আর বানিজ্য শহর দুবাই ছাড়াও আল-আইন, শারজাহ, রাস-আল-খাইমাহ -সবই সৌন্দর্য্যের অপার লিলাভূমি। সি বিচ, শপিং মল, হাই রেস বিল্ডিং ও অত্যাধুনিক গার্ডেন নিয়ে আবুধাবী সমৃদ্ধ। আর দুবাইয়ের পাম সিটি, বারজ্ জুমেইরা ও নতুন ডিনামিক বিল্ডিং তো ইতোমধ্যেই সবার নজর কেড়েছে। আল-আইনের সবুজে ভরা পাহাড়ী এলাকা, চিড়িয়াখানা আর শারজাহর ক্রিকেট স্টেডিয়াম তো রয়েছেই।
এসব ছাড়াও আরব আমিরাতের অন্যতম আকর্ষণ হল মুসলমানদের উপাসনালয় মসজিদসমূহ। সুউচ্চ মিনার, সুদৃশ্য গম্বুজ আর বৈচিত্র্যময় কারুকাজ এসব মসজিদের কমন বৈশিষ্ট্য। আমাদের ঢাকার ন্যায় আবুধাবীও মসজিদের শহর। শহরটির যেকোন জায়গায়ই দাঁড়ান না কেন, সামনে, পেছনে, ডানে ও বাঁয়ে কোন না কোন মসজিদের মিনার থাকবেই। আর আজানের সময়... সে তো এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে চারপাশ মুখরিত।
সম্প্রতি আরব আমিরাতে তৈরী হল মক্কা ও মদীনার হারামাইনের পর পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম মসজিদ। ২০০৭ সালের রমজান মাসে কর্তৃপক্ষ তা অফিসিয়ালি খুলে দেয়া হয়। গত ঈদে সেখানে আমার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। তা নিয়েই আজকের এই লেখা।
সেদিন ঠিক কি বার ছিল মনে নেই। লোকেশনটাও প্রথমে জানা ছিল না। বন্ধুর কাছ থেকে জেনে নিলাম। মুসাফফা ব্রীজ ও মাকতা ব্রীজের মাঝামাঝি এর অবস্থান। খুঁজে পাব কিনা একটু চিন্তিতই ছিলাম।
স্লো স্পিডে ড্রাইভিং করে চলছি। হঠাৎ-ই একটা বিলবোর্ডে নজর পড়ল। আমরা ঠিকমতই এসেছি। ডানে গিয়ে মসজিদের বিশাল পার্কিংয়ে গাড়ী পার্ক করলাম।
প্রথমেই চোখ পড়ল দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ মিনারের দিকে।
মসজিদের চার কোণায় ১১৫ মিটার উচ্চতার রয়েছে এরকম চারটি মিনার। আর সাথে আছে সাদা মার্বেল পাথর দ্বারা অলংকৃত ৫৭ টি গম্বুজ, যেগুলোর ভেতরটা মার্বেলেরই তৈরী। মসজিদের বাইরে এখনো কিছু কাজ চলছে। সম্মুখ দিকের পানির ফোয়ারা দু’টি এখনো চালু হয়নি। আমরা হাঁটতে হাঁটতে মসজিদের বিশাল গেটে পোঁছুলাম।
সেন্ডেল-জুতো ভেতরে রাখার ব্যবস্থা আছে। বক্সে রেখে তা চাবি দিয়ে লক করে নিজের কাছে চাবি রাখতে হয়। সিস্টেমটা ভালই।
ভেতরে যতই যাচ্ছি ততই দৃষ্টিনন্দন কারুকাজগুলো দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। ইতোমধ্যে আসরের নামাজের আযান হল।
আমরা অযূ করার জায়গা খুঁজতে লাগলাম। হাতের বাঁ পাশ ধরে অনেক দূর হাঁটতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে যেন আর শেষ হয়না। অবশেষে পেলাম। এস্কেলেটর দিয়ে নিচে নামতে হবে।
এত সুন্দর কারুকাজ করা প্রতিটি ওয়াল.. আর অযূখানা তো এক কথায় অসাধারণ।
অযূ করে আবার এতদূর হাঁটা। মূল মসজিদ এখনো অনেক ভেতরে। মাঝে খোলা আকাশের নিচে মার্বেলের উপর ফুলের ডিজাইন করা কারুকাজময় বিশাল মাঠ। পরিধি ১৭,০০০ বর্গ মিটার।
মসজিদের বারান্দা ধরে হাঁটছি আমরা। খেজুর গাছের ডিজাইনে স্বর্ণের প্রলেপ করা প্রতিটি পিলারে। খুব সুন্দর লাগছে। এরই মধ্যে পোঁছে গেলাম মূল মসজিদের গেটে। এত উঁচু গেট.. ভেতরে ঢুকলাম।
কিন্তু না, এটাও মেইন গেট না। এই গেটের ভেতর একটা বড় প্যাসেজ। এরপর আসল গেট। এই প্যাসেজটার ভেতরে সবচেয়ে বেশি কারুকাজ। প্রতিটা দেয়ালে শিল্পীর ছোঁয়া।
এগুলো দেখতে দেখতেই মেইন গেট এসে গেল। এই গেটের কারুকাজ তো আরো বেশি। (দুঃখিত, আমার শব্দভান্ডার এমনিতেই কম। তাই কারুকাজ, অসাধারণ, চমৎকার ছাড়া আর কিছু বলতে পারছি না। )
ভেতরে ঢুকলাম।
এ এক বি-শা—ল হল। এ পাশ থেকে যেন ও পাশটা দেখাই যায় না। পুরো মসজিদে একটা মাত্র কার্পেট। ইরানী শিল্পী আলী খালিকীর ডিজাইনে ইরানের কার্পেট কম্পানীর তেরী এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কার্পেট। এর দৈর্ঘ্য ৫,৬২৭ বর্গ মিটার।
ওজন ৪৭ টন। একসাথে ৯,০০০ মুসল্লী নামাজ পড়তে পারবে এই হলটিতে। আর এর পাশেই মহিলাদের জন্য রয়েছে আরো দুটো রুম যার প্রতিটিতে ১,৫০০ জন করে নামাজ পড়তে পারবে। আর সব মিলিয়ে পুরো মসজিদে নামাজ পড়তে পারবে ৪০,০০০ জন।
যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।
নামাজের সময় হলে নামাজ পড়ে নিলাম। এরপর আবার ঘুরে ঘুরে দেখা। ইমাম সাহেবের মিম্বরের উপরের যে ওয়ালটি, তাতে আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম লেখা রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ালই অসাধারণ সুন্দর কারুকাজ করা। লাইভ টেলেকাস্ট করার জন্য সেট করা আছে ক্যামেরা সরঞ্জামাদি।
এছাড়া পিলারগুলো, খতিবের খুৎবা দেয়ার জায়গা –সবই দেখার মত।
আমার মত কত দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছে সেদিন। ক্যামেরার ক্লিক শোনা যাচ্ছে শুধু। শহর থেকে একটু দূরে হওয়ায় মসজিদটিতে নামাজের চেয়ে বেশি সকলে তা দেখতেই যায়। নন মুসলিমদেরও আগমন ঘটে।
মজার ব্যাপার হল, আমরা গেটে কয়েকজন হাফ প্যান্ট পড়া ফিলিপিনো মহিলা দেখলাম যাদের কর্তৃপক্ষ হাতের ইশারায় অন্য দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর সেখান থেকে তারা বোরখা পড়ে বের হচ্ছে। আশ্চর্য। পরে জানলাম, সেখানে অসংখ্য বোরখা রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। সেগুলো পড়ে ভেতরে ঢুকতে দেয় কর্তৃপক্ষ।
যদিও নন-মুসলিমদের মসজিদে ঢোকা আরব আমিরাতে নিষিদ্ধ, তবু ইসলামী সংস্কৃতি ও ভাবধারার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে কেবল এই মসজিদটিকে মুসলিম ও নন মুসলিম সকলের জন্যই উন্মুক্ত করে দিয়েছে আবুধাবী ট্যুরিজম অথোরিটি।
দেখতে দেখতে যাওয়ার সময় হয়ে গেল। আমরা বেরিয়ে পড়লাম। পাশেই শেখ জায়েদের কবর। তিনি আরব আমিরাতের ফাউন্ডার এবং প্রথম প্রসিডেন্ট।
বছর দু’এক হল তিনি মারা গেছেন। তার নামেই মসজিদটির নাম রাখা হয় ‘শেখ জায়েদ মসক্’। আমরা কবর জিয়ারতের জন্য গেলেও কর্তৃপক্ষ সেখানে কাউকে দাঁড়াতে দেয় না। তাই চলে আসলাম।
বাসায় ফিরছি আর নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে.. হয়ত পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের কোনটিই আমার দেখা হয়নি, কিন্তু পৃথিবীর ১ম, ২য় ও ৩য় বৃহত্তম মসজিদ তো আমি দেখেছি, সেগুলোতে নামাজও পড়েছি।
এ তৃপ্তি শুধু সপ্তাশ্চর্য কেন, হাজারাশ্চর্যের চেয়েও বহুগুণ বেশি। আলহামদুলিল্লাহ।
তথ্যসুত্র: উইকিপিডিয়া
ছবি: নিজ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।