পারভেজ রবিন 'দেশে-বিদেশে'র উপর একটি ভালো রিভিউ লিখেছেন সম্প্রতি (যদিও তিনি এটাকে রিভিউ বলতে নারাজ। Click This Link )। লেখাটা বেশ ভালো লেগেছে। আলাদা করে ফ্রন্ট পেজে এ ব্যাপারে লেখার উদ্দেশ্য হলো যারা এখনও 'দেশে-বিদেশে' পড়েননি তাদেরকে পুণর্বার উৎসাহ যোগানো যে আপনারা প্লিজ লেখাটা সময় করে পড়ে দেখবেন। তাহলে, সৈয়দ মুজতবা আলী যেমন বলেছেন, মাছির মতো অনেকগুলো অমূল্য চোখ গজিয়ে উঠবে আপনাদের।
আমি নিজেও 'দেশে-বিদেশে' শেষ করেছি মাত্র গত পরশু। অসাধারণ লেগেছে। সৈয়দ সাহেবের লেখার স্বাতন্ত্র্য তার প্রতিটি লেখায় সমুজ্জল। আড্ডার মেজাজে আর চটুল ছন্দে আগাগোড়া একটি কাহিনী বর্ণনা করা, এবং তার সাথে সাথে বহুভাষাভাষী এবং বৈচিত্রময় ঐতিহ্যবাহী একটি স্বল্পপরিচিত জাতিগোষ্ঠির যুগান্তরের ঘটনাবহুল ইতিহাসকে বিধৃত করা একমাত্র তার কলমেই সম্ভব। আফগান মীর চরিত্রের কন্ঠে ক্লাসিক বাংলার কঠিন অথচ প্রাঞ্জল সংলাপগুলো পড়ে সহজেই বুঝা যায় ভাষাতত্ত্বে সৈয়দ সাহেবের ব্যূৎপত্তি কত উঁচুমানের এবং তিনি চাইলেই সাধু বা চলিত বাংলায়ও সুন্দর আমেজে লেখাটা লিখতে পারতেন।
সমগ্র বাঙালী জাতির চরম সৌভাগ্য যে তিনি সেটি করেননি। আমাদের আটপৌরে মুখের ভাষায় যে সাবলীলতা আছে, প্রতিটি বাক্যের শব্দমালায় যে অন্তরংগ নিবিড়তা আছে সেটা বার বার উপলব্ধি করা যায় শুধু তার লেখা পড়লেই।
পারভেজ রবিনের সুন্দর লেখাটার সাথে আরো একটা কথা আমি এখানে যোগ করতে চাই, সেটি হলো 'দেশে-বিদেশে' পড়ে আমার কেনো জানি মনে হলো আফগানিস্তান বোধহয় কোনো কারনে বিধাতার প্রিয় এক ইতিহাসের পরীক্ষাগার। তা নাহলে আজ প্রায় শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও রুক্ষ মরূঝড়ের মতো একই করুণ ইতিহাসই কেনো আফগানিস্তানে বার বার ফিরে আসছে। ইতিহাস তার স্থান ঠিক রেখে শুধু কাল আর পাত্র বদলিয়ে নিয়েছে।
বাচ্চায়ে-সাক্বাওর দল আজ হয়ে গেছে তালেবান, রাজা আমানুল্লাহর জায়গা দখলে নিয়েছে হামিদ কারজাই। আর রূশ-ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী চক্র নাম ভাড়িয়ে হয়েছে ইঙ্গো-মার্কিন অক্ষশক্তি। তবে বেহায়া ইতিহাসের মনে রাখা উচিৎ ছিলো যে, 'আফগানরা বহু জাতিতে বিভক্ত, স্বার্থের খাতিরে তারা নিজেদের গলা কাটাকাটি করে। কিন্তু তারা ইংরেজদের ইতিহাস ভালো করেই জানে, ইংরেজদের তারা আফগানিস্তানের চেয়েও ভালো করে চেনে। '
'দেশে-বিদেশে'-র ঘটনাবলীর সময়কাল সম্বন্ধে পারভেজ রবিনের ধারনা সঠিক।
সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯২৬ সালে শান্তিনিকেতন থেকে বি এ পাশ করেন, কাবুল যান ১৯২৭ সালের শুরুর দিকে, ফিরে আসেন ১৯২৯ সালে। 'দেশে-বিদেশে'-র কাহিনীতে তিনি তার সে সময়কার অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন, যদিও সেটি তিনি লিখেছেন কাবুল থেকে ফিরে আসার প্রায় ১৭-১৮ বছর পরে ১৯৪৭-৪৮ সাল নাগাদ। উনি তখন সম্ভবত বগুড়া আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল।
আমি এখন 'চাচা কাহিনী' পড়ছি। মুজতবা সমগ্র ৭ খন্ড গতবছর দেশ থেকে কিনে এনেছিলাম।
মাত্র পড়তে শুরু করেছি, আগামী ঈদের আগেই শেষ করব ইনশাল্লাহ।
প্রসংগত বলছি, সৈয়দ সাহেব আর আমি একই স্কুলে পড়াশুনা করেছি। পার্থক্য- উনি আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে, আর আমি উনার প্রায় ৭৫ বছর পরে। তবু এ আমার একান্ত প্রিয় এক গর্ব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।