রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র
শিরোনাম দেখে চমকে ওঠার কারণ নেই।
কেননা, এ ধরণের শিরোনাম আমরা দেখে চলেছি প্রতিনিয়ত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষক নামক ঈশ্বরদের তান্ডব অব্যহত রয়েছে।
অবশ্যই শিক্ষকরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান। ধর্মগ্রন্থ থেকে শুরু করে সমাজ তাদের অধিষ্ঠিত করেছে সর্বোচ্চ শিখরে।
শিক্ষা ব্যতীত জীবন অন্ধকার। শিক্ষক ব্যতীত সমাজ অন্ধকার।
তবে দুঃখের বিষয়, কিছু শিক্ষক তাদের 'শিক্ষা ক্ষমতা'র অপব্যবহার করে ছাত্রদের (ছাত্র বলতে পুং-স্ত্রী উভয়ই, জেন্ডার বৈষম্যে বিশ্বাস করি না) বিভ্রান্ত করছেন। এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী আমি, শিক্ষকদের কারণেই কিছু ছাত্র অন্ধকারে গিয়েছে, নির্যাতন আর অপমানে, ভয় কিংবা লজ্জায়।
আমার জীবনে বেশ কয়েকবার এই রকম ঘটনা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে।
আমি ছাত্র, শিক্ষকদের অবশ্যই সম্মান করবো। কিন্তু শিক্ষকরা ঈশ্বর হতে পারেন না, তারা ভুল করেন। তাদের ভুল ধরিয়ে দেয়াটা পাপের খাতায় নাম ওঠানোর মতো কিছু না।
সাম্প্রতিক ঘটনা বলি। ৩০ অক্টোবর।
কলেজে ত্রৈমাসিক পরীক্ষা চলছে। বিষয় ইংরেজি। আমি একটা ডিজিটাল ভিডিও ছবি নির্মাণে ব্যস্ত থাকায় পড়াশোনা বিশেষ করতে পারি নি। তবে প্রশ্ন দেখে মনে হচ্ছে, পারা যাব। আমার বদঅভ্যাস (!) আছে, পরীক্ষার হলে সাইডটক করি না, এবং খাতার ওপর প্রশ্ন ঢেকে লিখি।
পাশেরজন বেচারার অবস্থা কেরোসিন। কিচ্ছু পারে না। কড়া গার্ড। একজন ইংরেজি টিচার আর অর্থনীতি বিভাগের একজন প্রফেসর গার্ড দিচ্ছেন...
বেকুব ছেলেটা শেষ ১৫ মিনিটে আকস্মিকভাবে আমার প্রশ্ন ধরে টান দিয়ে দেখতে গেলো। প্রফেসর সাহেবের চোখে পড়লো সেটা।
- দেখি তোমার খাতাটা !
বেকুবটা খাতা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
-ঐ বেয়াদব তোমার খাতাটাও দাও।
আমি খাতা দিলাম, দাঁড়ালাম, বললাম - স্যার, আপনি ভুল করছেন, আমি ওরটা দেখিনি ! ও আমার খাতা ধরে... ঐ বেকুব, কী করলি এইটা, আমার আর একটা আনসার করা বাকি আছে, স্যার, প্লিজ একটু বুঝতে চেষ্টা করেন...
- বেয়াদব, বের হয়ে যা হল থেকে, না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো!
আমার কান লাল হয়ে গেছে। গরম। মাথায় কেমন জানি লাগছে।
হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
মহান প্রফেসর তার মতোই মহান একটা কাজ করলেন। 'এই বেয়াদব' বলে খাতার ওপর লিখলেন - "বেয়াদবি করার জন্য পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হলো। "
জীবনে কখনো এক্সপেলড হই নি... কখনো ভাবিনি এসব... কত কষ্টের!
আমি দাঁড়িয়েই আছি, প্রফেসর এবার ইংরেজি লেকচারারকে বললেন ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে...
লেকচারার তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলো।
আমি কমার্সের সেই অধ্যাপককে চিনি না, লেকচারারকে চিনি, তার ক্লাস করেছি, তিনি আমার কথা শুনলেন না...
পরে বায়োলজির কে স্যারকে ঘটনা বললাম।
সেখানে কমার্সের সেই অধ্যাপক এর কয়েকজন শুভাকাঙ্খী ছিলেন। তারা উদ্ভট কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দিলেন। আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলাম।
পরে সেই অধ্যাপক পরীক্ষা শেষে কমন রুমে ঢুকলেন এবং অন্য সব শিক্ষকদের কাছে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে লাগলেন। তিনি মিথ্যাকে সত্য করতে পারেন, আর আমার সত্য কেউ বিশ্বাসই করে না!
একজন স্যার (কমার্স) এসে বললেন, তুমি কী কারো সাথে বেয়াদবি করেছো? (এফবিআই স্টাইলে!)
- না , আমি করিনি।
....স্যার, দেখেন তো এই সেই বদমাশ, যে আপনার সাথে বেয়াদবী করেছে ?
----হ্যাঁ এই সেই বেয়াদপ। চরম বদমাশ।
এরপর একের পর এক তীরবিদ্ধ হতে থাকলাম আমি। শেষে এক ধার্মিক ( সবসময় টুপি থাকে মাথায়, কলেজ গভর্নিং বডির মেম্বার) মা বাবা তুলে কথা বলায় বললাম, ঠিক আছে, আমি বেয়াদব.আপনারা ভালো...
বলেই আমি পা বাড়ালাম।
পেছন থেকে শব্দ আসতে লাগলো - দেখছেন! দেখছেন ১ কী বেয়াদব...
ঘটনা এখানেই শেষ না।
কলেজ থেকে আমাকে বের করে দেয়া হবে-এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
উদ্ধত আচরণের জন্য বহিষ্কার!
হায়রে দেশ...
পরে মা গিয়ে ঘটনা সামাল দিলেন। তারা মাকে অপমান করার চেষ্টা করলো - কেমন সন্তান আপনার ! মা অসহ্য হয়ে বললেন, ঠিক আছে টিসি দিয়ে দেন। আমার ছেলেকে এই কলেজে পড়াব না। সেই ধার্মিক স্যার অত্যধিক কথা বলছিলেন।
মা তাকে বললেন, আপনি খুব একসেস কথা বলছেন। চুপ থাকেন...
ঘটনা মিনিমাইজ হলো। আমি পা ধরে (সালাম!) ক্ষমা চাইলাম শিক্ষকদের কাছে। তারা আমার অপরাধের জন্য ক্ষমা করলেন।
আমার দুইটা পরীক্ষা দেয়া হলো না।
বাংলা আর ইংরেজি।
গতকাল রেজাল্ট দিয়েছে। আমার রেজাল্ট লিস্টে আসে নি। ফেল!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।